ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২২ মিনিট আগে
শিরোনাম

গাইবান্ধায় ভুয়া এনজিওর ফাঁদে নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ

  গাইবান্ধা প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৮ নভেম্বর ২০২১, ০৩:১০

গাইবান্ধায় ভুয়া এনজিওর ফাঁদে নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ

গাইবান্ধায় সম্প্রতি কিছু ভুয়া এনজিও ফাঁদ পেতেছে চাকরি কিংবা লোন দেওয়ার। আর সেই পাতানো ফাঁদে পা দিয়েই প্রতিদিন নিঃস্ব হচ্ছে শতশত পরিবার। জেলা, উপজেলা ও শহরের বুকে চটকদার সাইনবোর্ড লাগিয়ে প্রশাসনের নাকের ডগায় দাঁড়িয়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এইসব ভুয়া এনজিওগুলো। এসব ভুয়া এনজিও ফাঁদ পেতে অসহায় মানুষের কাছে থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিলেও এখন পর্যন্ত প্রশাসনকে দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।

কখনো চোখ ধাঁধানো চাকরির অফার, কখনো বা মাত্র ৩ হাজার টাকা দিয়ে ফরম পূরণ করলেই মিলবে ১ লাখ টাকা গরুর লোন! শুধু তাই নয়, এই প্রতারক চক্র করোনায় নগদ অর্থ প্রণোদনা এবং মাতৃত্বকালীন ভাতার প্রলোভন দেখিয়েও হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।

গাইবান্ধা শহরের বানিয়ারজান এলাকায় এমনই এক প্রতারক এনজিও 'বাদিয়াখালি দুস্থ মাতা মহিলা উন্নয়ন সমিতি'। যার স্বত্বাধিকার মো. আলমগীর হোসেন। বিরাট বাড়ি ভাড়া করে, কর্মী নিয়োগ করে রমরমা ব্যবসা করছিলেন এই প্রতারক। কিন্তু রাতারাতি অফিসের আসবাবপত্র নিয়ে পালানোর সময় ওই প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে হাতেনাতে আটক করে এলাকাবাসী। সেসময় গরুর লোন ও অন্যান্য সুবিধা দেওয়ার জন্য শতশত ছবি সম্বলিত ফরম পাওয়া যায় ওই ভাড়া করা বাড়ির একটি কক্ষের মেঝেতে।

এসময় শতশত মহিলা টাকা ফেরতের দাবিতে ওই তিন ব্যক্তিকে নিজেদের জিম্মায় রেখে দেন। শেষ পর্যন্ত এনজিওটির মালিক আলমগীর হোসেন না আসায় স্থানীয় কমিশনার স্বপনকে খবর দেয় ভুক্তভোগীরা। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তিনি থানায় খবর দেন। পরে তিন প্রতারককে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

এদিকে 'সরণা বাংলাদেশ' নামে আরেকটি ভুয়া প্রতিষ্ঠান কোন সাইনবোর্ড ছাড়াই শুধু বাড়ি ভাড়া নিয়ে স্বাস্থ্য কর্মী নিয়োগ দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সরেজমিনে ওই প্রতিষ্ঠানের রিয়াজুল নামে এক কর্মকর্তার নিকট নিয়োগের সত্যতা জানতে চাওয়া হয়। এসময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্মারক দেখতে চাইলে তিনি তা দেখাতে পারেননি। তবে তার কাছে সিভিল সার্জনের জাল স্বাক্ষরিত একটি অনুমতি পত্র দেখান।

এরপর প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৮ থেকে ১০ হাজার টাকায় স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ, তাদের ট্রেনিংয়ের জন্য কয়েক দফায় আরও ৫ হাজার টাকা নিয়ে মাঠে কাজ করতে পাঠানো হয়। মাঠপর্যায়ে তারা গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত মনগড়া কিছু কথা বলে হাতে ধরিয়ে দেয়া হয় তিনমাস মেয়াদি স্বাস্থ্য কার্ড। প্রতিটি স্বাস্থ্য কার্ডের বিনিময়ে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে মোটা অংকের টাকা। শুধু তাই নয়, সিভিল সার্জন এর স্বাক্ষর জালিয়াতি করে দেদারসে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এইসব প্রতারক চক্র।

অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারই সমাধান নয়, যে কোনো মূল্যে বিনিয়োগের টাকা উদ্ধারের পরামর্শ দিয়েছেন গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু লাইচ মো. ইলিয়াস জিকু। পুলিশের এই উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, 'নিয়মিত এইসব ভুয়া এনজিও তদারকি করার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান গুলোতে নিযুক্ত কর্মীদের গ্রেফতার করে গরীব, অসহায় মানুষের টাকা উদ্ধার করতে হবে'। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে নিবন্ধন দিতে আরও বেশি সতর্ক হওয়ার আহবান জানান তিনি।

এ ব্যাপারে গাইবান্ধা জেলা সিভিল সার্জন মো. আখতারুজ্জামান বলেন, স্বাস্থ্য কর্মী নিয়োগ দেওয়ার জন্য আমার কাছে আবেদন নিয়ে এসেছিল কথিত এনজিও 'সরণা বাংলাদেশ'। আমি তাদের অফিস থেকে বের করে দিয়েছি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমতি কিংবা প্রকল্প স্মারক না থাকায় তাদের অনুমতি দেওয়া হয়নি। অতিসত্বর তাদের পুলিশের হাতে সোপর্দ করার পরামর্শ দেন তিনি।

চাকরি সংকটে থাকা শতশত বেকার যুবক যুবতী এইসব ভুয়া প্রতিষ্ঠানে টাকা বিনিয়োগ করে চাকরি নিচ্ছে। আর তাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বিভিন্ন প্রলোভনে বিনিয়োগ করছে হাজার হাজার গ্রাহক। এ ধরনের প্রতারণায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এখন হতাশা আর ক্ষোভ বিরাজ করছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাঝে। এভাবে চলতে থাকলে দুঃস্থিত ব্যক্তি আরও বেশি দুঃস্থ হয়ে যাবে এবং দ্রুত পদক্ষেপ নিতে না পারলে, সেটা সমাজ ও দেশের জন্য বিরাট ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এইসব ভুয়া এনজিও গুলোর বিরুদ্ধে প্রশাসনের কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরী বলে মনে করছেন গাইবান্ধার সচেতন মহল।

বাংলাদেশ জার্নাল/এএম

  • সর্বশেষ
  • পঠিত