ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

স্মৃতিচারণে যেসব কথা বললেন রাষ্ট্রপতি

  কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৯ অক্টোবর ২০১৯, ১৯:৩৯

স্মৃতিচারণে যেসব কথা বললেন রাষ্ট্রপতি

দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের চলমান অভিযানকে প্রশংসনী উদ্যোগ উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, যে হারে বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধি, অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নতি হচ্ছে, কিন্তু দুর্নীতির সাথে পাল্লা দিয়ে টিকতে পারছে না। দুর্নীতির লাগাম এখনই টেনে ধরতে হবে, দুর্নীতিকে এখনই থামাতে হবে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, তার নিজের ঘর থেকে আগে শুরু করতে হবে। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ বলুন অর্থাৎ যে যে দলই করুক না কেন, দুর্নীতি যে করবে তাদেরকে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। আমি বিশ্বাস করি, যদি আমরা দেশকে মোটামুটি দুর্নীতিমুক্ত করতে পারি, তাহলে আমরা অনেক বেশি এগিয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ। এটি নিয়ে কোনো সন্দেহ নাই।

বুধবার নিজ জেলা কিশোরগঞ্জে সাতদিনের সফরের প্রথম দিন বিকালে তাড়াইল মুক্তিযোদ্ধা সরকারি কলেজ মাঠে তাড়াইল নাগরিক কমিটি আয়োজিত এক সুধি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন।

সমাবেশে জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি বলেন, আপনাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমি যেটা বলতে চাই। আপনারা যারা জনগণের প্রতিনিধি, জনগণ অনেক আশা করে আপনাদের ভোট দিয়েছে। যে যে অবস্থানে আছেন, সে অবস্থানে থেকে মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করবেন। তাদের কথা শুনবেন। যতটুকু সম্ভব তাদেরকে ইজ্জত দিবেন। ইলেকশনে পাশ করার পরই যদি চেহারা বের হয়ে যায়, স্বরূপ বের হয়ে যায়, আমি মনে করি, এটা খারাপ দিক। নির্বাচনের সময় মানুষের সাথে যে রকম আচরণ করা হয়, নির্বাচনের পরও একই রকম আচরণ করা হলে মানুষ খুশি হবে। মানুষ দোয়া করবে।

তিনি তাঁর নিজের ‘ভাটির শার্দুল’ উপাধি পাওয়া প্রসঙ্গে বলেন, তাড়াইলে আমার বহুকালের অনেক স্মৃতি রয়েছে। ছাত্রজীবনে সর্বপ্রথম তাড়াইলে আমি জনসভা করেছি। সেটা তাড়াইলের পুরুড়া হাইস্কুলে। ১৯৬৯ সালে তখন ছাত্র আন্দোলন গণআন্দোলনে রূপ নিল। পুরুড়া হাইস্কুলের আব্দুর রাশিদ আমার কাছে এসে বললো, হামিদ ভাই, পুরুড়া হাইস্কুলে আমরা একটি জনসভা করতে চাই। তো আমরা তো ছাত্রসভা করেছি, জনসভা জীবনে করিনি। তখন রাশিদ বললো, ঢাকা থেকে বড় নেতা আনতে হবে। ’৬৯ এর গণআন্দোলনের সময় ঢাকা থেকে কোনো নেতা যে এখানে এসে মিটিং করবে, বক্তব্য দেয়ার জন্য আসবে, সে পরিস্থিতিতে সেটা সম্ভব ছিল না।

তখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মহিউদ্দিন সাহেব। রাশিদকে নিয়ে গেলাম। তিনি বললেন, তুমি বড় নেতা খুঁজতেছো, আমাদের হামিদ কি কম বড় নেতা নাকি? তাকে নিয়ে যাও। একথা বলার পর রাশিদ বললো, টাইটেল কি দিবো? তিনি বললেন, নাম লেখবা, টাইটেল লাগবে কেন? আর যদি টাইটেল দিতে চাও লেখবা, ‘ভবিষ্যৎ মন্ত্রী’। আমি বললাম ‘ভবিষ্যৎ মন্ত্রী’ এটা কেন লেখবা, এটা লেখা যাবে না।

তখন মহিউদ্দিন সাহেব বললেন, ব্যাটা, শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের বঙ্গশার্দুল। তিনি তখন বঙ্গবন্ধু টাইটেল পাননি, তাকে বঙ্গশার্দুল ডাকা হতো। তোমাদের তাড়াইলও ভাটি, হামিদের বাড়িও ভাটি। সে হলো ‘ভাটির শার্দুল’।

রাষ্ট্রপতি স্মৃতিচারণ করে বলেন, সেই পুরুড়া হাইস্কুল মাঠে তখন লক্ষাধিক লোকের সমাগম হয়েছিল। সেখানে আমি একাই সোয়া দুই ঘণ্টা বক্তব্য দিয়েছিলাম।

মিটিং শেষে যখন রাস্তায় মানুষজনের সাথে দেখা হয়, মুরুব্বীরাও তখন সালাম দেয় আর বলেন, ‘ভাটির শার্দুল’ সাব আপনি কেমন আছেন? তখন জানতাম না, ’৭০ এ আমি ইলেকশন করব। ’৭০ এ যখন ইলেকশন করলাম তখন দেখা গেল, পোস্টারের মধ্যেও একই টাইটেল। তখন আমি অ্যাডভোকেটও হইনি। পোস্টারে লেখা হয়, প্রার্থী ভাটির শার্দুল মো. আবদুল হামিদকে ভোট দিন। এই হয়ে গেলাম ‘ভাটির শার্দুল’। ‘ভাটির শার্দুল’ উপাধিটা আমার তাড়াইল থেকেই পাওয়া, তাড়াইল থেকেই দেয়া, তাড়াইল থেকেই শুরু।

রাষ্ট্রপতি ১৯৭০ সালে প্রথম নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হওয়া প্রসঙ্গে বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকা ছিল ইটনা, অষ্টগ্রাম, নিকলী ও তাড়াইল এই চারটি থানা। মিঠামইন তখন পূর্ণাঙ্গ থানা হয়নি। আমি ভোটের দিকে চার থানার মধ্যে তাড়াইলের প্রথম হয়েছিলাম। সুতরাং তাড়াইলের সাথে আমার আলাদা একটি সম্পর্ক রয়েছে। সারাজীবন এটা আমার মনে আছে এবং মনে থাকবে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে আমি আপনাদের সহযোগিতা পেয়েছি। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, সব দলের মানুষের সহযোগিতা পেয়েছি।

আমি আজকে এসেছি বক্তব্য দেয়ার জন্য নয়, আপনাদের দেখার জন্য এসেছি। বক্তব্য দেবেন যারা রাজনীতি করেন তারা। আমি এখন রাজনীতি করি না। আমি সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানাতে আজকে এসেছি।

নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব ও তাড়াইল উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আজিজুল হক ভূঁইয়া মোতাহারেরর পরিচালনায়, কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নুর সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে কিশোরগঞ্জ-৫ (বাজিতপুর-নিকলী) আসনের সংসদ সদস্য মো. আফজাল হোসেন, কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতি পুত্র রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী, পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ আফজল, তাড়াইল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জহিরুল ইসলাম ভূঞা শাহীন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন লাকী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে নিজ জেলা কিশোরগঞ্জে সাতদিনের রাষ্ট্রীয় সফরের প্রথম দিন বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে তাড়াইল উপজেলার শামুকজানি মাঠের হেলিপ্যাডে অবতরণ করেন। হেলিপ্যাড থেকে তিনি উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে যান। সেখানে রাষ্ট্রপতিকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।

পরে তিনি উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে নবনির্মিত স্বাধীনতা ‘৭১ ভাস্কর্য উদ্বোধন করেন। উদ্বোধন শেষে তিনি সুধি সমাবেশে যোগ দেন। সুধি সমাবেশ শেষে বিকালে রাষ্ট্রপতি কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের উদ্দেশ্যে তাড়াইল ত্যাগ করেন। আগামী ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত তিনি তাড়াইল ও কিশোরগঞ্জ সদর ও নিজের সাবেক সংসদীয় এলাকার তিন উপজেলা মিঠামইন, ইটনা ও অষ্টগ্রাম সফর করবেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত