ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছিল কেন?

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২৩, ১৪:২৬  
আপডেট :
 ২৬ মার্চ ২০২৩, ১৪:৫০

মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছিল কেন?
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধাদের উল্লাস । ছবি: সংগৃহীত

সত্তরের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সরকার গঠনে আহ্বান করার পরিবর্তে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালের ১লা মার্চ জাতীয় পরিষদ অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন। প্রতিবাদে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তানে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। পরিণতিতে ২৫ শে মার্চ রাতে গণহত্যা চালায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং শুরু হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ।

১৯৭১ সালের ১১ই জুলাই থেকে ১৭ই জুলাই পর্যন্ত কলকাতাস্থ ৮ নং থিয়েটার রোডের প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের সদর দপ্তরে সেক্টর কমান্ডার এবং ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাদের একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ বাহিনীর নেতৃত্ব, সংগঠন, প্রশিক্ষণ, অভিযান, প্রশাসন ইত্যাদি বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা শেষে মোট চারটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল সেখানে। সেসব সিদ্ধান্তের মধ্যে প্রধানতম ছিল সুষ্ঠুভাবে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার লক্ষ্যে বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা, এবং প্রতি সেক্টরের জন্য একজন করে সেক্টর কমান্ডার নিযুক্ত করা হয়। পাশাপাশি প্রতিটি সেক্টরকে অঞ্চল ভেদে ভাগ করা হয় কয়েকটি সাব-সেক্টরে।

আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করার জন্য পর্যাপ্ত অস্ত্রশস্ত্র ও যুদ্ধ সরঞ্জাম এদেশের মানুষের কাছে ছিল না। এমন অবস্থায় স্বাধীনতা যুদ্ধ চালিয়ে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন রণকৌশল গ্রহণ করতে হয়েছিল। আর পুরো বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করে ফেলা ছিল এসব রণকৌশলেরই একটি অংশ।

মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের ১১টি সেক্টর । ছবি: সংগৃহীত

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখক ও ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন বলেছেন, সেক্টরগুলো প্রধানত যুদ্ধের কৌশল ভেবে করা হয়েছিল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল বেসামরিক সরকারের অধীনে ও নেতৃত্বে। তারাই ঠিক করেছিলেন অবশ্যই সমরবিদদের নিয়ে কীভাবে সারাদেশে যুদ্ধটা করবেন। সেই কৌশল নিয়ে তারা সারা দেশকে ১১টা সেক্টরে ভাগ করেছিলেন।

এক নজরে ১১টি সেক্টর এবং সেক্টর কমান্ডার

সেক্টর নং ১

ফেনী নদী থেকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি এবং ফেনী পর্যন্ত ছিল ‘সেক্টর নং ১’। ১৯৭১ সালের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত এই সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান এবং জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কমান্ডার ছিলেন মেজর রফিকুল ইসলাম। আর এই সেক্টরকে পাঁচটি সাব সেক্টরে বিভক্ত করা হয়েছিল।

সেক্টর নং ২

ঢাকা, কুমিল্লা, আখাউড়া-ভৈরব, নোয়াখালী ও ফরিদপুরের কিছু অংশ নিয়ে গঠিত হয়েছিল ‘সেক্টর নং ২’। এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এই সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর খালেদ মোশাররফ এবং অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মেজর এটিএম হায়দার। এই সেক্টরে ৬টি সাব-সেক্টর ছিল।

সেক্টর নং ৩

হবিগঞ্জ, আখাউড়া-ভৈরব রেললাইন থেকে পূর্ব দিকে কুমিল্লা জেলার অংশবিশেষ এবং কিশোরগঞ্জ এবং ঢাকার কিছু অংশ ছিল ‘সেক্টর নং ৩’ এর আওতায়। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর কেএম শফিউল্লাহ। সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন মেজর এএনএম নুরুজ্জামান। আর এই সেক্টরে ছিল ৭টি সাব-সেক্টর।

সেক্টর নং ৪

সিলেট জেলার অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত হয়েছিল ‘সেক্টর নং ৪’। এই সেক্টরেও ছিল ৬টি সাব-সেক্টর। মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর সিআর দত্ত (পরে মেজর জেনারেলা) এবং পরে ক্যাপ্টেন এ রব।

সেক্টর নং ৫

বৃহত্তর ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী অঞ্চল এবং সিলেট জেলার অংশ বিশেষ নিয়ে ‘সেক্টর নং ৫‘ গঠিত হয় । মেজর মীর শওকত আলী ছিলেন সেক্টর কমান্ডার। এই সেক্টরকেও ৬টি সাব-সেক্টরে ভাগ করা হয়ছিল।

সেক্টর নং ৬

দিনাজপুরের ঠাকুরগাঁও মহাকুমা এবং ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী অঞ্চল ব্যতীত সমগ্র রংপুর নিয়ে গঠিত হয় ‘সেক্টর নং ৬’। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন উইং কমান্ডার এমকে বাশার। এই সেক্টরে ছিল ৫টি সাব-সেক্টর।

সেক্টর নং ৭

রাজশাহী, পাবনা, ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরবর্তী এলাকা ব্যতীত সমগ্র বগুড়া, দিনাজপুরের দক্ষিণ অঞ্চল এবং রংপুরের কিছু অংশ ছিল ‘সেক্টর নং ৭’ এর অন্তর্ভুক্ত। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন তিনজন -মেজর নাজমুল হক, সুবেদার মেজর এ রব ও মেজর (পরে লে. কর্নেল) কাজী নুরুজ্জামান। এই সেক্টরে ছিল ৯টি সাব-সেক্টর।

সেক্টর নং ৮

কুষ্টিয়া, যশোর, দৌলতপুর সাতক্ষীরা সড়ক পর্যন্ত খুলনা জেলা ও ফরিদপুরের কিছু অংশ ছিল ‘সেক্টর নং ৮’ এর অন্তর্ভুক্ত। এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত এই সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর (পরে লে.কর্নেল) আবু ওসমান চৌধুরী ও আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মেজর (পরে মেজর জেনারেল) এম এ মঞ্জুর। এই সেক্টরে ছিল ৭টি সাব-সেক্টর।

সেক্টর নং ৯

পটুয়াখালী, বরিশাল ও খুলনার কিছু অংশ নিয়ে গঠিত হয় ‘সেক্টর নং ৯’। ডিসেম্বরের শুরু পর্যন্ত সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর এম এ জলিল এবং তারপর মেজর জয়নাল আবেদীন। এছাড়াও অতিরিক্ত দায়িত্বে ছিলেন মেজর এম এ মঞ্জুর। এই সেক্টরে ছিল ৩টি সাব-সেক্টর।

সেক্টর নং ১০

সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল, নৌ কমান্ডো ও আভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহন ছিল ‘সেক্টর নং ১০’ এর অধিনে। এ সেক্টরে নৌ কমান্ডোরা যখন যে সেক্টরে মিশনে নিয়োজিত থাকতেন, তখন সে সেক্টরের কমান্ডারের নির্দেশে কাজ করতেন। এই সেক্টরে কোনো সাব-সেক্টর ছিল না এবং ছিল না নিয়মিত কোনো সেক্টর কমান্ডার। প্রধান সেনাপতির নিয়ন্ত্রণাধীন বিশেষ বাহিনী ছিল এটি।

সেক্টর নং ১১

কিশোরগঞ্জ বাদে ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল জেলা নিয়ে গঠিত হয় ‘সেক্টর নং ১১’। ১৯৭১ সালের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত এই সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান । নভেম্বর পর্যন্ত সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর আবু তাহের ও তারপর ফ্লাইট লেফট্যান্যান্ট (পরে উইং কমান্ডার) এম হামিদুল্লাহ খান। এই সেক্টরকে ৭টি সাব-সেক্টর ভাগ করা হয়েছিল।

সূত্র: বিবিসি (সংক্ষিপ্ত)

বাংলাদেশ জার্নাল/আরআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত