ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

লালমনিরহাটে গ্রামীণ অকাঠামো উন্নয়নের নামে হরিলুট

  লালমনিরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৭ জুলাই ২০২২, ১২:৩১  
আপডেট :
 ০৭ জুলাই ২০২২, ১২:৪৯

লালমনিরহাটে গ্রামীণ অকাঠামো উন্নয়নের নামে হরিলুট

লালমনিরহাট সদর উপজেলায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন কাজে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩৬৯টি প্রকল্পে কাগজ কলমে উন্নয়নমুলক ব্যয় দেখানো হলেও বাস্তবে অধিকাংশ প্রকল্পেরই কোনো কাজ হয়নি।

৩১০টি প্রকল্পে ৪ কোটি ৪১ লাখ ৭৭ হাজার ৬২০ টাকা, ৩৬টি প্রকল্পে ২৯২ মেট্রিক টন চাল ও ২৩টি প্রকল্পে ২৩৬ মেট্রিক টন গমে ব্যয় দেখানো হয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচির উন্নয়নে।

স্থানীয়রা বলছেন, ওই প্রকল্প গুলোর সঠিক বাস্তবায়ন হলে প্রায় ১ হাজার ৭০০ শ্রমিক প্রতিদিন ৪০০ টাকা মজুরিতে ৩ মাসের কর্মসংস্থানের সুযোগ পেতেন।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের ফুলগাছ গ্রামের আব্দুর রহমান বলেন, গ্রামের দুটি কাঁচা রাস্তা সংস্কারের জন্য ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। স্থানীয় রফিকুল ইসলাম নামের একজন ওই প্রকল্প কমিটির সভাপতি হন। প্রতিদিন ৪০০ টাকা মজুরিতে ৫৪ জন শ্রমিকের এক মাস কাজ করার কথা ছিল। কিন্তু ১২ জন শ্রমিক মাত্র ৪ দিন কাজ করেই রাস্তা দুটি মেরামত কাজ সম্পন্ন করেন। রাস্তা দুটির টেকসই কোনো মেরামত হয়নি, শুধু রাস্তার ঘাস ফেলে দিয়ে মেরামত কাজ করা হয়েছে।' এভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে সরকারি অর্থ অপচয় করা হচ্ছে।

একই ইউনিয়নের ভাড়ালদহ গ্রামের নজরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ৪ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি কাঁচা রাস্তা ১০ জন শ্রমিক একদিনে সংস্কার করেছেন। আসলে রাস্তাটিতে কোনো মাটি কাটা হয়নি। শুধু রাস্তার ঘাস ফেলে দিয়ে ড্রেসিং করা হয়েছে। এতে আগের ভালো রাস্তাটি এখন চলাচলের অনুপযোগী হয়েছে। আমরা এর প্রতিবাদ করেছিলাম কিন্তু কোনো কাজে আসেনি।

একই অভিযোগ করেন লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের নওদাবাস গ্রামের আক্তার হোসেন। তিনি বলেন, 'গ্রামে একটি কাঁচা সড়ক সংস্কার করার জন্য সরকার ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। শুনেছি কাজ না করেই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে। এভাবে কাজ না করেই প্রকল্পের নামে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করা হচ্ছে। এসব প্রকল্প জনসাধারণের কোনো উপকারে আসছে না।

প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের কাজগুলো এভাবেই হয়ে আসছে।

প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি আরিফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এসব প্রকল্পের ব্যাপারে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ অবগত আছেন। তার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কমিটির সভাপতি জানান, প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দকৃত অর্থের ৬০-৬৫ শতাংশ চলে যায় রাজনৈতিক নেতা ও সরকারি কর্মকর্তার পকেটে। বাকি টাকা দিয়ে প্রকল্পের কাজ সম্ভব হয় না। এ কারণে ২০-৩০ শতাংশ কাজ করা হয়। কোনো কোনো প্রকল্পে কোনো কাজই করা হয় না।

লালমনিরহাট সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, বার বার তাগিদ দেয়ার পরও অনেক প্রকল্পের কাজ শুরু হয়নি। অনেক প্রকল্পে মাত্র ২০-৩০ শতাংশ কাজ করা হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির কারণে এ সমস্যা হয়েছে বলে জানান তিনি। কাজ চলমান প্রক্রিয়ায় রয়েছে।

লালমনিরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা মাসুম বলেন, যদি অনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমি নিজেই প্রকল্প পরিদর্শন করবো। শতভাগ কাজ বুঝে নিবো বলেন তিনি।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওএফ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত