ঢাকা, রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

বিষাক্ত গ্যাসে শিক্ষক দম্পত্তির মৃত্যু, মানতে নারাজ নিহতের স্বজনরা

  গাজীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২২, ১২:০৪  
আপডেট :
 ০৪ নভেম্বর ২০২২, ১৪:২৪

বিষাক্ত গ্যাসে শিক্ষক দম্পত্তির মৃত্যু, মানতে নারাজ নিহতের স্বজনরা
নিহত শিক্ষক দম্পত্তি। ছবি: প্রতিনিধি

‘শিক্ষক দম্পত্তির ব্যবহৃত গাড়িতে একটি বিড়াল রেখে এসি ছেড়ে দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। ১০ থেকে ১২ মিনিট পর বিড়ালটি দুর্বল হয়ে নুয়ে পড়তে থাকে। ঠিক ২৫ থেকে ২৬ মিনিট পর বিড়ালটি মারা যায়। শিক্ষক দম্পত্তিও স্কুল থেকে রওনা দেয়ার পর যে স্থান থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয় সেই দুরত্বটিও ছিলো অনুমানিক একই সময়ের। এই পরীক্ষা থেকে প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে শিক্ষক দম্পত্তির মৃত্যু বিষাক্ত গ্যাস থেকে হয়েছে। এখন ভিসেরা প্রতিবেদন পাওয়ার অপেক্ষা।

বৃহস্পতিবার বিকালে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গাছা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নাদির উজ্জ -জামান এসব কথা জানিয়ে বলেন, এখন জব্দ করা আলমতের পরীক্ষা-নিরিক্ষা চলছে।

তবে পুলিশের এই ব্যাখ্যা মানতে রাজি নয় মামলার বাদি নিহত স্কুল শিক্ষক জিয়াউর রহমানের বড় ভাই স্কুল শিক্ষক আতিকুর রহমান ও তার স্বজনরা। মামলার বাদি আতিক বলেন, পুলিশের এটা মনগড়া কথাবার্তা। পুলিশের এই বিড়াল ব্যাখ্যার কোনো ভিত্তি নেই। আমরা তাদের যুক্তি কোনো ভাবেই মানতে পারছি না। পুলিশ তাদের তদন্ত সঠিক ভাবে করতে না পারায় এমন ব্যখ্যা দিচ্ছে।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের খাইলকুর এলাকা গত ১৮ আগষ্ট ভোরে তাদের ব্যাক্তিগত গাড়ি থেকে শিক্ষক দম্পতির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তাদের মুখ দিয়ে সামান্য লালা বের হওয়া ছাড়া আর কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিলো না। গত দুই মাসের বেশি সময় ধরে থানা পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ, পিবিআই, সিআইডি, র‌্যাব-১ সহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাটি তদন্ত করে আসছে।

কিন্তু দীর্ঘদিনেও তারা কোনো ক্ল খুঁজে পায়নি। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নিহতদের ভিসেরা ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেনও পাওয়া যায়নি।

গত ১৭ আগষ্ট গাজীপুরের কামাড়জুরী এলাকার বাসিন্দা গাজীপুর টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ কে এম জিয়াউর রহমান (৫১) তার স্ত্রী টঙ্গীর আমজাদ আলী সরকার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মাহমুদা আক্তার (৩৫) স্কুলে গিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়ে নিখোঁজ হয়। পরদিন ১৮ আগষ্ট ভোরে তাদের ব্যবহৃত ব্যক্তিগত গাড়ি থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

ঘটনার একদিন পর নিহতের বড় ভাই স্কুল শিক্ষক আতিকুর রহমান বাদি হয়ে আজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তবে ঘটনার দুই মাস ১৭ দিন পেরিয়ে গেলেও ঘটনার ক্লু খুঁজে বের করতে পারেনি পুলিশ। পাওয়া যায়নি ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা প্রতিবেদনও।

গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান মো. শাফি মোহাইমেন বলেন, এখন পর্যন্ত নিহতদের ভিসেরা প্রতিবেদন আসেনি। যার কারণে ময়না তদন্ত প্রতিবেদনও দেয়া হয়নি। প্রতিবেদন কবে আসবে সেটিও ঠিক করে বলা যাচ্ছে না। তবে এসব পরীক্ষার জন্য সর্বোচ্চ তিন মাস সময় লাগে।

গাছা থানা পুলিশ জানায়, থানা পুলিশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংস্থার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন তথ্য উপত্য ও আলামত সংগ্রহ করেছেন। বিভিন্ন স্থান থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু কোথাও কোনো ধরনের ক্লু পাওয়া যায়নি। কোনো ভাবেই তারা হত্যাকাণ্ড হয়েছে এমন কোনো তথ্য তাদের কাছে আসেনি।

এরই মধ্যে গাছা থানায় ইব্রাহীম হোসেন নামের এক নতুন ওসি যোগদান করেন। তিনি এসময় সিআইডিতে কর্মরত ছিলেন। তিনি যোগ দেয়ার পর মামলার সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে কিছু দিন আগে গাড়িতে একটি বিড়াল রেখে পরীক্ষা করা হয়।

গাড়িতে বিড়ালটি রেখে এসি ছেড়ে বন্ধ করে দেয়া হলে ১০ থেকে ১২ মিনিট পর বিড়ালটি নুয়ে পড়ে এবং ২৫ থেকে ২৬ মিনিট পর বিড়ালটি মারা যায়। পরে পুলিশ গাড়ির ও গাড়ির ভিতরে থাকা বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করে তাকে পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর), বিআরটিএ, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সসহ আরও কয়েকটি সংস্থায় পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ডিএনএ প্রতিবেদন পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন তদন্ত-সংশ্নিষ্টরা।

গাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইব্রাহীম হোসেন, এটি আমরা এখনই প্রকাশ করতে চাচ্ছি না। আরও পরীক্ষা নিরীক্ষার ফলাফল পাওয়া গেলেই বিষয়টি আমরা আরও নিশ্চিত হতে পারবো।

পুলিশ ও স্বজনরা জানায়, শিক্ষক দম্পত্তি জিয়াউর রহমান ও মাহমুদা আক্তারের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান টঙ্গীর পাশাপাশি এলাকায়। যার কারণে প্রতিদিন তাদের প্রাইভেটকার নিয়ে একসঙ্গে স্কুলে যাওয়া আসা করতেন। গাড়িটি জিয়াউর রহমান নিজেই চালাতেন।

গত ১৭ আগষ্ট সকালে তারা স্কুলে যান এবং কাজ শেষে সন্ধ্যায় গাড়ি নিয়ে বের হয়ে আর বাসায় ফিরে আসেননি। পরদিন ১৮ আগষ্ট ভোরে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের দক্ষিণ খাইকুর এলাকা থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। দুপুরের মধ্যে নিহতদের সুরতহাল প্রতিবেদন করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ।

তাদের ময়না তদন্ত শেষে নিহতদের শরীরের বেশ কিছু নমুনার ভিসেরা প্রতিবেদনের জন্য সিআইডিতে পাঠানো হয়। কিন্তু ঘটনার এক মাস হয়ে গেলেও তাদের ভিসেরা প্রতিবেদন আসেনি।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, গাড়িতে বিড়াল রেখে পরীক্ষার পর প্রাথমিক ভাবে আমরা নিশ্চিত হয়েছি তাদের মৃত্যু বিষাক্ত এসির গ্যাস থেকেই হয়েছে। বিড়াল দিয়ে পরিক্ষার পর গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ও এসির গ্যাস পরিক্ষার জন্য বিআরটি ও সিআইডিতে পাঠানো হয়েছে। সেই প্রতিবেদন আসলে আমরা আরও নিশ্চিত হতে পারবো।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওএফ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত