অপহরণের ১৯ দিন পর আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি থেকে ব্যবসায়ী উদ্ধার
ফরিদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৭ আগস্ট ২০২২, ১৯:২৪
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলায় অপহরণের ১৯ দিন পর আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি থেকে ব্যবসায়ী হেলাল খানকে উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ। এ সময় একটি পিস্তল, ৯ রাউন্ড গুলি, একটি মাইক্রোবাসসহ অপহরণকারী ৪ ব্যক্তিকে আটক করা হয়।
রোববার বিকালে ফরিদপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী-বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা সার্কেল) সুমন কর এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে শনিবার দিবাগত রাতে আলফাডাঙ্গা উপজেলার বানা ইউনিয়নের আড়পাড়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফুজ্জামান মিয়া জিল্লুর বাড়ি থেকে অপহৃত ব্যবসায়ী হেলাল খানকে উদ্ধার করে পুলিশ। আওয়ামী লীগ নেতা জিল্লু কয়েকমাস আগে বানা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন।
এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ জুলাই রাতে জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার বুড়াইচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে অপহরণ করা হয় ব্যবসায়ী হেলাল খানকে। তিনি আলফাডাঙ্গা উপজেলার বানা ইউনিয়নের শিরগ্রামের মৃত আলিম খানের ছেলে। শিরগ্রামে তার একটি সুতার মিল রয়েছে।
অপহৃত হেলাল খানের ভাষ্য অনুযায়ী, গত ১৮ জুলাই রাতে তাকে বানা ইউনিয়নের আড়পাড়া গ্রামের আশরাফুজ্জামান মিয়া জিল্লু ফোন দিয়ে ডেকে নেন। বুড়াইচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছামাত্রই তাকে একটি মাইক্রোবাসে উঠানো হয়। জিল্লু তাকে বলে চল ঘুরে আসি।
তিনি বলেন, এরপর গাড়িতে ওঠামাত্রই জোড়পূর্বক হাত-পা বেঁধে ফেলে। বিভিন্ন স্থান ঘুরে আমাকে নিয়ে রাখা হয় একটি ঘরে। আমি জানালা খুলে ওই এলাকার দোকানের সাইনবোর্ড দেখতে পাই খুলনার ঠিাকানা। তখন বুঝতে পারি আমি খুলনায় রয়েছি। পরদিন আমাকে জিল্লু তার বাড়ি আড়পাড়া গ্রামে নিয়ে আসে। সেখানে তার বাড়িতে আমাকে আটকে রাখা হয় এবং আমার ওপর নির্যাতন চালানো হয়।
তিনি আরও জানান, এভাবে বেশ কয়েকদিন চলে যায়। এরই মধ্যে আমার কাছে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে জিল্লুসহ তার সহযোগীরা। আমার কাছ থেকে মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়। বাড়ি থেকে কেউ ফোন দিলে আমার হাতে ফোন দিয়ে লাউড স্পিকারে কথা বলতে হতো। ওরা শিখিয়ে দিতো যে আমি ব্যবসার কাজে বাইরে আছি। এ কারণে পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি বুঝতে পারেনি।
এরই মাঝে তিনটি সাদা স্ট্যাম্পে আমার স্বাক্ষর নেয়া হয়। এছাড়া কয়েকটি চেকের পাতায়ও স্বাক্ষর করিয়ে নেয় জিল্লুসহ তার লোকজন। প্রতিদিনই আমাকে মারপিট করা হতো।
হেলাল খান জানান, আমাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে আমার মিলের একটি মেশিন বিক্রি করে দেয় ওরা। প্রায় ১২ লাখ টাকায় মেশিন বিক্রি করে দেয়। আমাকে দিয়েই বিভিন্ন জায়গায় ফোন দিয়ে মেশিন বিক্রির কথা বলায়। কাস্টমার আসলে ওরা মিলে গিয়ে তাকে মেশিন বুঝিয়ে দিয়ে ওদের একাউন্টে টাকা নিয়ে নেয়।
তিনি আরও জানান, আশরাফুজ্জামান মিয়া জিল্লু এলাকায় বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত। কয়েকমাস আগে বানা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন তিনি। নির্বাচনে পরাজিত হন জিল্লু। আওয়ামী লীগ করায় বিভিন্ন অপকর্ম করলেও ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলে না। সর্বশেষ আমার বড় ভাইয়ের সাথে কথা হয় অপহরণকারী জিল্লুর। আমার বড় ভাই থানা পুলিশের কাছে বিষয়টি জানালে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশ আমাকে জিল্লুর বাড়ি থেকে উদ্ধার করে।
আলফাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় অপহৃত ব্যবসায়ী হেলাল খানকে আড়পাড়া গ্রামের আশরাফুজ্জামান মিয়া জিল্লুর বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় জিল্লু (৪৫), বোয়ালমারী উপজেলার ছুলনা গ্রামের পংকজ রায় (৪৩), চরনারানদিয়া গ্রামের রাকিব শেখ (৩২) ও আড়পাড়া গ্রামের মো. নিশানকে (২৪) আটক করা হয়।
আলফাডাঙ্গা থানার ওসি আরও বলেন, উদ্ধার অভিযানকালে একটি পিস্তল, ৯ রাউন্ড গুলি, একটি মাইক্রোবাস, ২টি মোবাইল ফোন ও সোনালী ব্যাংকে টাকা জমার একটি রশিদ জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে।
বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে