ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১০ মিনিট আগে
শিরোনাম

সুখবর নেই পেঁয়াজে

  পাবনা প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৯:০৮

সুখবর নেই পেঁয়াজে

পেঁয়াজের রাজধানী খ্যাত পাবনার হাট বাজারে পেঁয়াজের অভাব। তাই অপক্ক পেঁয়াজ থেকে শুরু থেকে পেঁয়াজের কান্ড-পাতা, ফুল সবই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। গত মওসুমে ঘরে তোলার আগ মুহুর্তে শিলা বৃষ্টির কারনে কৃষকের অর্ধেকের বেশী পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণেই দেশীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায় বলে মনে করছেন চাষী ও কৃষি কর্মকর্তারা।

সীমিত পরিমাণ মূলকাটা পেঁয়াজ বাজারে উঠলেও তা ক্রেতাদের চাহিদা পূরণ করতে পারছেনা। কাজেই অন্তত আরো এক সপ্তাহের আগে পেঁয়াজের কোন কোন সুখবর নেই বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তা এবং পেঁয়াজ চাষীরা।

পেঁয়াজের রাজধানী খ্যাত পাবনার সুজানগর ও সাঁথিয়ার হাটে এখনো পর্যাপ্ত পেঁয়াজ নেই। গত মওসুমে (হালি) পেঁয়াজ ঘরে তোলার আগ মুহুর্তে শিলা বৃষ্টির কবলে পড়ায় কৃষকের অর্ধেকের বেশী পেঁয়াজ পচে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তারা পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারেনি। এ কারণেই দেশীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায় বলে পেঁয়াজ চাষী ও ব্যাপারীরা জানিয়েছেন।

গত দু’দিন পাবনার বড় হাট সুজানগর এবং বনগ্রামে হাটে নতুন পেঁয়াজ খুচরা ১৬০ টাকা থেকে ১৭০ টাকা এবং পুরাতন পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২২০ থেকে ২২৫ টাকা কেজি দরে।

বৃহস্পতিবার(৫ ডিসেম্বর) পাবনা শহরে নতুন পেঁয়াজ খুচরা ১৭০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো: আজাহার আলী জানান, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী জেলা পাবনা। গত বছর জেলার ৯ উপজেলায় পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ৬ লক্ষ ৫৩ হাজার ৯৫০ মেট্টিক টন। এর মধ্যে শুধুমাত্র সুজানগর উপজেলাতেই উৎপাদন হয় প্রায় আড়াই লক্ষ মেট্টিক টন পেঁয়াজ।

অবশ্য এবারেও প্রায়ে সাড়ে ৫ লক্ষ মেট্টিক টন পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত মওসুমে পেঁয়াজ ঘরে তোলার সময়ে এবং ক্ষেতে থাকা অবস্থায় দু’দফা শিলা বৃষ্টির কবলে পড়ায় কৃষকের অর্ধেকের বেশী পেঁয়াজ পচে নষ্ট হয়ে যায়। পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে না পারায় স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের আমদানি কমে যায়। আর এ কারণেই সাম্প্রতিক সময়ে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে।

উত্তরাঞ্চলের বৃহৎ পেঁয়াজের হাট সুজানগর ও সাঁথিয়ার বনগ্রাম হাটে গিয়ে দেখা যায়, পেঁয়াজ না পেয়ে ব্যাপারীরা ফিরে যাচ্ছেন।

ব্যাপারী নজরুল ইসলাম জানান, বনগ্রাম হাটে প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবারে ২০ থেকে ২৫ ট্রাক পেঁয়াজ বিক্রি হয় এবং তিনি নিজে ৩ ট্রাক করে পেঁয়াজ কিনে রাজধানীসহ অন্যান্য স্থানে নিয়ে যান। কিন্ত এখন আড়তে পেঁয়াজ না থাকায় মাত্র ২০ মন পেঁয়াজ কিনতে পেরেছেন।

তিনি জানান, মঙ্গলবার তিনি নতুন পেঁয়াজ ছয় হাজার থেকে সাড়ে ছয় হাজার এবং পুরাতন পেঁয়াজ প্রতি মন ৮ হাজার থেকে সাড়ে ৮ হাজার টাকা হিসেবে কেনেন।

সাঁথিয়ার বৃহৎ সুজানগর হাটেও দেখা যায় একই চিত্র। হাটের ব্যাপারী বিঞ্চুপদ সাহার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, সকাল থেকে বসে আছি। পর্যাপ্ত পেঁয়াজ নেই। সামান্য কয়েক মন মূলকাটা পেঁয়াজ এনেছিল কৃষকরা। কয়েকজন ভাগ করে নিয়েছি। তিনি এও বলেন, পেঁয়াজের দাম ওঠা নামা করায় তারা লোকসানের মুখে পড়বেন।

সুজানগর পৌর মেয়র ও ভায়না গ্রামের বড় পেঁয়াজ চাষী আব্দুল ওহাব বলেন, তারও ১২০০ মন পেঁয়াজের মধ্যে ৬০০ মন পেঁয়াজ পচে গেছে।

তিনি বলেন, সুজানগর পেঁয়াজ হাটে এখন পেঁয়াজ নেই। বাস্তবতা বিবেচনা করে হাটের খাজনা নেয়া নিষেধ করা হয়েছে।

এদিকে এ অঞ্চলের পেঁয়াজ চাষী এবং কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, মওসুমের হালি পেঁয়াজ বাজারে আসার আগে বাজার স্বাভাবিক রাখে মূলকাটা পেঁয়াজ। কিন্ত এবারেও অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে টানা বৃষ্টির কারণে মূলকাটা পেঁয়াজ তারা নাবিতে রোপন করেন। প্রতি বছর এসময়ে বাজারে মূলকাটা পেঁয়াজ পাওয়া যায়। এজন্য দামও স্বাভাবিক থাকে। কিন্ত এবারে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে নাবি হয়েছে। তবে আগামি এক সপ্তাহের মধ্যে মূলকাটা পেঁয়াজ পুরোপুরি বাজারে আসলে পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারে। কিন্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে নাবিতে লাগানো মূলকাটা পেঁয়াজ নিয়েও শংঙ্কিত এখানকার কৃষক।

সুজানগর উপজেলার গোপালনপরের কৃষক আলাউদ্দিন বলেন, উচ্চ দামে বীজ কিনে তিনি ৪ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ রোপন করেছেন। এতে প্রতি বিঘায় খরচ পড়েছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। মূলকাটা পেঁয়াজ ওঠার পর দাম কমে গেলে তার বিপুল পরিমাণ টাকা লোকসান হবে। এ নিয়ে তিনি দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

চরমানিকদিয়ার গ্রামের কৃষক শফিক প্রামাণিকও বলেন একই কথা। তিনি প্রতি বছর মওসুমি ও মূলকাটা মিলে ২০/৩০ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেন। গত বছর উৎপাদিত অর্ধেক পেঁয়াজ পচে গেছে। এবার মূলকাটা পেঁয়াজ দিয়ে পুষিয়ে নিতে না পারলে যারপরনাই ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।

চাষীরা আরো জানান, আগাম এই পেঁয়াজ চাষ করে কৃষক একদিকে যেমন লাভবান হন, অন্যদিকে এই পেঁয়াজ বাজারের ভারসাম্যও রক্ষা করে থাকে। কিন্ত এবারে সে সম্ভাবনা ভেস্তে গেছে।

সুজানগরের চাষিরা জানান, পদ্মায় আকস্মিক পানি বেড়ে জমি জলমগ্ন হয়ে কৃষককে প্রথম দফায় ক্ষতির মুখে ফেলে। এরপর ২ সপ্তাহের মধ্যে জমিতে জো আসায় অনেক কৃষকই মাঠের জমি প্রস্তুত করে পেঁয়াজ রোপণের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিলেন। অনেকে রোপনও করেছিলেন। কিন্ত গত ২৩ অক্টোবর থেকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে টানা কয়েকদিন বৃষ্টি হওয়ায় জমিতে রোপণকৃত পেঁয়াজের জমিতে পানি জমে যায়। পঁচন ধরে রোপনকৃত পেঁয়াজে। ব্যাপক ক্ষতির শিকার হন কৃষকরা।

সুজানগর উপজেলার ভাঁয়না ইউনিয়নের চর বিশ্বনাথপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল বারেক জানান, ৪ হাজার ২০০ টাকা মণ হিসাবে ৭ মণ পেঁয়াজ কিনে ১ বিঘা জমিতে রোপণ করেছিলাম। কিন্তু টানা বৃষ্টির ফলে জমির সব পেঁয়াজ পঁচে গেছে। এখন আর করার কিছুই নেই।

সুজানগর উপজেলার উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান, আগে যেখানে বিঘা প্রতি ২৫ থেকে ৩০ মন পেঁয়াজ উৎপাদন হতো, এখন কৃষি বিভাগের পরামর্শে আধুনিক চাষাবাদ করায় বিঘা প্রতি ৫০ থেকে ৬০ মন পেয়াজ উৎপাদন হচ্ছে। কিন্ত গত মওসুমে কৃষকরা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। অর্ধেক পেঁয়াজ পচে গেছে। এবারেও মৌসুমে (হালি) দু’লক্ষাধিক মেট্টিক টন পেঁয়াজ উৎপাদনের আশা করছি।

তিনি বলেন, প্রতি বছর এই উপজেলার কৃষকরা মূলকাটা পেঁয়াজ রোপনের পর নভেম্বরের ২য় সপ্তাহ থেকে আবার জমি থেকে তুলে বিক্রি করেন। এ বছর সুজানগর উপজেলায় নতুন মূলকাটা পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে। কিন্তু অসময়ে হঠাৎ করে টানা বৃষ্টিতে জমিতে রোপণকৃত পেঁয়াজ নষ্ট হওয়ায় এবং পেঁয়াজ রোপনের জন্য প্রস্তুতকৃত অনেক জমিতে পানি জমে যাওয়ায় এবারে নাবিতে মূলকাটা পেঁয়াজ রোপন করেন। কাজেই আরো ১ সপ্তাহ পরে আশা করছি মূলকাটা পেঁয়াজ বাজারে আসবে। কাজেই শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পাবনার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আজাহার আলী জানান, আগামী এক সপ্তাহর মধ্যে মূলকাটা পেঁয়াজ পুরাপুরি বাজারে উঠবে। এতে দাম স্বাভাবিক হবে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসবি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত