ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

রূপগঞ্জের স্থায়ী বাণিজ্য মেলা নির্মাণে ধীরগতি

  নজরুল ইসলাম লিখন

প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০১৮, ১২:০৪

রূপগঞ্জের স্থায়ী বাণিজ্য মেলা নির্মাণে ধীরগতি

প্রতিবছর ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হয় ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। আগারগাঁওয়ে স্বল্প পরিসরে অনুষ্ঠিত হয় বলে মাসব্যাপী এ মেলাকে কেন্দ্র করে তৈরি হয় নানা ঝুট-ঝামেলা। এ সময়ে দেশ ও দেশের বাইরের ক্রেতা-বিক্রেতা সমবেত হন সেখানে। মূলত ব্যবসা-বাণিজ্যনির্ভর হলেও এ মেলা সব শ্রেণির মানুষের সমাগমে মিলনমেলায় পরিণত হয়।

পরিসর স্বল্প হওয়ায় এবং রাজধানীর একটি ব্যস্ততম এলাকায় মেলাটি অনুষ্ঠিত হওয়ায় মানুষে গিজগিজ করে পুরো এলাকা। তৈরি হয় নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। এতসব চিন্তা ভাবনা করেই নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে পূর্বাচল উপশহর এলাকায় স্থায়ী বাণিজ্য মেলার প্যাভিলিয়ন নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে কাজ চলছে খুবই ঢিমেতালে। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ বারবার বাড়ানো হচ্ছে।

সূত্র জানায়, যথাসময়ে জমি না পাওয়ায় প্রথমদিকে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন পিছিয়ে ছিল। নানা চড়াই-উতরাইয়ের পর পূর্বাচল উপশহর এলাকায় ৩৫ একর জমির ওপর স্থায়ী প্রদর্শনী কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হচ্ছে।

রাজধানীতে বাণিজ্য মেলার স্থায়ী ভেন্যু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদের পরপরই। কিন্তু সরকারের চলতি মেয়াদেও নির্মাণ কাজ শেষ হচ্ছে না। কারণ সরকারের হিসাব অনুযায়ী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাণিজ্য মেলা কেন্দ্রটির ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৫৩ শতাংশ।

প্রকল্প প্রকৌশলী হু বু হাং বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘কোনো প্রকার অনিয়ম নয়, নিরলসভাবেই কাজ এগিয়ে চলছে। নতুন নকশা ও বাজেট বৃদ্ধি পাওয়ায় কাজের পরিধি বেড়েছে। তাই কিছুটা সময় বেশি ব্যয় হবে। তবে যথাসময়ে কাজ বুঝিয়ে দিতে পারব ‘

জানা গেছে, শুরুতে ২৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়। সে সময় রাজধানীর তেজগাঁওয়ে স্থান নির্বাচন করা হলেও জমি স্বল্পতার কারণে সেখানে তা বাস্তবায়িত হয়নি। এরপর পূর্বাচলে ৭৯৬ কোটি টাকা ব্যয়ে এ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ হাতে নেয়া হয়। কিন্তু প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত ৩ বছর মেয়াদ পার হয়ে গেলেও অর্ধেক কাজও শেষ হয়নি। নতুন করে প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় ফের বেড়েছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ধীরগতিতে চলছে বাণিজ্য মেলার জন্য স্থায়ী কেন্দ্র নির্মাণের কাজ। ঘোষিত সময়ের পরে দু’বছর মেয়াদ বাড়িয়েও সময়মতো কাজ শেষ হবে না বলে আশঙ্কা খোদ নির্মাণ শ্রমিকদের। ব্যয়ও বাড়ছে ১৭০ কোটি টাকা। ২০০৯ সালে নেয়া এ উদ্যোগটি বাস্তবায়নে সময় গিয়ে দাঁড়াল ১১ বছর।

সূত্র আরো জানায়, চীনের অনুদান ৬২৫ কোটি ৭০ লাখ এবং সরকারি তহবিলের ১৭০ কোটি ৩১ লাখ টাকা নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়। পরবর্তী সময়ে বাস্তবতার নিরিখে অতিরিক্ত ১৫ একর ভূমি অধিগ্রহণ, নতুন স্থাপনা নির্মাণ, সেন্টারের পরিসর বৃদ্ধি, রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাকরণসহ বিভিন্ন কারণে ১৭০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় ধরা হচ্ছে ১ হাজার ৩০৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। সেইসঙ্গে মেয়াদ ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশে বিশেষায়িত বাণিজ্যমেলা আয়োজন করার জন্য একটি স্থায়ী কেন্দ্রস্থাপন করায় দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। এই সেন্টার নির্মাণের মাধ্যমে স্থানীয় পণ্যের ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল কম্পিটিটিভনেস’ বৃদ্ধি পাবে এবং বাণিজ্যিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিবেশের উন্নয়ন ঘটবে। এতে দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত হওয়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়ন জোরদার হবে। প্রতিবছর খ্রিস্টীয় নববর্ষের প্রথম দিন শুরু হয় ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। সে সময় দেশ এবং দেশের বাইরে থেকে ক্রেতারা সমবেত হন মাসব্যাপী এই পণ্য মেলায়।

মূলত ব্যবসা-বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে এ মেলার আয়োজন করা হলেও সকল শ্রেণির মানুষের সমাগমে এটি পরিণত হয় মিলনমেলায়। বছর ধরে মানুষ এ মেলার অপেক্ষায় থাকে। এতদিন স্বল্প পরিসরে, অস্থায়ীভাবে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এ মেলার আয়োজন করা হতো। অপ্রতুল জায়গার কারণে, স্থায়ী ভেন্যুর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার পূর্বাচলে বিশাল পরিসরে কেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

প্রতিযোগিতার বিশ্বে ব্যবসা-বাণিজ্যে টিকে থাকতে হলে ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী নতুন পণ্য উৎপাদন এবং তা যথাযথভাবে প্রদর্শনে এ মেলার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এবার বর্ধিত সময়ে পূর্বাচলে বাণিজ্য মেলার স্থায়ী ভেন্যু যেন শেষ হয়, এ প্রত্যাশা ব্যবসায়ী মহলের।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওয়াইএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত