ঢাকা, রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

লকডাউন যেন লুকোচুরি খেলা!

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ০৬ এপ্রিল ২০২১, ০৮:৩১  
আপডেট :
 ০৬ এপ্রিল ২০২১, ০৮:৫১

লকডাউন যেন লুকোচুরি খেলা!
সংগৃহীত ছবি

করোনা মহামারি সামালাতে আবারও লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার৷ করোনার ঊর্ধ্বগতিতে টানা এক সপ্তাহ লকডাউন শুরু হয়েছে। জরুরি সেবা ছাড়া বাকি সবকিছুই বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। কিন্তু বরিশালে চলছে লুকোচুরির লকডাউন। যেন এই লকডাউনের মাথা ব্যথা শুধুই সরকারের। তাইতো পুলিশ বা ম্যাজিস্ট্রেট আসলেই দোকানের সাটার ডাউন হচ্ছে। আবার চলে গেলেই খুলে যাচ্ছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো। লকডাউন নয়, এ তো যেন লুকোচুরি খেলা। সামনে দিয়ে বন্ধ সবই, পিছন দিয়ে খোলা। লকডাউনের কারণে সোমবার সকাল থেকে চলাচল করেনি কোনো লঞ্চ বা বাস সার্ভিস। তারপরও থেমে নেই যাত্রা। চলছে থ্রি-হুইলার, তাও কয়েকগুণ বেশি ভাড়ায়। যদিও মাঠে রয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালতসহ র‌্যাব পুলিশের টহল। এ যেন লকডাউন নিয়ে লুকোচুরির খেলা।

লকডাউন চলছে তবু বরিশাল নগরীর চকবাজার, সদর রোড, পোর্ট রোড, বাজার রোড, গির্জা মহল্লা, কাটপট্টি এলাকায় যানজট লক্ষ্য করা গেছে। যানজটের সঙ্গে ছিলো মানুষের ভিড়।

নগরীর মুন্সি গ্যারেজ এলাকার আল আমিন বলেন, সবাই তো কাজ করে খায়। লকডাউন কয়জনে মানে? লকডাউনে গরীবদের কষ্ট ছাড়া আর কিছু না।

পাশেই দাঁড়ানো ছিলেন ফরিদ নামে আর এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, এটা কেমন লকডাউন? সব অফিস আদালত খোলা, শুধু শুধু বাসে আর লঞ্চে লকডাউন। রাস্তায় পুলিশ না থাকলে কেউই লকডাউন মানতো না।

নগরীর চকবাজার ও বাজার রোডে দেখা গেছে, দোকানগুলোর অর্ধেক সাটার খোলা। সেখানেই চলে ব্যবসা। কিন্তু পুলিশ বা ম্যাজিস্ট্রেট আসলেই বন্ধ করে ফেলা হয় সাটার। কোনো কোনো দোকানের মধ্যে ক্রেতা রেখেই বাহির থেকে বন্ধ রাখার ঘটনা পাওয়া গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বন্ধ থাকা প্রতিটি দোকানের সামনে একজন করে লোক দাড়িয়ে আছেন। পথচারীর ইশারা বুঝতে পারলে সাটার অল্প তুলে তাকে দোকানের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। বন্ধ প্রতিটি দোকানের মধ্যে একাধিক ক্রেতা কেনাকাটা করছেন।

এদিকে সোমবার থেকে সড়কে সব ধরনের গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকার নির্দেশনা থাকলেও সেই বিধি নিষেধ উপেক্ষা করা হয়েছে বরিশালে। নগরীতে স্বাভাবিক নিয়মে চলাচল করছে হলুদ অটো, আলফা মাহিন্দ্রা, সিএনজি, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। ঢাকা থেকে আসা যাত্রীদের নিয়ে ছুটছেন দূরপাল্লার গন্তব্যে। তাও আবার অতিরিক্ত ভাড়ায়।

বরিশাল ইজিবাইক শ্রমিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক লতিফ সিকদার লেদু জানান, ইজিবাইক বন্ধের জন্য আমরা স্থানীয় প্রশাসন থেকে এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা পাইনি। যে কারণে ছোট পরিবহনগুলো চলাচল করছে। তবে গাড়ি চালকদের বলা আছে, ওভারলোড করে যাত্রী বহন করা যাবে না। ট্রাফিক বিভাগ থেকে যখনই চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হবে তখনই সড়ক ছেড়ে যাবে ইজিবাইক।

রুপাতলী বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওছার হোসেন শিপন বলেন, নিষেধাজ্ঞা অনুসারে আমরা বাস চলাচল বন্ধ রেখেছি। চেষ্টা করছি এই সময়ে শ্রমিকদের সহায়তা করার জন্য।

বরিশাল মেট্রোপলিটন (ট্রাফিক) পুলিশের উপ-কমিশনার জাকির হোসেন মজুমদার বলেন, সরকারি নির্দেশনায় আন্তঃজেলা পরিবহন বন্ধ রাখার বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখতে নগরীর মধ্যে ক্ষুদ্র পরিবহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে উল্লেখ নেই।

অপরদিকে সরকারি নির্দেশ মেনে লকডাউনের কারণে সোমবার বরিশাল নদী বন্দর থেকে কোনো লঞ্চ গন্তব্যে ছেড়ে যায়নি। ঢাকা থেকে বরিশাল পৌঁছানো অনেক যাত্রী যাদের বাড়ি হিজলা, মুলাদি ও নদীবেষ্টিত মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় তারা বিপাকে পড়েন। স্থানীয়ও রুটের লঞ্চগুলো নদী বন্দরে নোঙর করা ছিল।

লঞ্চ স্টাফরা জানান, লঞ্চ পাহারা দেয়ার জন্য কিছু লোক লঞ্চে আছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এবং সরকার আদেশ দিলে তখনই আবার লঞ্চ চালু হবে।

এদিকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে ও লকডাউন বাস্তবায়নে মাঠে ছিলো বরিশাল জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আতাউর রাব্বী ও নাজমুল হুদা জানান, মাস্ক না পড়ার অপরাধে ও স্বাস্থ্য বিধি না মানায় তারা ৩১ জনকে জরিমানা করেছেন। নগরীর সবগুলো প্রবেশ পয়েন্টে চেক পয়েন্ট বসানো হয়েছে যাতে যৌক্তিক প্রয়োজন ছাড়া কেউ নগরীতে প্রবেশ করতে না পারেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত