ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

কেমন ছিল সেই ১২ জলদস্যুর জীবন?

  কক্সবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০১৮, ১৬:০৭

কেমন ছিল সেই ১২ জলদস্যুর জীবন?

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত কুখ্যাত জলদস্যু আনজু মিয়া। জেলেদের অনেকের কাছে তিনি আমজু মিয়া আবার অনেকের কাছে সিকদার নামে পরিচিত। মাত্র ৩৩ বছর বয়সে পা দেওয়া এই যুবক স্থানীয় জেলেদের কাছে ছিলেন এক মুর্তিমান আতংক। তার নেতৃত্বে গড়ে উঠা দুর্ধর্ষ জলদস্যু বাহিনী বিগত প্রায় ১০ বছর ধরে দাপিয়ে বেড়িয়েছে কক্সবাজারের সমুদ্র উপকূল।

মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপের গহীন প্যারাবনে ছিল তাদের গোপন আস্তানা। জেলে এবং লবণ চাষীরাই ছিল মূলত সশস্ত্র ‘আনজু বাহিনীর’ প্রধান শিকার। জেলেদের মাছ লুট, অপহরণ, লবণ চাষীদের জিন্মি করে টাকা আদায়সহ নানা অপকর্মে কেটেছে তাদের অতীত জীবন। আইনশৃংখলা বাহিনীর দৃষ্টি এড়িয়ে প্যারাবনের গোপন আস্তানায় থেকেই তারা স্থানীয় প্রতিনিধিদের মাধ্যমে নিজেরদ জন্য অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করতো বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

কক্সবাজার শহর থেকে উত্তর-পশ্চিমে মাত্র সাত কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরের বুকে সোনাদিয়া দ্বীপের অবস্থান। মাত্র নয় বর্গকিলোমিটারের এ ভূখন্ডটি মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নের একটি গ্রাম। এর তিন দিকে রয়েছে সমুদ্র সৈকত, সাগর লতায় ঢাকা বালিয়াড়ি, কেয়া- নিশিন্দার ঝোপ, ছোট-বড় খাল বিশিষ্ট প্যারাবন। দ্বীপের লোক সংখ্যা কম হওয়ায় এ প্যারাবনেই গড়ে তোলা সম্ভব হয় জলদস্যুদের নিরাপদ ঘাঁটি। দুর্গম হওয়ায় এ দ্বীপের সশস্ত্র অপরাধীদের ধরা আইনশৃংখলা বাহিনীর কাছে রীতিমত দু:সাধ্য।

‘আনজু বাহিনী’র প্রধান আনজু মিয়ার বাড়িও সোনাদিয়া দ্বীপেই। তার পিতার নাম বদিউল আলম। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ২০১৪ সালের তালিকা এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ২০১৭ সাল ও ২০১৮ সালের তালিকায় কুখ্যাত জলদস্যু হিসেবে তার নাম রয়েছে।

এই ‘আনজু বাহিনীর’ ১০ জন সদস্য শনিবার দুপুরে মহেশখালীতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ২০১৭ সালের ও ২০১৮ সালের তালিকায় তাদের সকলের নাম রয়েছে। তারা স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আখাঙ্খার কথা ব্যক্ত করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদের কাছে। আত্মসমর্পন করা অন্য এ বাহিনীর অপর ৯ জন হলেন, সোনাদিয়া দ্বীপের মৃত মোস্তফার ছেলে সুমন মিয়া (৩৮), সোনাদিয়ার পূর্ব পাড়া গ্রামের মৃত এখলাছ মিয়ার ছেলে মকছুদ মিয়া (৩২), আব্দু রহমানের ছেলে মোনাফ মিয়া (২৮), মোজাফ্ফরের ছেলে মোবারক (২৭), বাহাদুর মিয়ার ছেলে মনজুর মিয়া (৩০), বাদশা মিয়ার ছেলে নুরুল মোস্তফা প্রকাশ নাগু (৩০), নুরু মিয়ার ছেলে ছৈয়দ হোসন (৩০), মৃত বাহাদুরের ছেলে নবাব মিয়া (২৯) ও আব্দুল গফুর প্রকাশ নাগু মেম্বারের ছেলে ইমতিয়াজ উদ্দিন প্রকাশ নকিব (৩১)। তারা সাতটি ওয়ান শ্যুটার গান, ১৩টি এসবিবিএল, চারটি ত্রি কোয়ার্টারগান ও শর্টগানের গুলি জমা দিয়েছে।

কক্সবাজারের আরেক দ্বীপ উপজেলার কুতুবদিয়ার আতংকের নাম ছিল ‘রমিজ বাহিনী’। এ বাহিনীর সদস্যরা মূলত মাছ ধরার ট্রলারগুলো ডাকাতি করতো। পরে লুট করা মাছ, ট্রলার ও জাল বিক্রি করতো লোকালয়ের প্রতিনিধির মাধ্যমে এবং তাদের মাধ্যমেই অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করতো। এ বাহিনীর প্রধান রমিজ উদ্দীন (৩৫)। রমিজ কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর ধুরুং ইউনিয়নের মৃত নজির আহমদের ছেলে। তিনিসহ তার বাহিনীর আরেক জলদস্যু ছালেহ আহমদ প্রকাশ ছইল্যা ডাকাত (৪৬) আত্মসমর্পন করেছেন। তারা পাঁচটি এসবিবিএল, তিনটি ত্রি কোয়ার্টারগান ও ১২০ রাউন্ড শর্টগানের গুলি জমা দিয়েছে।

র‌্যাব-৭ এর জ্যেষ্ঠ সহকারি পুলিশ সুপার মো: মাশেকুর রহমান বলেন, ‘এসব বাহিনীর অস্ত্র-গোলাবারুদসহ সদলবলে আত্মসমর্পনের ফলে বঙ্গোপসাগরের মহেশখালী-কুতুবদিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে দস্যুবৃত্তিতে নিয়োজিত অন্যান্য জলদস্যুরা ও সন্ত্রাসীরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে উৎসাহী হবে। মহেশখালী কুতুবদিয়াসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের জলদস্যু, সন্ত্রাসীদের ধরতে র‌্যাবের অভিযান অব্যাহত থাকবে।’ প্রসঙ্গত, কক্সবাজারে মহেশখালীতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পন করেছে ৬টি জলদস্যু বাহিনীর ৪৩ জন সদস্য। শনিবার বেলা ১২ টার দিকে মহেশখালীর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ত্র জমা দেয়ার পাশাপাশি স্বাভাবিক জীবনের ফেরার আকাংখার কথা ব্যক্ত করেন।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত