ঢাকা, রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

যে কারণে প্রাথমিক শিক্ষিকাকে খুন করে গৃহকর্মীর আত্মহত্যা

  সিলেট প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২০ জুন ২০২১, ২০:৩০

যে কারণে প্রাথমিক শিক্ষিকাকে খুন করে গৃহকর্মীর আত্মহত্যা
ছবি- প্রতিনিধি

সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার সোয়াইরগাঁওয়ে নিজ ঘর থেকে স্কুল শিক্ষিকা ও পাশেই গৃহকর্মীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা যেমন হৃদয় বিদারক তেমনি এখন এলাকায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। কেনই বা এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটলো তা নিয়ে জনমনে কৌতুহলের শেষ নেই।

তবে প্রাথমিকভাবে পুলিশের ধারণা, কোন ক্ষোভ থেকে গৃহকর্তী স্কুল শিক্ষিকাকে বটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে নিজে গলায় গামছা পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে গৃহকর্মী গৌরাঙ্গ।

শনিবার রাত ১২টার দিকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয় বলে জানান ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্যামল বণিক।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, স্কুল শিক্ষিকা তপতী রানী দে (৫৫) এর স্বামী বিনয় ভুষণ দে ও দুই ছেলেমেয়ে চিকিৎসক। স্বামী ও ছেলের সাথে তিনি সোয়ারগাঁও গ্রামের বাড়িতে থাকেন। শনিবার বিকেলে স্বামী ও ছেলে প্রাইভেট প্র্যাকটিসে গিয়েছিলেন। এসময় বাসায় কেবল তপতি ও গৌরাঙ্গ ছিলেন। আর সন্ধ্যার পর কোন একসময় এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।

স্কুল শিক্ষিকার ছেলে চিকিৎসক তন্ময় দে বিপ্লব বলেন, প্রতিদিনের মতোই চেম্বার শেষে শনিবার রাতে তিনি বাড়ি ফেরেন। কিন্তু ঘটনার দিন বাড়ির প্রধান ফটক খুলে দিতে গৃহকর্মী গৌরাঙ্গ এগিয়ে আসেনি। নিজে গেট খুলে বাড়ির ভেতরে আসেন। কিন্তু ঘরের বাইরে থেকে অনেক ডাকাডাকির পরও সাড়া দিচ্ছিলেন না ৬ বছর থেকে বাড়িতে থাকা গৃহকর্মী গৌরাঙ্গ ও মা তপতী রানী দে।

কারো সাড়া না পেয়ে একপর্যায়ে অগত্যা তিনি স্থানীয় স্বজন ও প্রতিবেশিদের খবর দেন। কল দেন বাবাকেও। এর মাঝে বাড়িতে গ্রামের লোকজনও জড়ো হয়। পরে পুলিশ এসে বাড়ির বাথরুমের জানালার গ্রিল কেটে ভেতরে প্রবেশের পর দেখতে পায় তপতী রানীর রক্তাক্ত মরদেহ। আর গৃহকর্মী গৌরাঙ্গ বৈদ্যের মরদেহ পাশেই বিছানার উপর ছাদের সাথে ঝুলে ছিলো।

ওসি শ্যামল বণিক বলেন, লাশগুলো উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছি। ঘটনাস্থল থেকে একটি রক্তাক্ত বটি আলামত হিসেবে জব্দ করেছে পুলিশ।

তিনি আরো বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, গৃহকর্মী ওই স্কুল শিক্ষিকাকে হত্যা করে সে নিজে আত্মহত্যা করেছে। তবে তদন্ত চলছে।

পুলিশের এমন সহজ ধারণার পরও প্রশ্ন রয়েছে বাইরেই কেউ এই হত্যাকাণ্ড ঘটালো কি না। তবে পুলিশ সূত্র ও সরেজমিনে দেখা যায়, পাকা এই বাড়িটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই শক্ত। ভেতর থেকে সকল দরজা ও ফটক তালা দেওয়াই ছিলো। বাইরের কেউ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে আবার ভেতর থেকে দরজা-জানালা লাগিয়ে বের হওয়ার কোন সুযোগ নেই।

এ বিষয়ে সিলেট জেলা পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন আহমদ বলেন, ঘটনার রহস্য উদঘাটনে পুলিশের বেশ কয়েকটি টিম কাজ করছে। তবে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে এটি ক্ষোভ থেকে হয়ে থাকতে পারে। কারণ ওই গৃহকর্মী প্রায় ৬ বছর থেকে তাদের ঘরে কাজ করছিলো। সেক্ষেত্রে নানা সময় ছোটখাটো সমস্যা থাকতই। তাই হয়তো স্কুল শিক্ষিকার উপর তার কোনো ক্ষোভ ছিলো। তাই হত্যার পর আত্ম উপলব্ধি থেকে সে নিজেও ফাঁস লেগে থাকতে পারে।

তবে আসল রহস্য উদঘাটনে পুলিশ কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

স্কুল শিক্ষিকার ছেলে চিকিৎসক ডা. তন্ময় দে বিপ্লব জানান, গৌরাঙ্গ ইদানিং বেশ উগ্র ও একঘেয়ে হয়ে গিয়েছিল। অনেক সময় কারো কথা শুনতো না। কেমন রুক্ষ মেজাজের হয়ে উঠেছিল সে।

এদিকে ঘটনাস্থল থেকে একটি রক্তাক্ত বটি ও ছুরি আলামত হিসেবে জব্দ করেছে পুলিশ। এছাড়া পুলিশ মরদেহগুলো উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ওসমানীনগরে দয়ামীর ইউনিয়নের সোয়াইরগাওর এলাকার বাসিন্দা তপতী রানী দে সোয়াইরগাঁও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা এবং ডা. বিজয় ভুষন দের স্ত্রী।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওয়াইএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত