ঢাকা, রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১১ মিনিট আগে
শিরোনাম

সেই বজলু হাওলাদার এখন নৌকার কান্ডারি

  বরিশাল প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০১৯, ১৬:৩৫

সেই বজলু হাওলাদার এখন নৌকার কান্ডারি

বহুল আলোচিত ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বরিশাল সদর আসনের চরমোনাই ইউনিয়নের রাজারচর গ্রামে একটি হিন্দুবাড়িতে ৩ জন নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত চরমোনাই ইউনিয়ন যুবদলের তৎকালীন সভাপতি বজলু হাওলাদার বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমানে সরকারের পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীমের হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন।

এ সময়ে যোগদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সৈয়দ আনিছুর রহমান, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও বরিশাল সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু, বরিশাল সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মনিরুল ইসলাম ছবি, সাধারণ সম্পাদক হালিম রেজা মোফাজ্জেল, জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন চুন্নু, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা তারেক বিন ইসলাম, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাকসহ অন্য নেতারা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়ায় এখন স্থানীয় আওয়ামী লীগের মধ্যেই ঘটনাটি নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ হয়েছে।

২০০১ সালের ১৩ অক্টোবর রাতে বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের রাজারচর এলাকার দিনমজুর পবিত্র কুমার মিস্ত্রির বাড়িতে হামলা চালায় বজলু হাওলাদারসহ স্থানীয় বিএনপির সন্ত্রাসীরা। তারা পবিত্র কুমারে স্ত্রী, কন্যা ও বোনকে রাতভর পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পবিত্র কুমার মিস্ত্রীর কন্যাটি কিশোরী হওয়ায় গণধর্ষণের ফলে তার প্রচুর রক্তরক্ষরণ হচ্ছিল। পরের দিন ধর্ষিতাকে বরিশাল শহরে নিয়ে আসা হয়। তাকে প্রথমে স্থানীয় মহিলা পরিষদে ও পরে একজন সাংবাদিকের বাড়িতে আশ্রয় নিতে হয়। সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক তাকে সরকারি মহিলা আশ্রয় কেন্দ্রে ভর্তি করে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার ব্যবস্থা করেন। পরে পবিত্র কুমার মিস্ত্রী বজলু হাওলাদারসহ ধর্ষণের হুকুমদাতা হিসেবে চরমোনাই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আ. ছালাম রাঢ়ীসহ অন্যদের আসামি করে পবিত্র কুমার মিস্ত্রী কোতোয়ালি থানায় নারী ধর্ষণের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করে। ওই মামলার নম্বর ২৫/২০০১। তবে তৎকালীন চারদলীয় সরকারের আমলের এই মামলাটির তদন্তে পুলিশ চরম গাফিলতি দেখায়। পবিত্র কুমার মিস্ত্রীকে মামলা তুলে নিতে হুমকি প্রদান করা হয়। কিন্তু তাতেও কাজ না হওয়ায় মামলার প্রধান আসামি বজলু হাওলাদার দলবলসহ অস্ত্রের মুখে পবিত্র মিস্ত্রীর কাছ থেকে জোরপূর্বক সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে ওই স্ট্যাম্পটি আদালতে দাখিল করে মামলাটি তুলে নেয়। ঘটনার সময়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা ধর্ষকদের শাস্তি দাবি করেন।

প্রসঙ্গত, মাত্র কয়েক মাস আগে ধর্ষণের শিকার মেয়েটি সন্তান প্রসব করতে যেয়ে মারা গেছেন।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোট সরকার পরিচালনা করায় নতুন করে ফায়দা লোটার জন্য পরবর্তীতে বজলু হাওলাদার আওয়ামী লীগে যোগ দেয়ার উদ্যোগ নেয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে যুবদল নেতা বজলু হাওলাদার আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে চরমোনাই ইউনিয়ন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক গিয়াস হাওলাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। গিয়াস হাওলাদার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মির্জা আনোয়ার হোসেন ফনি, বর্তমান আহ্বায়ক নুরুল ইসলাম মাস্টারের সঙ্গে কথা বলেন। জানা যায়, তারা ঘটনাটি নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিকেও অবহিত করেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে গত ২৩ ডিসেম্বর চরমোনাই ইউনিয়নের বুখাইনগর হাইস্কুল মাঠে নির্বাচনী সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভাতেই বজলু হাওলাদার উপস্থিত আওয়ামী লীগের উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং আওয়ামী লীগ নেতারা তাকে সাদরে দলে বরণ করে নেন।

চরমোনাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্তমান আহ্বায়ক নূরুল ইসলাম মাস্টারের দাবি, বজলু হাওলাদারের আওয়ামী লীগে যোগদানের বিষয়টি সদর উপজেলার সভাপতি মনিরুল ইসলাম ছবি অবগত ছিলেন। তার পরামর্শে এটা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চরমোনাই ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মির্জা আনোয়ার হোসেন ফনি বলেন, রাজনীতিতে শেষ বলতে কোন কথা নেই। পরে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলে কাজটা ভালো হয়নি।

এ ব্যাপারে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, আমি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান হলেও রাজনীতি করি মহানগর আওয়ামী লীগে। ইউনিয়ন পর্যায়ে কে দলে যোগ দেবে সেটি পুরোপুরি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সিদ্ধান্তের বিষয়। বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম বলেন, নির্বাচনী প্রচারণার শেষ মুহূর্তে এই যোগদানের ঘটনা ঘটেছে। যোগদানকারী কোন অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল কিনা তা যাচাই-বাছাই করার সময় ছিল না। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের তার ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া উচিত ছিল। যদি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা জেনেশুনে তাকে দলে নিয়ে থাকে, তবে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোন অপরাধীর আওয়ামী লীগে স্থান নেই বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন প্রতিমন্ত্রী।

বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা ও সদ্য সমাপ্ত বিসিসি নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সুরঞ্জিত দত্ত লিটু বলেন, সংখ্যালঘু নির্যাতনকারী বজলু হাওলাদারের আওয়ামী লীগে নেয়ার আগে তার ব্যাপারে বিচার বিশ্লেষণ করা উচিত ছিল।

বজলু হাওলাদার জানান, ২০০১ সালে রাজারচরে সংখ্যালঘু ধর্ষণের ঘটনায় তাকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছিল। পরে আদালতের মাধ্যমে তিনি ওই মামলা থেকে খালাস পান। একই সঙ্গে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, শীঘ্রই চরমোনাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠন করা হবে। নতুন কমিটিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ পদ পাবেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত