ঢাকা, মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

কুকুরের কামড়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জলাতঙ্ক

  চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৭:৫৫  
আপডেট :
 ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৭:৫৮

কুকুরের কামড়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জলাতঙ্ক
দলবেঁধে রাস্তায় কুকুর। প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রামে প্রতিমাসে প্রায় ৫০০ জন মানুষ কুকুরের কামড়ের শিকার হন। এতে জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হন অনেকে। ৯৫ শতাংশের বেশি জলাতঙ্ক রোগের সংক্রমণ ঘটে কুকুরের কামড়ের ফলে। এছাড়াও শিয়াল, বিড়াল, বেজি, বানর এমনকি গবাদিপশু থেকেও এ রোগ ছড়াতে পারে। তাই যে কোনো পশুর কামড়ের শিকার হলে দেরি না করে হাসপাতালে অথবা চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

চট্টগ্রামে গত ৮ মাসে জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৭৭ জন। এর মধ্যে কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ২২১ জন। অন্যান্য প্রাণীর দ্বারা সংক্রমিত হয়েছেন ৯১৬ জন। এছাড়া গত দুই বছরে এ রোগে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে চলতি বছরেই মারা গেছেন দুজন।

জলাতঙ্ক ভাইরাসজনিত একটি রোগ, যা প্রাণি থেকে মানুষের মধ্যে ছড়ায়। সাধারণত এতে আক্রান্ত রোগী পানি দেখে বা পানির কথা মনে পড়লে প্রচণ্ড আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তাই এই রোগকে বাংলায় জলাতঙ্ক বলা হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার তথ্যমতে, দেশে প্রতিবছর ৪ থেকে ৫ লাখ মানুষ বিভিন্ন পশুর কামড়ের শিকার হন। ২০১০ সালের আগে বাংলাদেশে প্রতিবছর জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়ে এক হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হতো। ২০১০ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার অধীনে জলাতঙ্ক নির্মূল কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে এই রোগে মৃত্যুর সংখ্যা একশর নিচে।

বাংলাদেশে ২০০৯ সালে প্রতিবছর জলাতঙ্ক রোগে মৃত্যু সংখ্যা ছিল ২ হাজারের বেশি। ২০১৯ সালে এ সংখ্যা কমে ২০০ জনে নেমে আসে। ২০২১ সালে জলাতঙ্ক রোগে মৃত্যুর সংখ্যা ৩০ জন। জলাতঙ্ক মূলত এখন আফ্রিকা ও এশিয়া, বিশেষত দক্ষিণ এশিয়ার সমস্যা। জলাতঙ্কে বিশ্বের প্রায় ৯০ ভাগ মৃত্যু এখন শুধু এই দুটি মহাদেশে। শুধু ভারতেই ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষ প্রতিবছর জলাতঙ্ক রোগের শিকার হন। তবে বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ জলাতঙ্ক রোগমুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বকে জলাতঙ্ক রোগমুক্ত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) জেনারেল হাসপাতালে কুকুরে কামড়ের চিকিৎসা দেয়া হয়। চসিক জেনারেল হাসপাতালে চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে ১ হাজার ২৫০ জন রোগী কুকুরে কামড়ের চিকিৎসা নিয়েছেন। সে হিসেবে প্রতিমাসে ১৩৮ জনের বেশি রোগী এই চিকিৎসা নিচ্ছেন। অন্যদিকে সরকারি জেনারেল হাসপাতালে প্রতিমাসে ৩৫০ জনের বেশি কুকুরে কামড়ানো রোগী চিকিৎসা নেন। এছাড়াও হাসপাতালটিতে শেয়াল, বেজি, বিড়াল ও অন্যান্য প্রাণির আক্রমণের শিকার হয়ে প্রতি মাসে ১৫০ জনের বেশি রোগী চিকিৎসা নেন।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের ২৬ তারিখ পর্যন্ত জলাতঙ্ক রোগের জন্য অ্যান্টি র‍্যাবিস ভ্যাকসিন (এআরভি) নিয়েছেন ৬ হাজার ৮৫ জন। এর মধ্যে কুকুর কামড়ানোর জন্য টিকা নিয়েছেন ৩ হাজার ৫৮০ জন এবং অন্যান্য পশুর আক্রমণে টিকা নিয়েছেন ২ হাজার ৫০৫ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ছিলেন সবচেয়ে বেশি। সংখ্যায় তা ৩ হাজার ৬০৩ জন এবং নারী ছিলেন ২ হাজার ৪৮২ জন। ভ্যাকসিন নেয়া মানুষের মধ্যে ১৫ বছরের কম বয়সী রয়েছে ২ হাজার ৩০৩ জন এবং ১৫ বছরের বেশি বয়সী রয়েছে ৩ হাজার ৭৮২ জন।

জেনারেল হাসপাতালের তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে কুকুর কামড়ানোর জন্য টিকা নিয়েছেন ৩৭৫ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৬ জন, মার্চে ৪০৮ জন, এপ্রিলে ৪০১ জন, মে মাসে ৪৩৬ জন, জুনে ৪১৪ জন, জুলাইতে ৩৫০ জন, আগস্টে ৪২৩ জন এবং সেপ্টেম্বরে (২৬ তারিখ পর্যন্ত) ৩৯৭ জন। শুধুমাত্র নয় মাসেই এ হাসপাতালেই টিকা নিয়েছেন ৩ হাজার ৫৮০ জন মানুষ।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিকাল এন্ড ইনফেকসিয়াস ডিজিসেসের (বিআইটিআইডি) তথ্যমতে, চলতি বছর চট্টগ্রামে জলাতঙ্ক রোগী শনাক্ত হয়েছে ২০৭৭ জন। এরমধ্যে কুকুর কামড়ানো রোগীই বেশি। আট মাসে কুকুর কামড়ানোর কারণে জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ২২১ জন। আর অন্যান্য পশুর কামড়ে জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৯১৬ জন। তার মধ্যে জানুয়ারিতে জলাতঙ্ক আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ২৮৬ জন। ফেব্রুয়ারিতে ২৩০ জন, মার্চে ২৭৫ জন, এপ্রিলে ২৪৪ জন, মে’তে ২৪৯ জন, জুনে ২৫৭ জন, জুলাইয়ে ২৫১ জন ও আগস্টে ২৮৫ জন। তবে জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া দুইজনের কেউ ভ্যাকসিন গ্রহণ করেননি। তাদের একজন মারা যায় ফেব্রুয়ারিতে, অন্যজন মার্চে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, কুকুর কামড়ালেই যে জলাতঙ্ক রোগ হয় বিষয়টি এমন নয়। এ ক্ষেত্রে একটু সতর্ক হলেই এই রোগ ঠেকানো সম্ভব। এ লক্ষ্যে নাগরিকদের সচেতন করতে উপজেলা পর্যায়ে আমাদের টিম প্রতিনিয়ত কাজ করছে।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশন থেকে পথ-কুকুরদের টিকাদান কর্মসূচি চলমান আছে। চট্টগ্রামে জলাতঙ্ক রোগী কম। তবে কুকুরে কামড়ানোর টিকা নেয়ার সংখ্যা বেশি। বর্তমানে কুকুরের উপদ্রব বেশি। তাই কুকুরে কামড়ানো রোগীও বাড়ছে। আমাদের হাসপাতালে প্রতিমাসে ৩৫০ জনের বেশি কুকুরে কামড়ানো রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। এছাড়াও অন্যান্য পশুর আক্রমণে প্রতিমাসে ১৫০ জনের বেশি রোগী চিকিৎসা নেন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা বিনামূল্যে অ্যান্টি র‍্যাবিস ভ্যাকসিন (এআরভি) এবং র‍্যাবিস ইমোনোগ্লুবিন (আরআইজি) সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সরবরাহ করে আসছি। কিন্তু আমাদের র‍্যাবিস ইমোনোগ্লুবিন (আরআইজি) টিকার অপ্রতুলতা রয়েছে। যদি এটার অপ্রতুলতা না থাকতো তাহলে আমাদের রোগীরা সর্বোচ্চ সেফটিনেটের ভেতরে থাকতো। এই বিষয়ে সকলকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে।’

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত