ঢাকা, রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২১ মিনিট আগে
শিরোনাম

আসন পুনরুদ্ধার করতে চান মির্জা ফখরুল

  ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০১৮, ২১:৩৪  
আপডেট :
 ১২ নভেম্বর ২০১৮, ২১:৩৭

আসন পুনরুদ্ধার করতে চান মির্জা ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠাকুরগাঁও-১ আসনের মনোনয়নপত্র কিনেছেন। সোমবার বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে তিনি মনোনয়নপত্রটি কেনেন।

এর আগে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে ফেনী-১ আসন থেকে কারাবন্দি খালেদা জিয়ার পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ ছাড়া দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান খালেদা জিয়ার পক্ষে বগুড়া-৬ আসন থেকে মনোনয়নপত্র নেন। দ্বিতীয় নেতা হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন ঠাকুরগাঁও-১ আসন থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

ঠাকুরগাঁও-১ আসনের নিবার্চনী পরিসংখ্যান ২০০৮ সালে ৯ম জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রমেশ চন্দ্রসেন নৌকা প্রতিক নিয়ে ৫৬ হাজার ৬৯০ ভোটের ব্যাবধানে ধানের শীষ ও প্রতিকে মির্জা ফখরুলকে পরাজিত করেন। নৌকা পায় ১ লাখ ৭৭ হাজার ১০১ ভোট, ধানের শীষ পায় ১ লাখ ২০ হাজার ৪১১ ভোট। এর আগে ২০০১ সালে ৮ম সংসদ নির্বাচনে মির্জা ফখরুল ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে ৩৭ হাজার ৯৬২ ভোটে ব্যাবধানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রমেশ চন্দ্র সেনকে হারান। ধানের র্শীষ পায় ১ লাখ ৩৪ হাজার ৯১০ ভোট আর নৌকা পাায় ৯৬ হাজার ৯৪৮ ভোট। এককভাবে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নুরে আলম চৌধুরী ১৬ হাজার ৬৪৭ ভোট।

১৯৯৬ সালে ৭ম জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নৌকা প্রতীক নিয়ে খাদেমুল ইসলাম পায় ৬২ হাজার ৭০৯ ভোট। বিএনপি মির্জা ফখরুল ধানের র্শীষ প্রতীক নিয়ে পায় ৫৮ হাজার ৩৬৯ ভোট। ভোটের ব্যাবধান ৪ হাজার ৩৪০ ভোট । আলাদা নির্বাচন করে জামায়াতের রফিকুল পান ১৭ হাজার ২৪২ ভোট। তবে জামায়াতের সঙ্গে একত্রে হিসাব করলে আরও ১৪ হাজার ভোটে এগিয়ে থাকেন মির্জা ফখরূল ।

১৯৯১ সালে ৫ম জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নৌকা প্রতীক নিয়ে খাদেমুল ইসলাম পান ৫৭ হাজার ৫৩৫ ভোট। বিএনপি মির্জা ফখরুল ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পান ৩৬ হাজার ৪০৬ ভোট। ভোটের ব্যাবধান ২১ হাজার ১২৯ ভোট। তবে আলাদা ভাবে নির্বাচন করে জামায়াত প্রার্থী রফিকুল ইসলাম পান ২৬ হাজার ৮০০ ভোট। আর জাতীয় পার্টি প্রার্থী রেওয়ানুল হক ইদু চৌধুরী পান ২১ হাজার ৫০ ভোট।

মির্জা আলমগীরের রাজনৈতিক জীবন মির্জা ফখরুল বর্তমান বিএনপির মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন। ২০১১ সালের মার্চে দলের মহাসচিব খন্দকার দেলওয়ার হোসেন মৃত্যুবরণ করলে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হন। টানা পাঁচ বছর তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন। মির্জা ফখরুল এর আগে কৃষি, পর্যটন ও বেসরকারি বিমান চলাচল বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ঠাকুরগাঁও-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি অর্জন করেছেন তিনি।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের (পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন) সদস্য ছিলেন এবং সংগঠনটির এস এম হল শাখার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হযয়েছিলেন। ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের সময়ে তিনি সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ছিলেন।

ছাত্রজীবনের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও মির্জা ফখরুলের কর্মজীবন শুরু হয় শিক্ষকতায়। একাধিক সরকারি কলেজে অধ্যাপনা করেছেন তিনি। ১৯৮০’র দশকে তিনি মূলধারার রাজনীতিতে আসেন। এর আগে মির্জা ফখরুল ১৯৭০’র দশকের শেষে তৎকালীন উপ-প্রধানমন্ত্রী এস এ বারির ব্যাক্তিগত সচিব হিসেবে দাযয়িত্ব পালন করেছেন। ওই পদে তিনি ১৯৮২ সাল পর্যন্ত বহাল ছিলেন।

ছাত্রজীবনে রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার পর শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু মির্জা ফখরুলের। পরে ঠাকুরগাঁও পৌরসভায় নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বিএনপিতে যোগ দেন তিনি। তার পরিবারের রাজনৈতিক ঐতিহ্যই এ ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা রেখেছে। তার দাদা, বাবা ও দুই চাচার সবাই রাজনীতি করেছেন। এ কারণেই তিনি ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় হন। পরে দেশের উত্তরাঞ্চলের সংগঠন হিসেবে মুক্তিযুদ্ধেও অংশ নেন তিনি।

১৯৭০ সালে পাবলিক সার্ভিস কমিশনে শিক্ষকতার জন্য পরীক্ষা দিয়েছিলেন তিনি। তাতে উত্তীর্ণ হন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, এমন ধারণা করেছিলেন তিনি। সেই প্রেক্ষিতে শিক্ষকতাকেই উপযুক্ত পেশা হিসেবে বেছে নেন। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে শেষ পর্যন্ত ১৯৮৮ সালে ঠাকুরগাঁও পৌরসভার নির্বাচনের মাধ্যমে ফিরে আসেন রাজনীতিতে। তার পরের বছরই তিনি যোগ দেন বিএনপিতে।

১৯৮৯ সালে ঠাকুরগাঁও পৌরসভায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন ফখরুল। পরে বিএনপিতে যোগ দিয়ে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কাছে হেরে যান। তবে ২০০১ সালে জয়ী হওয়ার পর বিএনপি সরকারের কৃষি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান ফখরুল। তিনি সুযোগ পেলেই এলাকায় এসে ভোটারদের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করছেন। মতবিনিময়ও করছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে।

ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমান বলেন, ‘বিএনপির মহাসচিব আমাদের অভিভাবক। এই আসনে তাঁর কোনো বিকল্প নেই। সুষ্ঠু ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তিনি বিপুল ভোটে জয়ী হবেন। আর মামলার কারণে তাঁকে যখন নির্বাচনে অযোগ্য করা হবে, তখন বিকল্প প্রার্থী নিয়ে ভাবা যাবে।’ তাছাড়া বর্তমান ঠাকুরগাঁও-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাষীদের কোন্দলে মির্জা আলমগীরের জয় হতে অনেক সহজ হবে বলে তিনি জানান।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত