ঢাকা, রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

উন্নয়ন কর্মসূচিতে নয়ছয়

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০১:০৪

উন্নয়ন কর্মসূচিতে নয়ছয়

স্থানীয় সরকার পর্যায়ে বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের (এডিপি) বেশির ভাগ কাজই অর্থবছরের শেষ সময়ে জুন মাসে একযোগে তড়িঘড়ি করা হয়। ফলে প্রকল্পের কাজ তদারকিসহ কাজের গুণগতমান নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। এ সংকট নিরসনে এডিপি বাস্তবায়নে উপজেলা পরিষদের জন্য ৭ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সমপ্রতি মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা লিখিতভাবে ডিসি ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, প্রতি অর্থবছরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে উপজেলা পরিষদে যে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয় তার বেশির ভাগ কাজ অর্থবছরের শেষদিকে জোড়াতালি দিয়ে খরচ করা হয়। এমনকি কাজ না করেও অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ আছে অহরহ। তদন্তে এ ধরনের অনেক অভিযোগ ইতিপূর্বে প্রমাণিত হয়েছে। এমন চিত্র শুধু উপজেলা পরিষদের ক্ষেত্রে নয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উন্নয়নকাজ সংশ্লিষ্ট এলজিইডি, জেলা পরিষদ ও পৌরসভার ক্ষেত্রেও কমবেশি একই অভিযোগ। এ জন্য বহুদিন থেকেই জুন ফাইনালের মহোৎসব বলে নেতিবাচক কথা সমাজে প্রচলিত আছে। তাছাড়া অর্থবছরের শেষদিকে তড়িঘড়ি অর্থছাড় করার সংস্কৃতিও দেশে বিদ্যমান। এমন পরিস্থিতিতে শত চেষ্টা করেও স্থানীয় সরকার বিভাগের অনেক প্রতিষ্ঠান সব টাকা খরচ করতে পারে না। খরচ করতে না পারলে যথারীতি ৩০ জুনের পর অব্যয়িত অর্থ ফেরত চলে যায়। এমন তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে এডিপির কাজের অগ্রগতি যথাযথভাবে মনিটরিং করতে সম্প্রতি স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে শক্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, স্থানীয় সরকার পর্যায়ের সবাইকে প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রকল্পে অনিয়ম, দুর্নীতি ও দায়িত্বহীনতা রোধকল্পে নিজেই ক্লোজ মনিটরিং শুরু করা হয়েছে। ইতিমধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে ডিসি এবং উপজেলা চেয়ারম্যানদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠির এক স্থানে বলা হয়, অর্থবছরের শেষ সময়ে জুন মাসে একযোগে তড়িঘড়ি করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করার ফলে প্রকল্পের কাজ তদারকি করাসহ কাজের গুণগতমান নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। তাতে আরও বলা হয়, ২০১৪ সালের ১০ নভেম্বর জারিকৃত ‘উপজেলা উন্নয়ন তহবিল ব্যবহার নির্দেশিকা’ জারি করা হয়। তাতে এডিপির অর্থায়নে উপজেলা পরিষদ কর্তৃক চলতি অর্থবছরের (২০১৯-২০) প্রকল্প গ্রহণের শেষ সময় ৩১ মার্চ। এ ছাড়া গৃহীত উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের শেষ সময় ৩১ মে।

সূত্র আরও জানায়, কতিপয় উপজেলা পরিষদ বিদ্যমান নির্দেশিকা অনুসরণে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন না করায় এডিপির বরাদ্দকৃত অর্থের অংশবিশেষ অব্যয়িত থাকছে। ওই অর্থ নিয়মানুযায়ী ৩০ জুনের মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সমর্পণ হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে এক হিসাবে দেখা গেছে, গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এডিপির উন্নয়নসহায়তা খাতে বরাদ্দকৃত ৫৫০ কোটি টাকার মধ্যে ২১ কোটি ২৫ লাখ টাকা অব্যয়িত অবস্থায় ফেরত কিংবা সমর্পণ হয়েছে। এমন অবস্থায় বরাদ্দকৃত অর্থ যথাসময়ে যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে ৭ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সেগুলো হলো— অর্থবছরের ৩১ মার্চের মধ্যে উপজেলা পরিষদের প্রকল্প গ্রহণ ও চূড়ান্ত তালিকা করতে হবে। ৩০ অক্টোবরের মধ্যে গৃহীত ও চূড়ান্ত প্রকল্প তালিকা ডিডিএলজির কাছে পাঠাতে হবে। প্রথম কিস্তিতে প্রাপ্ত অর্থের ৪ গুণ প্লাস ১০ শতাংশের অধিক অর্থের মধ্যে প্রকল্প গ্রহণ ও ৩১ জানুয়ারির মধ্যে প্রকল্পের দরপত্র কার্যক্রম শেষ করতে হবে। গৃহীত প্রকল্প বাস্তবায়নে দ্বিতীয় কিস্তি পর্যন্ত প্রাপ্ত অর্থের ব্যয় সম্পর্কিত প্রতিবেদন ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ডিডিএলজি বরাবর পাঠাতে হবে। যেসব উপজেলা পরিষদ দ্বিতীয় কিস্তি পর্যন্ত প্রাপ্ত অর্থ ব্যয় করতে সক্ষম হবে না, সেসব উপজেলাকে চতুর্থ কিস্তির বরাদ্দ কর্তন করা হবে। এ ক্ষেত্রে যেসব উপজেলায় কাজের গতি আশাব্যঞ্জক তাদের কোনো বিশেষ প্রকল্পে এই কর্তন করা অর্থ বিশেষ বরাদ্দ হিসেবে প্রদান করা হবে। সবশেষে প্রতিটি প্রকল্পের কাজ অর্থবছরের ৩১ মের মধ্যে শেষ করতে হবে। তবে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে অর্থ বরাদ্দ না পাওয়া পর্যন্ত ঠিকাদারের অনুকূলে কোনো কার্যাদেশ দেয়া যাবে না। যেসব উপজেলা পরিষদ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিধি অনুযায়ী এডিপির অর্থ বরাদ্দ শেষ করতে পারবে না, সেসব উপজেলা পরিষদকে ভবিষ্যতে অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে তাদের অপারগতা ও ব্যর্থতার বিষয়টি বিবেচনায় আনা হবে।

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উপজেলা অধিশাখা) অভিতাভ সরকার জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। যাতে প্রতিটি প্রকল্প দরপত্র শিডিউল অনুযায়ী যথাসময়ে শতভাগ মান নিশ্চিত করে বাস্তবায়ন হয়, সে বিষয়টির প্রতি জোর দেয়া হচ্ছে। এ জন্য শুধু নির্দেশনা দিয়ে আমরা বসে থাকছি না, নানাভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কারও কোনো গাফিলতি প্রমাণিত হলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত