ঢাকা, রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

পি কে হালদারকে দেশে ফেরাতে তিন মাস লাগতে পারে

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ১৫ মে ২০২২, ১৬:৪৯  
আপডেট :
 ১৫ মে ২০২২, ১৮:১৯

পি কে হালদারকে দেশে ফেরাতে তিন মাস লাগতে পারে

হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে ভারতে পালানো প্রশান্ত কুমার হালদারকে (পি কে হালদার) বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তির মাধ্যমে আইনি পথেই দেশে ফেরানোর আশা করছে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা। কিন্তু তাকে দেশে ফেরাবার সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হলে অন্তত তিনমাসের মত সময় লাগতে পারে বলে ধারণা করছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবীরা।

এ সময় অবৈধভাবে নাগরিকত্ব নেয়ার অভিযোগে ভারতে তার বিরুদ্ধে বিচার কার্য শুরু হলে সেটি আরও সময় বাড়াতে পারে বলেও জানান তারা।

এর আগে বাংলাদেশের আর্থিক খাত থেকে হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠার পর থেকে কয়েক বছর ধরে পালিয়ে থাকা পি কে হালদারকে শনিবার গ্রেপ্তার করেছে ভারতের আর্থিক গোয়েন্দা দপ্তর। এসময় পি কে হালদারসহ ছয়জনকে আটক করা হয়, যার মধ্যে তার স্ত্রীও রয়েছেন। এ বিষয়ে কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশের দেয়া তথ্য মতেই পি কে হালদারকে গ্রেপ্তার করেতে সক্ষম হয়েছে ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এদিকে ভারত থেকে পি কে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার কথা জানিয়েছেন প্রধান আইন কর্মকর্তা বা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন এবং ফিনান্সিয়্যাল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, বাংলাদেশের সংস্থাগুলো কিন্তু তৎপর, সজাগ আছে। এজেন্সিগুলো কাজ করছে, আপনারা দেখবেন অচিরেই তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের সম্মুখীন করা হবে।

তিনি আরও বলেন, পি কে হালদারের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি অবৈধভাবে ভারতের পাসপোর্ট ও ভোটার আইডি কার্ড নিয়েছেন। ভারতের আইন অনুযায়ী এটি একটি গুরুতর অপরাধ। এই অপরাধেও তার বিরুদ্ধে ভারতে একটি মামলা দায়েরর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে।

ভারতে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হলে হলে বাংলাদেশ কোন পথে এগোবে এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ভারতের আইনে জাল-জালিয়াতির কারণে তার বিচার হবে। সে মিথ্যা নাগরিকত্ব সার্টিফিকেট গ্রহণ করেছে, সেটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। কিন্তু আমাদের এখানে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে আর্থিক কেলেঙ্কারির মামলাগুলো বিচারাধীন রয়ে গেছে। সেই মামলায় বিচারের জন্য তাকে আনতে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আশা করি দ্রুততার সঙ্গে তাকে নিয়ে আসা সম্ভব হবে।

তিনি আরও বলেন, শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটির পাশাপাশি আজ রোববার বাংলাদেশে বৌদ্ধ পূর্ণিমার সরকারি ছুটি থাকায় দপ্তরগুলো বন্ধ রয়েছে। ফলে পি কে হালদার গ্রেপ্তার হলেও সেই বিষয়ে এখনও বাংলাদেশে কোন কর্মকাণ্ড শুরু হয়নি। আশাকরি আগামীকাল হয়তো এই বিষয়ে আলাপ আলোচনা শুরু হবে।

পি কে হালদারকে যেভাবে ভারতে থেকে বাংলাদেশে ফেরানো হবে

ভারতের সঙ্গে ২০১৩ সালে একটি বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি করেছিলো বাংলাদেশ। সেই চুক্তির আওতায় দুই দেশ বন্দি বিনিময় করে থাকে।

এর আগে এই চুক্তি স্বাক্ষরের পরেই বাংলাদেশে আটক ভারতের উলফা নেতা অনুপ চেটিয়াকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিলো। এছাড়া নারায়ণগঞ্জে সাত খুন মামলায় আলোচিত আসামী নূর হোসেনকেও এই আইনে ফিরে আনা হয়।

এই চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ বা ভারতের কোন অপরাধী আরেক দেশে লুকিয়ে থাকলে অথবা সাজাপ্রাপ্ত অবস্থায় কারাগারে থাকলে তাকে নিজ দেশে হস্তান্তর করা যাবে। তবে কারও বিরুদ্ধে সেই দেশে কোন মামলা বিচারাধীন থাকলে তাকে হস্তান্তর করার কোন বিধান এই আইনে রাখা হয়নি।

এ বিষয়ে বিবিসি বাংলার কলকাতা সংবাদদাতা অমিতাভ ভট্টশালী জানিয়েছেন, প্রশান্ত কুমার হালদারকে (পি কে হালদার) গ্রেপ্তারের পর অশোক নগরের স্থানীয় আদালতে হাজির করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। সেখানে তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে থাকা মামলার বিবরণসহ ভারতে অর্থ পাচারের অভিযোগও আনা হয়েছে।

তিনি আরও জানিয়েছেন, মঙ্গলবার মামলাটি কলকাতার অর্থ পাচার আদালতে মামলা স্থানান্তর হবে। এরপর সেখানেই পি কে হালদারে বিচার কার্যক্রম চলবে। সেখানে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর আবেদন করা হতে পারে। আদালত তা গ্রহণ করলে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তাকে বাংলাদেশে পাঠানো হবে, যেভাবে এর আগে নূর হোসেনসহ বেশ কয়েকজনকে পাঠানো হয়েছিলো।

প্রসঙ্গত, পি কে হালদার ঢাকার একটি ব্যাংক ও অপর একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। সে সময় তার বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। তখন পি কে হালদারের পরিবার এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মোট ৩৪টি মামলা করেছিলো। এরপর থেকেই দীর্ঘদিন ধরে তিনি পলাতক ছিলেন। এছাড়া পি কে হালদারের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের আটই জানুয়ারি রেড নোটিশ জারি করেছিল ইন্টারপোল। সূত্র: বিবিসি বাংলা

বাংলাদেশ জার্নাল/কেএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত