সিজারে নবজাতকের মৃত্যু, ক্লিনিক মালিক গ্রেপ্তার
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০১৯, ১৪:২৯
ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডুতে অসময়ে সিজার করার ঘটনায় এক নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনার কর্মকর্তা (ইউ,এইচ এন্ড এফ,পি,ও) ডা. জামিনুর রশিদসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়। মামলা নং ১৬। বুধবার দুপুরে মৃত শিশুর ময়না তদন্ত ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে হয়েছে।
মামলার অপর আসামি স্থানীয় নিউ-রেসিডো প্রাইভেট হাসপাতালের মালিক মহিউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদিকে সিভিল সার্জন ডা. রাশিদা সুলতানা একজন গাইনি কনসালটেন্টকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। কমিটির প্রধান করা হয়েছে সদর হাসপতালের গাইনি বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. আলাউদ্দিনকে। তদন্ত কমিটিকে ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
পুলিশ জানায়, ১৯ জানুয়ারি বিকেলে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় উপজেলার হাটখোলা পাঁচলিয়া গ্রামের হারেজ উদ্দিনের ছেলে শাহাবুল হোসেনের স্ত্রী আসমা খাতুন (২৫) র্পাশ্ববর্তী হরিণাকুন্ডু উপজেলা শহরে অনুমোদনহীন নিউ রেসিডো প্রাইভেট হাসপাতাল নামের একটি ক্লিনিকে ভর্তি হন। তখন আসমা আট মাসের অন্তসত্বা। ২০ জানুয়ারি সিজার অপারেশন করা হয় তাকে। হরিণাকুন্ডু উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জামিনুর রশিদ এ অপরেশন করেন। অজ্ঞান করার ডাক্তার হিসেবে ছিলেন হরিণাকুন্ডু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আশরাফুল ইসলাম।
পুলিশ আরো জানান, অসময়ে সিজার অপারেশন করে অপরিপক্ক একটি পুত্র শিশু মায়ের গর্ভ থেকে বের করা হয়। শিশুটির অবস্থা খারাপ হলে তাকে ওই দিনই ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে শিশুটিকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সব শেষ ২২ জানুয়ারি ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ফের শিশুটিকে আনা হয়। এদিন রাত সাড়ে ৭টার দিকে মারা যায় সে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে শিশুর মরদেহসহ স্বজনরা হরিণাকুন্ডু থানায় আসেন ।
পুলিশ নিউ রেসিডো প্রাইভেট হাসপাতালে তল্লাশী চালায়। গভীর রাত পর্যন্ত থানায় মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি চলতে থাকে। শিশুর স্বজনরা সদ্যজাত শিশুর ময়না তদন্ত করতে রাজি না হওয়ায় মামলা গ্রহণে জটিলতায় পড়েন থানা পুলিশ। শেষ পর্যন্ত বুধবার (২৩ জানুযারি) দুপুরে হরিণাকুন্ডু থানার এস,আই গোলাম সরোয়ার মৃত্যু শিশুর স্বজনদের সঙ্গে নিয়ে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল মর্গে আসেন। এক পর্যায়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন করে শিশুটির ময়না তদন্ত করানো হয়।
অভিযোগ করা হয়েছে ডা. জামিনুর রশিদ প্রথম দিন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলেন গর্ভের বাচ্চা ৪ সপ্তাহ পরে ডেলিভারি হবে। অথচ পরের দিন নরমালে ডেরিভারী করানোর জন্য একটি ইনজেকশন শিশুর অভাগা মা আসমার শরীরে পুশ করানো হয়। আরো অভিযোগ করা হয়েছে এরপর থেকে সে চিৎকার-চেচামেচি করতে থাকে। দুপুর আনুমানিক ১টার দিকে ডা. জামিনুর রশিদ সিজার অপারেশন করেন। চিকিৎসায় অবহেলা করে সময় হওয়ার আগেই সিজার করার কারণে জন্ম হয় অপরিপক্ক শিশু।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ডাক্তার জামিনুর বলেন, আলট্রাসনো রিপোর্ট মোতাবেক ডেলিভারী হতে অন্তত ২৮ দিন বাকি ছিল। কিন্তু রুগীর স্বজনদের অনুরোধে সিজার করেছেন তিনি। এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন সিজার অপারেশন করে মাত্র ১৭০০ টাকা পেয়েছেন তিনি। ক্লিনিকটি অনুমোদিত দাবি করে তিনি আরো বলেন, শিশুটিকে বাচানোর জন্য চেষ্টার কোন ত্রুটি করেননি তারা।
ডাক্তার জামিনুর স্বীকার করেছেন যে, অফিস সময়ে ক্লিনিকে অপারেশন করেছেন তারা। তবে ক্লিনিক মালিক বলেছেন অন্য কথা। তিনি বলেন তার ক্লিনিকটি অনুমোদনের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে এবং সার্বক্ষনিক কোন ডাক্তার বা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কোন নার্স নেই মর্মে শিকার করেন তিনি।
সিভিল সার্জন ডা. রাশিদা সুলতানা জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। হরিণাকুন্ডু থানার ওসি মো. আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন পদস্থদের নির্দেশে মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। জড়িত ব্যক্তির বিরুদ্ধে যথাযথ ও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হরিণাকুন্ডু থানার এস.আই গোলাম সরোয়ার জানান মামলার আসামিদের মধ্যে উপজেলা শহর থেকে ক্লিনিক মালিক মহিউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের অভিযান চলছে । তিনি আরো জানান বিকেলে শিশুটিতে নিজ গ্রাম আলমডাঙ্গা উপজেলার হাটখোলা পাঁচলিয়া কবর স্থানে দাফন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ জার্নাল/এনএম
