ঢাকা, রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২০ মিনিট আগে
শিরোনাম

৬০ যুবক-যুবতীর সংসার গড়ে দিলেন মুফতি আজিজুল

  সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০২১, ১৬:০২

৬০ যুবক-যুবতীর সংসার গড়ে দিলেন মুফতি আজিজুল
৬০ যুবক-যুবতীর সংসার গড়ে দিলেন মুফতি আজিজুল

কারো বাবা নেই। আবার কারোও মা নেই। সংসারে বাবা-মা না থাকায় অভাব অনটনের মধ্যে বড় হয়েছেন তারা। নেই বিয়ে করা বা দেয়ার সামর্থ্যও। কেউ বা বিয়ের বয়সও পার হয়ে যাচ্ছে কিন্তু বিয়ে দিতে এবং করাতে পারছেন না। এরকম ৬০ জন যুবক-যুবতীর গণবিয়ের ব্যবস্থা করেন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের মুসলিমপুর গ্রামের হযরত আবু বক্কর সিদ্দিক (রা.) মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মুফতি আজিজুল হক।

কোনো ধরণের যৌতুক ছাড়াই তিনি নিজ খরচে তাদের বিয়ের সকল ব্যবস্থা করেন। দিয়েছেন একটি পরিবারের সকল আসবাবপত্রও। কথাগুলো বলেছিলাম বিয়ে করতে আসা অধিকাংশ বর এবং কনের।

সুনামগঞ্জ পৌরশহরের নবীনগর এলাকার বাসিন্দা মুহিবুর রহমান (২৬)। পেশায় একজন রিকশাচালক। পিতা অসুস্থ থাকায় রিকশা চালিয়ে ভাই-বোনের লেখাপড়াসহ পুরো সংসারের হাল ধরে রেখেছেন তিনি। এক বেলা খেতে পারলে আরেক বেলা উপবাস থাকতে হতো তাদের। হঠাৎ তার পরিবার সিদ্ধান্ত নেয় মুহিবুরকে বিয়ে করাবে কিন্তু বিয়ে করানোর তাদের সামর্থ্য নেই। তার পরিবার যোগাযোগ শুরু করলো সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার হযরত আবু বক্কর সিদ্দিক (রা.) মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মুফতি আজিজুল হকের সাথে।

৬০ যুবক-যুবতীর সংসার গড়ে দিলেন মুফতি আজিজুল

তিনি তার পরিবারকে জানালেন, যাদের বিয়ের সামর্থ্য নেই তাদেরকে আমরা বিয়ের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। একটি পরিবারের সকল ধরণের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিয়ে দিবো। তবে বিনা যৌতুকে বিয়ে নিতে হবে। এ কথায় তার পরিবার রাজি হয়ে যায়।

শুধু মুহিবুর রহমান নয় এরকম একই ইউনিয়নের আমপাড়া গ্রামের কবির হোসেন, মোহনপুর ইউনিয়নের ভৈষবেড় গ্রামের বাসিন্দা জাবেদ আলীসহ ৬০ জন যুবক-যুবতীর বিয়ের ব্যবস্থা করেন মুফতি আজিজুল হক। শনিবার বিকালে ২৪ যুবক-যুবতীর বিয়ে হয়। পর্যায়ক্রমে বাকিদের বিয়ে হবে।

এতে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান শাহরিয়ার, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবুল হোসেন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক এনামুল হক চৌধুরী রুমেনসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে তাদের বিয়ে হয়। এরকম গণবিয়ের আয়োজন করায় এলাকার সুশীল সমাজে প্রশংসায় বাসছেন মুফতি আজিজুল হক। তিনি এরকম যৌতুক মুক্ত এবং নিজ খরচে তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করায় খুশি বরেরা।

৬০ যুবক-যুবতীর সংসার গড়ে দিলেন মুফতি আজিজুল

স্থানীয় মুসলিমপুর গ্রামের বাসিন্দারা জানালেন, সমাজের ধনী লোকেরা এগিয়ে আসলে আমাদের দরিদ্রতা থাকবে না। দেখা গেছে অভাব অনটনের জন্য ছেলে-মেয়েদেরকে বিয়ে দিতে পারছেন না। হুজুরের (মুফতি আজিজুল হক) কাছে অনেকে আবেদন দেয়ার পর তিনি বিয়ের ব্যবস্থা করেন।

সৈয়দপুর গ্রামের বর আব্দুস সাত্তার (৩০) বলেন, পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। ছোট বেলায় থেকে সুনামগঞ্জ শহরে রিকশাচালাই সংসারের খরচ বহন করি। বিয়ে করার সাহস কখনো ছিলো না। আর্থিক অবস্থা খারাপ আমার মতো আরেক মেয়ের সাথে পরিবারের বিয়ের কথা হয়। পরে উভয় পরিবারে মুফতি আজিজুল হক হুজুরের কাছে গিয়ে বিষয়টি বললে তিনি আমাদের বিয়ের ব্যবস্থা থেকে শুরু করে আসবাবপত্র পর্যন্ত দিয়েছেন। শুধু সে নয় তার মতো আরো ২৪ জন যুবক-যুবতীর বিয়ের ব্যবস্থা করেছেন।

স্থানীয় হযরত আবু বক্কর সিদ্দিক (রা.) মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মুফতি আজিজুল হক বলেন, এই এলাকার মানুষ দারিদ্রসীমার নিছে। তারা নিজেরাও ভালো করে খেতে পারে না। অনেকে আমার কাছে এসে তাদের ছেলে-মেয়ে বিয়ে দিতে পারছে না। তাদের কর্মসংস্থানও নেই। প্রায় একবছর ধরে আবেদন সংগ্রহ করে তাদের কথা চিন্তা করে লন্ডন, আমরিকায় বসবাসরত মুফতি আজিজুল হকের বন্ধুরা এবং লন্ডনের মাওলানা ইব্রাহিম পাঠোয়ারীকে বিষয়টি জানালে তারা এই দম্পতির বিয়ের ব্যবস্থা করেন। তাদের পরিবার চলতে যা যা প্রয়োজন তা দিয়েছেন। এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন এলাকার ৬০ জন দিনমজুর এবং রিকশা চালককে বিনামূল্যে রিকশা ও ৬০ জন বেকার মহিলাদেরকে সেলাই মেশিন বিতরণ করেন।

সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবুল হোসেন বলেন, অনেক গরীব মানুষের ছেলে মেয়েদেরকে টাকার অভাবে বিয়ে দিতে পারেন না। আমরা বিভিন্ন সময় সদর উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সহযোগিতার চেষ্টা করে থাকি কিন্তু সেটি পর্যাপ্ত না তাই প্রবাসীসহ বিত্তশালীদের এরকম কর্মকাণ্ডে এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি। তবে গণবিবাহটি একটি ভালো উদ্যোগ মুফতি আজিজুল হকের।

এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান শাহরিয়ার বলেন, যৌতুক রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ। বিনা যৌতুকে বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে এবং তাদের মধ্যে সংসার শুরু করতে যা যা লাগে তা দেয়া হয়েছে। এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। আমি মনে করি এটা পরবর্তীতে আরো ব্যাপকভাবে করা হবে। সেজন্য আমাদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা থাকবে। পাশাপাশি যারা সেলাই মেশিন পেয়েছেন তাদেরকে আমরা সেলাই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। যাতে তারা স্বাবলম্বী হতে পারেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত