ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

৮ হত্যাকাণ্ড

রাঙামাটিতে বিক্ষোভ, থমথমে বাঘাইছড়ি

  রাঙামাটি প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০১৯, ১৮:৪১

রাঙামাটিতে বিক্ষোভ, থমথমে বাঘাইছড়ি

বিলাইছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুরেশ কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা হত্যার প্রতিবাদে রাঙামাটিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো।

বুধবার বেরা ১১টায় রাঙামাটি পৌর প্রাঙ্গণ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি রাঙামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে।

এ সময় বক্তারা হত্যাকাণ্ডের জন্য জেএসএসকে দায়ী করেন। তারা বলেন, দোষীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা না হলে পরবর্তীতে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের রাঙামাটি জেলা সভাপতি ও রাঙামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার।

তিনি বলেন, যারা এসব হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে আর যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে এরা সন্ত্রাসের মদদ দিচ্ছে। প্রশাসনের প্রতি আস্থা রেখে দীপংকর বলেন, আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আশা করি এ ঘটনায় দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। না হলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

রাঙামাটি জেলা পরিষদের সদস্য অংসুই প্রু চৌধুরী হত্যাকাণ্ডের জন্য জেএসএসকে দায়ী করে বলেন, সন্তু লারমা সাবধান হয়ে যান। হত্যা করে আওয়ামী লীগকে ধংস করা যাবে না।

সহ-সভাপতি নিখিল কুমার চাকমা বলেন, পাহাড়ের একের পর এক হত্যাকাণ্ডের কারণে আজ কেউ নিরাপদ নয়।

সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক মুছা মাতব্বর, জেলা মহিলা লীগের সভাপতি ফিরোজা বেগম চিনু, কাপ্তাই উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অংসুচাইন চৌধুরী, রাঙামাটি সদর উপজেলার নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান শহিদুজ্জমান রোমান, সদর উপজেলার আওয়ামী লীগ সভাপতি হৃদয় রঞ্জন চাকমা।

গত মঙ্গলবার সকালে সুরেশ কান্তি তার পরিবারসহ একটি ইঞ্জিন চালিত নৌকা নিয়ে ফারুয়া থেকে বিলাইছড়ি সদরে যাচ্ছিলেন। পথে নৌকা থেকে তাকে নামিয়ে সন্ত্রাসীরা গুলি করে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই সুরেশ কান্তির মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি।

এদিকে গত সোমবার নির্বাচনী দায়িত্ব পালন শেষে ফেরার পথে সন্ত্রাসী হামলায় ৭ জন নিহত ও ১৭ জন আহতের ঘটনার পর এখনো পরিবেশ স্বাভাবিক হয়নি বাঘাইছড়িতে। বুধবার হাটের দিনেও বাজারে আসেনি পাহাড়িরা। জনমনে বিরাজ করছে আতংক। এদিকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মামলা হয়নি।

এদিকে বাঘাইছড়ি ঘটনায় প্রশাসনের গঠিত তদন্ত দল বৃহস্পতিবার বাঘাইছড়ির ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবে। স্থানীয় ব্যাক্তিবর্গ ও হামলার প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে স্বাক্ষাত করবে তদন্ত দল। গত মঙ্গলবার গঠিত তদন্ত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন ১০ কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে।

জেএসএসের বিবৃতি

বাঘাইছড়ি ও বিলাইছড়ির হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জেএসএস (জনসংহতি সমিতি) কে দায়ী করায় বিবৃতি দিয়েছে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি। কমিটির তথ্য প্রচার বিভাগের বিনয় কুমার ত্রিপুরার স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়

গত ১৮ মার্চ উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পরেই অজ্ঞাতনামা অস্ত্রধারী কর্তৃক বাঘাইছড়ির নয় মাইল এলাকায় ব্রাশ ফায়ার করে ৮ জন নিরীহ নির্বাচন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে হত্যা ও অনেককে আহত করা হয়।

এছাড়া গত ১৯ মার্চ সকালে বিলাইছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুরেশ তঞ্চঙ্গ্যাকে কে বা কারা গুলি করে হত্যার ঘটনায় বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও টিভি চ্যানেলে মনগড়া, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও প্রতিহিংসামূলকভাবে জেএসএসকে দায়ী করায় জেএসএস গভীর উদ্বেগ ও তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে। ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়ার আগেই মনগড়া ও কাল্পনিকভাবে জেএসএসকে দায়ী করে বক্তব্য প্রদান কোনোভাবেই যুক্তি ও বাস্তবসম্মত হতে পারে না। এ ধরনের বক্তব্য প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করে সুষ্ঠু তদন্তকে যেমনি বাধাগ্রস্ত করবে, তেমনি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দেবে। এসব ঘটনায় জেএসএস কোনভাবে জড়িত নয়।

এ সহিংস ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রকৃত অপরাধীদের যথাযথ বিচারের দাবি জানিয়ে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের শোক-সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করছে জেএসএস এবং আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।

প্রসঙ্গত, সোমবার সন্ধ্যায় নির্বাচনী দায়িত্ব পালন শেষে বাঘাইছড়িতে ফিরছিলেন কংলাক, রুইলুই, মাচালং ভোট কেন্দ্রের দায়িত্বপালন করা নির্বাচনী কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বাহিনীরা। তাদের গাড়ি বহর দিঘিনালা-বাঘাইছড়ি সড়কের ৯ কিলো এলাকায় পৌছলে সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি ব্রাশফায়ার করে। এতে ৬ জন নিহত ও চট্টগ্রাম নেয়ার পথে ১ জন নিহত হয়। এছাড়া আহত হয় আরো ১৭ জন। তাদেরকে চট্টগ্রাম ও ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

ওই ঘটনার একদিন পর বিলাইছড়ির ফারুয়ায় গুলি করে খুন করা হয় উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সুরেশ কান্তি তঞ্চঙ্গ্যাকে। এ সময় সুরেশ কান্তি পরিবার নিয়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকা যোগে ফারুয়া থেকে বিলাইছড়ি সদরে আসছিলেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত