ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

যুগোপযোগী হচ্ছে ডাক আইন

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০১৯, ২০:২০

যুগোপযোগী হচ্ছে ডাক আইন

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ডাক পরিবহন, মেইলিং অপারেট এবং কুরিয়ার সার্ভিস পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি আইন প্রণয়ন করছে সরকার। ১৮৯৮ সাল থেকে নিয়ে এবারই প্রথম আইনটি পরিপূর্ণভাবে যুগোযোগী করা হচ্ছে। যদিও ২০১০ সালে আইনটির কিছু কিছু ধারা সংশোধন করা হয়েছিলো।

সংশোধিত ডাক আইনে রেমিট্যান্স ট্রান্সফার সেবা, ব্যাংকিং সেবা, ডাক জীবণ বীমা সেবা দেবে ডাক বিভাগ। বর্তমানে শুধু ডাক সঞ্চয় ব্যাংক ও জাতীয় স্বঞ্চয়পত্র সেবা প্রদান করছে ডাক বিভাগ। নতুন করে ডাক সঞ্চয় ব্যাংকের নাম রাখা হবে পোস্ট ব্যাংক। সব ধরনেরর প্রতিবন্ধী ব্যক্তির যাবতীয় প্রকৃতির শিক্ষা সামগ্রী ডাক অধিদপ্তর বিনামূল্যে গ্রহণ ও বিতরণ করবে। তবে একটি নীতিমালা তৈরি করে তা করা হবে। যেখানে সেখানে ডাক বহনকারী যানবাহন থামানো যাবে না। নির্ধারিত গন্তব্যে পৌছলে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি, শুল্ক গোয়েন্দা অথবা সরকারের এখতিয়ার সম্পন্ন ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে ডাক বহণকারি যাবাহন তল্লাশি করা যাবে। আইন ভাঙ্গলে থাকছে কঠোর শাস্তির বিধান।

দুর্যোগের সময় বিনামূল্যে ত্রাণ সামগ্রী বহন করবে ডাক বিভাগ। ডাক দ্রব্য বীমার আওতায় আনা হবে। ডাক দ্রব্য হারানো গেলে প্রেরককে বীমার টাকার সমপরিমাণ অর্থ ফেরত দেবে সরকার। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে ইলেক্ট্রনিক মানি ট্রান্সফার (ইএমটিএস) এককভাবে ডাক বিভাগ অথবা সরকারি, বেসরকারি দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে পরিচলনা করবে। কোনো ধরনের বিস্ফোরক পদার্থ, বিপদজ্জনক, নোংরা বিষাক্ত বা ক্ষতিকর কোনো বস্তু এবং জীবন্ত প্রাণি ডাক যোগে পাঠানো যাবে না। অশ্লীল, কুরুচিপূর্ণ মুদ্রণ, স্থিরচিত্র, ভিডিও চিত্র, সিডি, ডিভিডি, ফটোগ্রাফ, খোদাইকৃত দ্রব্য ডাক যোযোগে পাঠানো যাবে না। ডাকদ্রব্যের উপরের আবরণের ওপর রাষ্ট্রবিরোধী, বিদ্রুপাত্মক, হুমকি বা আক্রমণাত্মক কোনো শব্দ, চিত্র বা নকশা ব্যবহার করা যাবে না।

সাম্প্রদায়িক উস্কানি, শ্রেণিবৈষম্য, ধর্মীয় অনভূমিতে আঘাত হানে অনুরুপ, ব্যক্তি, সমাজ ও প্রতিষ্ঠানের জন্য অবমাননাকর এবং রাজনৈতিক বিদ্ধেষপ্রসুত বক্তব্যসংম্বলিত লেখা, অডিও, ভিডিও, হাতের লেখা ডাকযোগে পাঠানো যাবে না। অতি সহজে বিনষ্ট হয় বা অরক্ষিত কোনো দ্রব্য ডাকযোগে পাঠানো যাবে না। আইনটি দি পোস্ট অফিস অ্যাক্ট ২০১৯ নামে অভিহিত হবে। আইনটির খসড়া থেকে এই সব তথ্য জানা গেছে।

খসড়া আইনের ৩০ ধারায় বলা হয়েছে, মুদ্রণ ও প্রকাশনা আইন ১৯৭৩ এর বিধানে অনুমোদন ছাড়া কোনো ধরনের সংবাদপত্র ডাকযোগে পাঠানো যাবে না। প্রেরক এবং প্রাপক কাউকে এক বছরের মধ্যে না পাওয়া গেলে মনি অর্ডারের অর্থ সরকারের কাছে দাবি দরা যাবে না। ডাক জীবণ বীমা চালু করবে ডাক বিভাগ। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের অধীনে ডাক অধিদপ্তরের মাধ্যমে পরিচালিত হবে।

খসড়ায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য মৌলিক যোগযোগের একমাত্র কর্তৃত্বপ্রাপ্ত ডাক সেবা প্রদানকারি সরকারি সংস্থা হবে ডাক বিভাগ। যা দেশে ইউনির্ভাসাল ডাক সেবা প্রদানকারী একমাত্র প্রতিষ্ঠান। আন্তর্জাতিভাবে বাংলাদেশ পোস্ট হিসেবে পরিচিত হবে। এই আইন জারি হলে সরকার গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে লাইসেন্স প্রদান এবং লাইসেন্সপ্রাপ্ত মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ গঠন করবে। তিন সদস্য বিশিষ্ট ওই কমিটির চেয়ারম্যান নিয়োগ দেবে সরকার। বর্তমান মেইলিং অপারেটর বা কুরিয়ার সার্ভিসের ব্যবসা পরিচালনাকারিরা লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে।

একটি জাতীয় কুরিয়ার সার্ভিস নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। লাইসেন্স ছাড়া কেউ কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে না। লাইসেন্স প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ ছাড়া কুরিয়ার সার্ভিসের গাড়ির গতিরোধ করা যাবে না। তবে রাষ্ট্র ও সরকারের নিরাপত্তার স্বার্থে গন্তেব্যে পৌঁছার পর আইন শৃঙ্খলা বাহিনী লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে গতিরোধ করা যাবে। কুরিয়ার সার্ভিসের ব্যবসা পরিচালনার জন্য ব্যক্তিকেও লাইসেন্স দেয়া যাবে।

আইনের দশম অধ্যায়ে ডাক সেবা প্রদানকারিদের বিভিন্ন ধরনের শাস্তির বিধান উল্লেখ করা হয়েছে। ডাক বিতরণকারী ব্যক্তির কাছে রক্ষিত নিবন্ধন বইয়ে কোনো মিথ্যা তথ্য লিখলে অর্থাৎ ডাক বিতরণ না করে করেছেন এই ধরনের মিথ্যা তথ্য লিখলে তার ছয় বছরের কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। ডাক দ্রব্য চুরি, অসদুপায়ে আত্মসাৎ, গোপন, নষ্ট করলে এবং ফেলে দিলে ওই ডাকা কর্মকর্তা কর্মচারীর কমপক্ষে সাত বছরের কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা হবে। ডাক ঘরে কর্মরত কোনো নারী কর্মকর্তা কর্মচারীকে কর্মক্ষেত্রে কোনো ধরনের নিগ্রহ, কটূক্তি, উস্কানিমূলক অঙ্গভঙ্গি, অশ্লীল উক্তি করা যাবে না। করলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনসহ সেক্সুয়াল হেরেজমেন্টাল ইলিমিনেশন অ্যান্ড প্রিভেন্ট পলিসির (বিএলএএসটি) অধীনে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আইনটির ৯ ধারার বিধান ভঙ্গ করে কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি ঘটনার জন্য সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। ডাকটিকিটি বিক্রির ক্ষেত্রে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্য দাবি করলে ৬ মাসের কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকার অর্থদণ্ডে অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। ২০ এবং ২১ ধারার বিধান লঙ্গন করে ক্ষতিকর নিসিদ্ধ পণ্য এবং অশ্লীলদ্রব্য ডাকযোগে পাঠালে সর্বোচ্চ এক বছরের জেল এবং সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। কোনো ব্যক্তি ডাকঘরের চিঠির বক্স, ডাক ঘরের কাউন্টার, মেইল প্রসেসিং সেন্টার, ডাক বছাই কেন্দ্র, সার্ভাররুম, কল সেন্টার স্ট্যাম্প গোডাউন এবং ডাক ট্রেজারি নোংরা করলে ক্ষতিকর পদার্থ নিক্ষেপ করলে তার সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে।

ডাক অধিদপ্তরের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী একক বা দলগতভাবে অধিদপ্তরের উন্নয়নমূলক কাজে বাধা প্রদান করলে দরপত্রে বাধা দিলে, তথ্য ফাঁস করলে, হুমকি দিলে এবং চাঁদা দাবি করলে তার বা তাদের কমপক্ষে ১০ জেল এবং ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে।

খসড়া আইনে অনুসারে, পার্সেল সার্ভিস বলতে ডকুমেন্ট ব্যতিত কার্টন, প্যাকেট প্রতি অনুর্ধব ৩০ কেজি পর্যন্ত ওজনের কোনো দ্রব্য প্রেরকের কাছ থেকে মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত মাশুল গ্রহণ সাপেক্ষে লিখিত ঘোষণাপূর্বক তা পরিবহন করে শুল্ক, কর, মাশুল পরিশোধ সাপেক্ষে প্রাপকের ঠিকানায় তার প্রাপ্তিস্বীকার গ্রহণপূর্বক বিতরণের জন্য দেয়া সেবা বোঝানো হবে।

আইনে ডাক অধিদপ্তর, লাইসেন্সপ্রাপ্ত মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান অভ্যন্তরীণ বা আন্তর্জাতিক ডাক দ্রব্যাদি সংগ্রহ, বহন, যাচনা বা বিলি সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রতারণামূলক বা ইচ্ছাকৃত ছাড়া অন্য ভাবে কোনো ডাক দ্রব্য হারানো গেলে, বিলিতে ত্রুটি, বিলম্বে বা ক্ষতির দায় দায়িত্ব সরকার বহন করবে না। ডাক ঘরের কোনো কর্মকর্তা কর্মচারীও উল্লিখিত দায়ে দায়িত্ব বহন করবেন না। তবে কী কী করলে প্রতারণা হবে বা ইচ্ছাকৃত ত্রুটি ছিলো তার কোনো ব্যাখ্যা আইনে দেয়া হয়নি।

ডাক গ্রহণকালে গ্রহণকারীর সামনেই মোড়কীকরণ করে প্রেরককে ঘোষণাপত্র দিতে হবে এতে আইনে নিষিদ্ধ কোনো পণ্য নাই। মেইলিং অপারেটর বা কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণের জন্য গঠিত লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রশাসনিক আওতাধীন একটি পৃথক সংস্থা হিসেবে গঠিত হবে। এই সংস্থার কার্যক্রম কর্মপরিধি বিধি দ্বারা নির্ধারিত হবে। সরকার এই আইনের আওতায় মেইলিং অপারেটর বা কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের মেইলিং সেবা ব্যবসা পরিচালনার শর্তবলী আরোপ করবে। সরকার লাইসেন্স ফিস, চার্জ ও কমিশন নির্ধারণ করবে।

এই আইনের অধীনে প্রণীত বিধিমালা অমান্য করলে মেইলিং অপারেটর বা কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের দণ্ড ও শাস্তির বিধান করা করা হবে। এই আইনের অধীনে সরকার একটি জাতীয় কুরিয়ার সার্ভিস নীতি প্রণয়ন করবে। রাষ্ট্র ও জনগণের জন্য হুমকিস্বরূপ কোন দ্রব্যাদি গ্রহণ, পরিবহন, বিতরণ করলে ওই মেইলিং অপারেটর বা কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, শুল্ক কর্তৃপক্ষ, লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তার উপস্থিতিতে কুরিয়ার দ্রব্যাদি বহনকারী যানবাহনের গতিরোধ করতে পারবে।

যারা এই আইন ও বিধির শর্ত মেনে আবেদন করবেন না তারা কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স পাবেন না। আইনে ডাক মাশুল বলতে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ডাকযোগে পাঠানো বানিজ্যিক অবাণিজ্যিক ডাক দ্রব্য পরিবহণের বিনিময়ে কাছ থেকে টিকিটের মাধ্যমে বা অন্য কোনো উপায়ে আদায় করা মাশুল। যাকে পাওয়া যাবে না বা মৃত ব্যক্তির কাছে পাঠানো ডাকের মাশুল প্রেরক বহন করবেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত