ঢাকা, রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২০ মিনিট আগে
শিরোনাম

মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে জোর পূর্বক উচ্ছেদের অভিযোগ

  গাইবান্ধা প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০১ জুন ২০২৩, ০২:৫৭  
আপডেট :
 ০১ জুন ২০২৩, ০৩:০৩

মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে জোর পূর্বক উচ্ছেদের অভিযোগ
উচ্ছেদের অভিযানের সময় লুটপাট ও বসতবাড়ী ভাংচুর । ছবি: প্রতিনিধি

গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজার রহমানের পরিবারকে জোর পূর্বক উচ্ছেদেরর অভিযোগ উঠেছে। উচ্ছেদের সময় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারটির উপর সন্ত্রাসী হামলা, লুটপাট ও বসতবাড়ী ভাংচুরের ঘটনায় দোষিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগী ওই মুক্তিযোদ্ধা পরিবার।

বুধবার (৩১ মে) সকালে উপজেলার পৌর শহরের নুনীয়াগাড়ী গ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজার রহমানের ভাংচুর হওয়া বসতবাড়ির ধংসস্তুপের সামনে এই সংবাদ সম্মেলন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারটির পক্ষে তার মেয়ে শ্যামলী আক্তার সাংবাদিকেদের জানান, পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আমাদেরকে উচ্ছেদ করার জন্যে পলাশবাড়ী পৌর মেয়র ঘোড়াঘাট রোড হতে এস এম হাইস্কুল এর প্রাচীরের পাশ দিয়ে চান প্রফেসরের বাড়ির দিকের রাস্তাটি প্রশস্ত করার কথা বলে ১নং খতিয়ান ভুক্ত সরকারি রাস্তার জমি থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক বরাবর একটি আবেদন করেন। পরবর্তিতে ঐ আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে পৌর কতৃপক্ষ এবং পলাশবাড়ী উপজেলার দায়িত্বরত সার্ভেয়ার ইব্রাহিম খলিলসহ এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তি বর্গের উপস্থিতিতে ১নং খতিয়ান ভুক্ত রাস্তার দুই ধারের জমি পরিমাপ করে গত ৭ ফেব্রুয়ারী পলাশবাড়ী পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মেহেরাব হোসেন জনি, সহকারী প্রকৌশলী মর্তুজা এলাহী, পলাশবাড়ী উপজেলার দ্বায়িত্বরত সার্ভেয়ার ইব্রাহিম খলিল ও পৌর মেয়র গোলাম সারোয়ারসহ মোট ৪ জনের যৌথ স্বাক্ষরিত একটি সার্ভে রিপোর্ট জেলা প্রশাসক বরাবর দাখিল করেন পৌর মেয়র। পৌরসভার সার্ভে রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে গত ৫ এপ্রিল ১৫ জন অবৈধ দখলদারের নাম উল্লেখ করে জেলা প্রশাকের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করেন পলাশবাড়ী ইউনিয়ন ভুমি সহকারী ডি এম মোমিনুল হক।

সার্ভে রিপোর্টে ও ইউনিয়ন ভুমি সহকারির পাঠানো অবৈধ দখলদারের তালিকা অনুযায়ী গত ২৪ মে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সহকারি কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (এনডিসি ) জুয়েল মিয়ার নেতৃত্বে ১নং খতিয়ান ভুক্ত সরকারি রাস্তার জমিতে থাকা ১৫ অবৈধ দখলদারদেরকে উচ্ছেদ করতে অভিযান পরিচালিত হয়। উচ্ছেদ অভিযানে সার্ভেরিপোট অনুযায়ী ১নং খতিয়ানভুক্ত সরকারি রাস্তার জায়গায় যে অংশটি পড়ে শুধুমাত্র সেই অংশটিই ভাঙ্গার পর উচ্ছেদ অভিযান সমাপ্ত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারটির পক্ষে মেয়ে শ্যামলী আক্তার । ছবি: প্রতিনিধি

অভিযান পরিচালনা শেষে দ্বায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট ( এনডিসি ) জুয়েল মিয়া মুক্তিযোদ্ধা পরিবারটিকে অবশিষ্ট যে ঘরগুলো উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনাকালে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেই ঘরগুলো পুনরায় মেরামত করে বাসযোগ্য করার পরামর্শ দিয়ে অভিযান স্থান ত্যাগ করেন বলে দাবি ভুক্তভোগি পরিবারটির।

এদিকে মুক্তিযোদ্ধা কন্যা শ্যামলী আক্তারের ছেলে লিয়ন ইসলাম সাংবাদিকদেরকে জানান, গত ২৮ মে রাতে তার মা শ্যামলী আক্তার বিশেষ কাজে ঢাকা যান। আর এই খবর পেয়ে পরদিন ২৯ মে সকাল ১০টার দিকে হঠাৎ করে মাহামুদুল ও মিঠুর নেতৃত্বে প্রায় শতাধিক লোকের একটি সন্ত্রাসী দল এসে আমাদের ফুলের দোকানের ভিতরে ঢুকে আমাকে মারধর করে বের করে দেয়। এরপর তারা আমাদের ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানসহ বসতবাড়ির দেয়াল বড়-বড় হাতুরি দিয়ে ভাঙতে থাকে। এসময় বাড়িতে থাকা আমার খালামনি সাহানুরসহ অন্যরা বাধা দিতে গেলে তাদেরকে মারধর করে এবং জোরপূর্বক টেনেহিঁচড়ে পার্শ্ববর্তী একটি স্কুলের ঘরে নিয়ে আটকে রাখে। সেখানে আমাদের কাছে থাকা সবার মোবাইল ফোনগুলো কেড়ে নেয়া হয়। ঘরে আবদ্ধ অবস্থায় পৌর মেয়র গোলাম সরোয়ার বিপ্লব এর নেতৃত্বে কিছু লোক একটি বুলডোজার এনে মূহর্তের মধ্যে আমাদের বসতবাড়ীসহ সকল স্থাপনা মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়। ভাংচুর শেষে সবার মোবাইল ফেরত দিলেও আমার বোন লিয়া ঘর ভাঙার ভিডিও করার কারণে তার মোবাইল ফোনটি মেয়র নিয়ে যাওয়ার পর আর ফেরত দেননি।

আরও পড়ুন: ফরিদপুরে নির্মাণাধীন সেতুর মাটি ধসে ৩ শ্রমিকের মৃত্যু

এ বিষয়ে পলাশবাড়ী পৌর মেয়র গোলাম সারোয়ার বিপ্লব বলেন, জমিটি ১ নং ঘতিয়ানভূক্ত এবং রাস্তার উপর নির্মাণ করার এসব স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলতে হয়েছে। ওই জায়গা দিয়ে ড্রেন নির্মাণ করা হবে। এতে পৌর এলাকাবাসীর জলাবদ্ধতা নিরসন হবে। ঘটনার সময় কাউকে ঘরে আটকে রাখা কিংবা মারধরের কোন ঘটনা ঘটেনি বলেও তিনি জানান।

এদিকে নতুন করে মেয়রের নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের বসতবাড়ি ভাঙচুরে জেলা প্রশাসন এবং উপজেলা প্রশাসনের কোন প্রকার নির্দেশনা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বহী কর্মকর্তা কামরুজ্জামান নয়ন জানান, এরকম কোন নির্দেশনার ব্যাপারে আমার জানা নেই। এটি মেয়র কেন ভেঙেছেন তিনিই বলতে পারবেন। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো।

এ বিয়য়ে উচ্ছেদ পরিচালনাকারী সহকারি কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (এনডিসি ) জুয়েল মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমার কাছে জেলা প্রশাসন শুধুমাত্র ১নং খতিয়ান রাস্তার জমি থেকে যেটুকু অবৈধ স্থাপনা ভাঙ্গার অনুমতি ছিল সেটুকুই ভেঙ্গেছি। এরপর আমরা অভিযান সমাপ্ত করেছি।

সংবাদ সম্মেলন শেষে পরিবারটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেন, তাদের ক্ষতিপুরণসহ অপরাধীদের যেন দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হয়।

বাংলাদেশ জার্নাল/আরআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত