ঢাকা, রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১১ মিনিট আগে
শিরোনাম

গ্রাহক সচেতনতায় উঠান বৈঠক!

  কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৩:১৪

গ্রাহক সচেতনতায় উঠান বৈঠক!

সেবা নিয়ে গ্রাহকের দোড়গোড়ায় এখন কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি তারা করছে সাধারণ মানুষকে সচেতন। বিদ্যুতের সঠিক ব্যবহার, দুর্ঘটনা রোধ, মুজিববর্ষ, বর্তমান সরকারের সাফল্য নিয়ে তারা হাজির হচ্ছেন গ্রাহকের উঠানে। করছেন উঠান বৈঠক। এ কার্যক্রমের ফলে সাধারণ মানুষ পল্লী বিদ্যুতের সেবা পাচ্ছে খুব সহজেই। গ্রাহকরা তাদের সুবিধা অসুবিধা বলতে পারছেন কর্মকর্তাদের। বর্তমানে নেই পূর্বের ন্যায় অভিযোগও।

বিশেষ করে কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় কুষ্টিয়ার মিরপুর জোনাল অফিস। দূর্নীতি, ঘুষ, গ্রাহক হয়রানি এক সময়ের নিত্যদিনের ঘটনা। সেই সাথে ছিলো লোড শেডিং আর বিলের ভোগান্তি।

এক সময়ের এত অনিয়ম আর অভিযোগের গ্লানি নিয়ে ঘুরে দাড়িয়েছে পল্লী বিদ্যুতের এই অফিসটি। বর্তমানে গ্রাহক সেবা এবং নিরাপত্তায় তাদের মূল লক্ষ্য। গ্রাহকদের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে কর্মকর্তারা।

মিরপুর জোনাল অফিসের দেওয়া তথ্য মতে, চলতি বছরের জুন মাস অবধি উপজেলায় ১ হাজার ৪শ ৫৩ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার বিদ্যুতের লাইন চালু রয়েছে। ৩৩/১১ কেভি একটি উপকেন্দ্রের মাধ্যমে ১৭০টি গ্রামের ৮৫ হাজার ৬৭জন গ্রাহকের কাছে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়েছে।

উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নের গ্রাহক বেলাল হোসেন জানান, মিরপুর পল্লী বিদ্যুত অফিস কয়েক বছর আগে যেমন ছিলো তার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। লাইন নিতে গেলে পদে পদে টাকা দিতে হতো। মাঝে মাঝেই বিলে ভুয়া বিল চলে আসতো। এখন আর তেমনটা নেই।

হাবিবুর রহমান জানান, শুনেছিলাম নতুন মিটার নিতে গেলে বিদ্যুতের অফিসে ১/২ বছর ঘোরা লাগতো, টাকা বেশি দিতে হতো। কিন্তু আমি কিছুদিন আগে একটা মিটার নিয়েছি। অনলাইনে আবেদন করি। কয়েকদিনের মধ্যেই আমি মিটার পেয়েছি।

স্কুল শিক্ষার্থী সোহাগ জানান, রাতে লোড শেডিং এর যন্ত্রনায় ঠিকমতো পড়তে পারতাম না। এখন লোড শেডিং নেই বললেই চলে।

কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মিরপুর জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার এনামুল হক বলেন, আমি ২০১৮ সালে এই কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মিরপুর জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার হিসাবে যোগদান করার পর থেকে এই অফিস শতভাগ দুর্নীতি মুক্ত করার চেষ্টা করছি। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, ভিশন, গ্রাহক সেবা, গ্রাহকের সুবিধা অসুবিধা, পল্লী বিদ্যুতের সঠিক কর্মকাণ্ড সাধারণ মানুষের দোড় গোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছি। আমরা গ্রাহকের বাড়ী গিয়ে উঠান বৈঠক পরিচালনা করছি। এ বছর জুন মাস থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত উপজেলায় প্রায় ১৫০টি উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গ্রাহকদের সচেতন করছি। “আলোর ফেরিওয়ালা” কর্মসূচির মাধ্যমে উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। গ্রাহকদের হয়রানি রোধে আমরা “ওয়ান পয়েন্ট” নামের সেবার মাধ্যমে সেবা দিচ্ছি। একই স্থানে গ্রাহকরা সকল সেবা পাবে।

তিনি আরো বলেন, মিরপুর উপজেলায় বিদ্যুতের কোন ঘাটতি না থাকায় কোন লোড শেডিং নেই। আর যদি রক্ষানাবেক্ষণ ও বিদ্যুত লাইনের আশপাশে গাছের ডালপালা পরিষ্কার করতে হয় তাহলে মাইকিং, নোটিশ দিয়ে এবং মিরপুর জোনাল অফিসের নামে ফেসবুক পেজের মাধ্যমে গ্রাকদের সচেতন করছি।

তিনি বলেন, উঠান বৈঠকে গ্রাহকদের ব্যপক সাড়া পাওয়া গেছে। তারা তাদের অসুবিধার কথা সরাসরি আমাদের জানায়। আমরা তাৎক্ষনিক সেটা সমাধানের ব্যবস্থা করি। আমারা এ উঠান বৈঠকে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, জনপ্রতিনিধিদের সাথে নিয়ে গ্রাহকদের সচেতন করে আসছি।

তিনি বর্তমান অফিসের চিত্র তুলে ধরে বলেন, ঘুষ, দূর্নীতি, দালাল মুক্ত, শতভাগ গ্রাহক হয়রানি রোধ এবং সেবা নিশ্চিত করতে পুরো অফিস সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় এনেছি। গ্রাহকদের জন্য রয়েছে অভিযোগ বক্সও।

বিগত বছর যেখানে মিরপুর জোনাল অফিসের গ্রাহকদের কাছে বকেয়া মাস ছিলো ১ দশমিক ২০ শতাংশ। বর্তমানে রয়েছে মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ। যা কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুতের বিগত বছরের রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছে। বিগত বছরের তুলনায় সিস্টেম লস কমেছে ১ দশমিক ২০ শতাংশ।

কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) হারুন অর রশিদ জানান, কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুত সমিতির আওতায় ৬টি উপজেলায় বর্তমানে ৪ লাখ ৬২ হাজার ৪শত ৭৫জন গ্রাহক বিদ্যুতের সুবিধা পাচ্ছেন। আমাদের অর্ন্তগত ৯৩৯টি গ্রামের মধ্যে ইতিমধ্যে ৯০০ গ্রামে শতভাগ বিদ্যুতের সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। বাঁকি গুলো খুব শিঘ্রই করা হবে।

তিনি আরো জানান, আমরা উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গ্রাহকদের সচেতন করে আসছি। এতে বিদ্যুতের অপচয়, দুর্ঘটনা অনেক কমে গেছে। সেই সাথে দুর্নীতি প্রায় বন্ধ হয়ে এসেছে। আমরা গ্রাহক সেবা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছি। গ্রাহক এখন দোরগোড়ায় বসেই পল্লী বিদ্যুতের সেবা পাচ্ছেন। অনলাইনে আবেদন, টাকা জমা দিতে পারছেন। মোবাইলে বিলও পরিশোধ করছেন। ডিজিটাল বিলিং সিস্টেমের মাধ্যমে ভুল কম হচ্ছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসবি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত