ঢাকা, রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক বিশ্বের কাছে মডেল হবে: শেখ হাসিনা

বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক বিশ্বের কাছে মডেল হবে:  শেখ হাসিনা

ভবিষ্যতে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক বিদ্যমান থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের এ সম্পর্ক বিশ্ববাসীর সামনে দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কের মডেল হিসেবে গণ্য হবে। শুক্রবার শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বক্তব্যের শুরুতে বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কবিগুরুর হাতে গড়া এক অনন্য প্রতিষ্ঠান এই শান্তিনিকেতন। প্রকৃতির কাছাকাছি থেকে বৃহত্তর বিশ্বকে গ্রহণের উপযুক্ত করে তোলার জন্য জ্ঞানদান করার উদ্দেশে তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা করেন।

বাংলাদেশ ভবন স্থাপনের সুযোগ করে দেয়ায় ভারত সরকার, পশ্চিম বাংলা সরকার এবং বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষসহ সে দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক পুরোনো। ১৯৯৯ সালে বিশ্বভারতী আমাকে দেশিকোত্তম ডিগ্রি প্রদান করে। আমার ইচ্ছে ছিল এখানে বাংলাদেশ বিষয়ে চর্চার জন্য একটি আলাদা জায়গা থাকুক। ২০১০ সালে আমার ভারত সফরের সময় এই ভবনটি স্থাপনের ব্যাপারে প্রাথমিক আলোচনা হয়। শেষ পর্যন্ত এটি আজ বাস্তবে রূপ নিয়েছে।

রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি কর্মের বিভিন্ন দিক স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে বেশি কিছু বলার ধৃষ্টতা আমার নেই। শুধু এটুকুই বলবো, প্রতিটি বাঙালির জীবনে তিনি উজ্জ্বল বাতিঘর। তার সৃষ্টির ঝর্ণাধারায় আমরা অবগাহন করি প্রতিনিয়ত। আমাদের হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা, প্রেম-বিরহ, দ্রোহ ও শান্তিতে রবীন্দ্রনাথ থাকেন হৃদয়ের কাছের মানুষ হয়ে।

রবীন্দ্রনাথ নিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, আমার আব্বা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং আমার নিজের কিছু কথা বলি। আমরা ছোটবেলায় আব্বার ভরাট কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথের কবিতার আবৃতি শুনতাম। অনেক সময় স্টিমারে টুঙ্গিপাড়ায় যাওয়ার সময় তিনি কবিতা আবৃতি করতেন। আব্বার কয়েকটি প্রিয় পংক্তি ছিল: ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলরে...’ অথবা ‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী, ভয় নাই ওরে ভয় নাই/নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান, ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’ কিংবা ‘যেতে নাহি দিব। হায়, তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আব্বা রবীন্দ্রনাথকে মনেপ্রাণে ধারণ করতেন। পাকিস্তান আমলে তাকে প্রায়ই জেলে যেতে হতো। তাকে রাখা হতো নির্জন সেলে। অন্ধকার কারাগারে তার সঙ্গী হত বই। আব্বা যে বইগুলো সঙ্গে নিতেন তারমধ্যে রবীন্দ্র রচনাবলী অবশ্যই থাকতো। রবীন্দ্রনাথের দ্বারা বঙ্গবন্ধু এতটাই প্রভাবিত হয়েছিলেন যে ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে নির্বাচিত করে রেখেছিলেন।

শৈশবকালের স্মৃতিচারণ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলে, আমাদের বাড়ির পরিবেশটাই ছিল অন্যরকম। বইপড়া, কবিতা আবৃত্তি বা সঙ্গীত চর্চা- একটা সাংস্কৃতিক আবহ বিরাজ করতো বাড়িতে। আমার ছোটবোন শেখ রেহানা গান শিখতো ছায়ানটে, আমি নিজে বেহালা বাজানো শেখার চেষ্টা করেছিলাম কিছুকাল, ছোটভাই শেখ কামাল গিটার বাজাতো। আমরা ভাইবোনেরা সবাই কোনো না কোনো সাংস্কৃতিক কাজে জড়িত ছিলাম।

নিজের রবীন্দ্র চর্চার শুরুর কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রবীন্দ্র চর্চার শুরু আব্বার কাছ থেকে হয়েছে। পরবর্তীকালে বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী হিসেবে আরও কাছাকাছি এসেছি রবীন্দ্র সাহিত্যের।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমৃত্যু স্বপ্ন ছিল ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা। কবিগুরুর মত তিনিও বিশ্বাস করতেন যে, বৈরিতার অবসান না হলে কখনই এই পৃথিবী সমৃদ্ধ হবে না।

তিনি আরো বলেন, ১৯৭১ সালে যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদাত্ত আহ্বানে সাড়া দিয়ে পাকিস্তানের দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মরণপণ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষ। সে সময় ভারতের জনগণ আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। ভারত সে সময়ে আমাদের প্রায় এক কোটি গৃহহারা মানুষকে আশ্রয় দিয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত করেছিল।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী ছোটবোন রেহানাসহ আমাকে ভারতে আশ্রয় দিয়েছিলেন। সেই ভারতের জনগণ যেভাবে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তা আমরা কোনদিন ভুলবো না।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বর্তমানে উভয় দেশের মধ্যে প্রচলিত ও অপ্রচলিত বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের এ পারস্পরিক সহযোগিতার পূর্ণ সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম হবো।

‘বাংলাদেশ ভবন’ নির্মাণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকালে ঘোষিত যৌথ ইশতেহারে আমরা এ ভবন নির্মাণের কথা উল্লেখ করেছিলাম। পরবর্তীকালে সিদ্ধান্ত হয় যে, ‘বাংলাদেশ ভবন’ নির্মাণের লক্ষ্যে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ শান্তিনিকেতনে জমি প্রদান করবেন। আর বাংলাদেশ সরকার এ ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় অর্থ ব্যয় করবে। পরে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ ভবন নির্মাণের জন্য ইন্দিরা গান্ধী কেন্দ্রের পাশে প্রয়োজনীয় জমি প্রদান করেন। এখানে এই দ্বিতল ভবনটি নির্মাণে ২৫ কোটি রুপি ব্যয় হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, বাংলাদেশ সরকার ‘বাংলাদেশ ভবন’ রক্ষণাবেক্ষণ এবং এর কার্যক্রম পরিচালনার জন্যে ১০ কোটি রুপির সমপরিমাণ একটি স্থায়ী তহবিল গঠন করবে। এই ভবনে গবেষকদের সহায়তার জন্য একটি পাঠাগার, অডিটোরিয়াম, ক্যাফেটেরিয়া, ডিজিটাল জাদুঘর ও আর্কাইভ ও অন্যান্য সুবিধাদি সংযুক্ত থাকবে।

রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিধন্য শান্তিনিকেতনে ‘বাংলাদেশ ভবন’ প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমি গভীরভাবে আনন্দিত বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমি মনে করি কবিগুরুর শান্তিনিকেতনে এটি একখণ্ড বাংলাদেশ। যাকে কেন্দ্র করে শান্তিনিকেতনের বুকে জেগে উঠবে বাংলাদেশের আলো।

সবশেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য।

জেডএইচ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত