ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

তারা কখনো ওসি, কখনো এডিসি!

  রাজবাড়ী প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২১ এপ্রিল ২০১৯, ০০:১৪  
আপডেট :
 ২১ এপ্রিল ২০১৯, ০০:১৬

তারা কখনো ওসি, কখনো এডিসি!

কখনো ওসি, কখনো ইউএনও আবার কখনো এডিসি, ডিসি, এসপির ফোন নম্বর ক্লোন (বিশেষ প্রযুক্তি) করে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে ফোন করে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করাই তাদের পেশা। অত্যন্ত চতুর এই চক্রের খপ্পরে পড়ে সম্প্রতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন গোয়ালন্দের বেশ কয়েকজন। গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশ দীর্ঘ অনুসন্ধান চালিয়ে প্রতারক এই চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, লালমনিরহাট সদর উপজেলার সাপটানা মদনের চক গ্রামের আ. হামিদের ছেলে শিপুল ইসলাম (২৫), ইটাপোতা গ্রামের শাহজাহান আলীর ছেলে আশরাফুল আলম আশিক (২৪) ও আদিতমারী উপজেলার বড় কমলাবাড়ি গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে শামীম আলী (৩৮)।

জানা গেছে, গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি এজাজ শফির সরকারি ফোন নম্বর ক্লোন করে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে একাধিক প্রার্থী ও সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন প্রলোভনে ফেলে কয়েক লাখ টাকা বিকাশের মাধ্যমে হাতিয়ে নেয় একটি চক্র। এ বিষয়ে একাধিক অভিযোগ দায়ের হয় গোয়ালন্দ ঘাট থানায়। এ প্রেক্ষিতে এই চক্রকে পাকড়াও করতে মাঠে নামে পুলিশ।

পুলিশ সূত্র জানায়, তদন্তের শুরুতে টাকা আদায় করা বিকাশ অ্যাকাউন্টগুলো বিকাশ হেড অফিসে আবেদন করে ফ্রিজ করা হয়। এরপর মোবাইল ট্র্যাকিং ও অ্যাকাউন্ট খোলা বিকাশ এজেন্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্রের মানুষদের অনুসন্ধান করে অবস্থান নিশ্চিত হয় পুলিশ।

লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন স্থানে গত তিনদিন গোয়ালন্দ ঘাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ অভিযান চালিয়ে বিকাশ প্রতারক চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে বিকাশ অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে তাদের মধ্যে দুইজন হতদরিদ্র নিরীহ মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়।

এ চক্রের প্রতারণার শিকার গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ জানান, গত ২১ মার্চ তার ফোনে গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসির সরকারি নম্বর থেকে ফোন আসে। এ সময় তাকে বলা হয় নির্বাচন নিয়ে তারা ডিসি অফিসে জরুরি বৈঠকে বসেছেন, এডিসি স্যার আপনার সঙ্গে কথা বলবেন। ওসি সাহেব আমাকে এডিসি স্যারের ব্যক্তিগত নম্বরে দিয়ে তাকে এখনই ফোন করতে বলেন।

তিনি বলেন, ওসির নম্বর থেকে ফোন আসায় তিনি কোনো সন্দেহ না করে দ্রুত ওই নম্বরে ফোন করেন। এ সময় কথিত এডিসি বলেন, নির্বাচনী মাঠে আপনার অবস্থা মোটামুটি ভালো। এ পরিস্থিতিতে প্রশাসন আপনার পক্ষে কাজ করলে আপনার বিজয় নিশ্চিত। তাই মিষ্টি খাওয়ার খরচ বাবদ এই মুহূর্তে বিকাশের মাধ্যমে এক লাখ টাকা পাঠান।

আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ সময় আমি অনুরোধ করে বলি, আজ ব্যাংক বন্ধ এক লাখ টাকা দিতে পারব না। আপাতত ৫০ হাজার টাকা দিচ্ছি। এই কথা বলে আমার মেয়ের গহনা বন্ধক রেখে দ্রুত ৫০ হাজার টাকা নিয়ে বিকাশের মাধ্যমে সেই টাকা পাঠিয়ে দেই। এর কিছুক্ষণ পর ওই চক্র আরও ৫০ হাজার টাকা দাবি করলে তার সন্দেহ হয়। খোঁজ নিয়ে তিনি বুঝতে পারেন তিনি প্রতারিত হয়েছেন।

একই ঘটনা আরেকজন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর সঙ্গে ঘটলেও তিনি নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক।

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে নিয়ে আসা লালমনিরহাট সদর উপজেলার বনগ্রামের দিনমজুর ভোলা মিয়া (২৮) জানান, তার মা কদভানু বিবির বয়স্ক ভাতার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নমিনি হিসেবে তার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপির প্রয়োজন হয়। তাই তিনি তার জাতীয় পরিচয়পত্র আশরাফুল আলম আশিকের ফটোকপির দোকানে যান।

তিনি জানান, আশিক কৌশলে তার জাতীয় পরিচয়পত্রের একটি ফটোকপি রেখে দেয়। পরবর্তীতে সেটা দিয়ে বিকাশ অ্যাকাউন্ট খুলে প্রতারণার কাজে ব্যবহার করে তাকে বিপদে ফেলেছে।

গোয়ালন্দ ঘাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম জানান, এই প্রতারক চক্রটি ফোন নম্বর ক্লোন করে ওসি, ইউএনও, এডিসি, ডিসি, এসপি সেজে ফোন করে মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে। প্রতারনার শিকার একাধিক ব্যক্তি থানায় জিডিসহ ক্ষতিগ্রস্ত আবুল কালাম আজাদ প্রতারকচক্রের ৬ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।

আমিনুল ইসলাম জানান, গ্রেপ্তারকৃত ৩ আসামিকে শনিবার রাজবাড়ীর আদালতে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

এনএইচ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত