ঢাকা, মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

সরকারের জন্য অশনিসংকেত

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২২, ০০:০১

সরকারের জন্য অশনিসংকেত
জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় সঞ্চালন লাইন বিপর্যয়ে ছয় থেকে আট ঘণ্টার জন্য দেশের বিশাল এলাকা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার ঘটনায় পিজিসিবি গঠিত তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে।

বুধবার দুর্গাপূজার ছুটির দিনেও তদন্ত কমিটির সদস্যরা কাজে নেমে সমস্যার মূল খুঁজতে বিভিন্ন এলাকার বিদ্যৎ কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন।

এ ঘটনা স্যাবোটাজ না অন্যকিছু তা খতিয়ে দেখছে তদন্ত কমিটি। তবে বিদ্যুৎ সঞ্চালনকারী সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানী অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন জানিয়েছেন বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের এ ঘটনা ঘটেছিলো ঘোড়াশালে।

বুধবার বিষয়টি নিশ্চিত করে পিজিসিবি'র মহাপরিচালক বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে ঘোড়াশাল থেকে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটে। এ বিপর্যয়ের ফলে দেশজুড়ে মানুষের মাঝে দেখা গেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ কেউ বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে দেখলেও, দীর্ঘসময় দেশের বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ না থাকার বিষয়টিকে অনেকেই সরকারের জন্যে অশনিসংকেত বলে মনে করছেন। এ ধরণের ঘটনা যেন পূণরাবৃত্তি না ঘটে সেদিকেও সরকারকে লক্ষ্য রাখতে হবে বলে মনে করছে মানুষ। এ ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। বিদ্যুৎবিহীন ৮ ঘণ্টায় ভোগান্তির কথা উল্লেখসহ বিভিন্ন ব্যাঙ্গাত্মক পোস্টও দিতে দেখা গেছে।

এরআগে এ ধরনের বড় বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছিল ২০১৭ সালের ৩রা মে। সে সময় আকস্মিক গ্রিড বিপর্যয়ের পর উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমের ৩২টি জেলা কয়েক ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল। কিন্তু সবচেয়ে বড় জাতীয় গ্রিড বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছিল ২০১৪ সালে। সেই বছর পহেলা নভেম্বর বেলা ১১টা ২৭ মিনিট থেকে পরবর্তী ১৪ ঘণ্টা ধরে পুরো বাংলাদেশ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। এতো বড় ধরনের গ্রিড বিপর্যয় এর আগে আর দেশে ঘটেনি।

সেই বিপর্যয়ের সময় ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর অফিস, পার্লামেন্ট, এবং অন্যান্য সরকারি ভবনেও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। তবে ঢাকার আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে জেনারেটরের থেকে পাওয়া বিদ্যুৎ দিয়ে কাজ চলে। সেই সময় বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো রিপোর্ট করে, প্রতিবেশী ভারতের একটি সাব-স্টেশনের সমস্যার কারণে তার সাথে সংযুক্ত বাংলাদেশের গ্রিডে এই বিপর্যয় ঘটে থাকতে পারে। বাংলাদেশ ও ভারতের সরবরাহ লাইনের ক্রুটি দেখা দেয়ার কারণে সেই ঘটনা ঘটেছিল।

এদিকে মঙ্গলবারের বিদ্যুৎ বিপর্যয় মূলত ঘোড়াশাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ নেয়ার সময় সংঘটিত হয় বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎবিভাগ।

এ বিপর্যয়ের কারণে দেশের অর্ধেকের বেশি এলাকা ছয় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎহীন ছিল। তবে কিছু কিছু এলাকায় ৭-৯ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ ছিল না। এসব এলাকার মধ্যে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ অনেকগুলো বড় শহর রয়েছে।

ব্যস্ত একটি দিনের দুপুরবেলা শুরু হওয়া এই বিভ্রাটের বিপর্যয়ে ফলে এসব জেলার মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েন। কেন এই ঘটনা ঘটেছে, তা এখনো জানতে পারেননি প্রকৌশলীরা। সেটা জানতে কয়েকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এক মাসের ব্যবধানে দেশে এটি দ্বিতীয়বারের মতো জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটলো। এর আগে গত ছয়ই সেপ্টেম্বর একবার গ্রিড বিপর্যয় হয়েছিল। তখন কুষ্টিয়া, যশোরসহ দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলো প্রায় দেড় ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন ছিল। কিন্তু কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটে? সেটা বোঝার জন্য আমাদের আগে জানতে হবে, জাতীয় গ্রিড কী আর কীভাবে কাজ করে।

জাতীয় গ্রিড হচ্ছে সারা দেশে বিদ্যুতের একটি সঞ্চালন ব্যবস্থা। প্রকৌশলীরা জাতীয় গ্রিডকে অনেকটা মহাসড়ক বা রেললাইনের সঙ্গে তুলনা করেন। বাংলাদেশে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড জাতীয় গ্রিড ব্যবস্থাপনা করে থাকে।

প্রতিষ্ঠানটির সিস্টেম অপারেশনের প্রধান প্রকৌশলী বি.এম. মিজানুর রহমান বলেন, এটি হচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদকদের কাছ থেকে নিয়ে ক্রেতাদের কাছে বিতরণ করতে সরবরাহ করার একটি সমন্বিত ব্যবস্থা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে একাধিক প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ উৎপাদন করে থাকে। সেটা উচ্চ ক্ষমতার পরিবাহী তারের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছে বিতরণকারী সংস্থাগুলোর কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে সেসব কোম্পানি গ্রাহকদের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়। এই সরবরাহ করার পুরো কাজটি জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে করা হয়। এই উৎপাদন, সরবরাহ আর বিতরণ ব্যবস্থার মধ্যে কোন ক্রুটি তৈরি হলেই পুরো ব্যবস্থাপনার জন্য জটিলতা তৈরি করে।

একে অনেকটা রেললাইনের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। চট্টগ্রাম থেকে হয়তো বিদ্যুতের রেল দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হলো। পথে একাধিক স্টেশনে সেটা থামিয়ে যাত্রী ওঠালো বা নামালো অর্থাৎ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ যোগ হলো অথবা গ্রাহক কোম্পানির কাছে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলো। ফলে বিদ্যুৎ যেখানেই উৎপাদন করা হোক না কেন, তারা বিদ্যুৎ উৎপাদন করে সঞ্চালন লাইনে দিয়ে দেন। এরপর সেটা জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে বাংলাদেশে ছড়িয়ে যায়। সেটা আবার বিভিন্ন স্থানের চাহিদা অনুযায়ী পাওয়ার গ্রিড স্টেশন, উপ-কেন্দ্র হয়ে লো-ভোল্টেজ হয়ে ভোক্তা বা গ্রাহকদের কাছে বিদ্যুৎ চলে যায়।

বাংলাদেশ জার্নাল/জিকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত