ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

হাতে-পায়ে ধরে আকুতি করেছি তবুও মন গলেনি ধর্ষকদের

  সিলেট প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১২:৩৩

হাতে-পায়ে ধরে আকুতি করেছি তবুও মন গলেনি ধর্ষকদের

গত শুক্রবার সন্ধ্যায় সদ্য বিবাহিত দম্পতি বেড়াতে যান সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজে। রাস্তার পাশে গাড়ি রেখে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন দিক ঘুরে দেখেন। এরপর সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নেমে আসলে ক্যাম্পাস থেকে ফেরার পথে স্বামীর কাছ থেকে ছিনতাই করে বধূকে গণধর্ষণ করে ছাত্রলীগের কর্মীরা।

ভয়াল সেই রাতের বর্ণনা দিলেন ধর্ষিতা বধূ

পথমে অস্ত্রের মুখে স্বর্ণের চেইন, টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেয়। এরপর এই চক্রের এক ধর্ষক বলে উঠে- ‘দেখ মেয়েটি তো সুন্দর’। এরপর স্বামীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেন বধূকে। এ সময় ওই বধূ সম্ভ্রম রক্ষায় তাদের হাতে-পায়ে ধরে আকুতি জানিয়েছিলেন। কিন্তু মন গলেনি ধর্ষকদের। জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিয়ে একের পর এক ধর্ষণ করে।

গতকাল রোববার সিলেটের আদালতে জবানবন্দিকালে এসব তথ্য জানিয়েছেন গণধর্ষণের শিকার ওই তরুণী। আলোচিত এ মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর কাছে এই তথ্য জানিয়েছেন। ধর্ষিতা বধূ জানান, তাদের বিয়ে বেশিদিন হয়নি। মাত্র কয়েক মাস হবে।

সিগারেট কিনতে যাওয়াই কাল হলো

ধর্ষককের মধ্যে থেকে যখন একজন বললেন দেখ মেয়টা তো সুন্দর! এরপর তারা ঘুরে এসে জাপটে ধরে বধূটিকে। এতে প্রতিবাদ করেন সঙ্গে থাকা স্বামী। ধর্ষকরা এ সময় তার স্বামীকে মারধর শুরু করে বধূকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ সময়ও চিৎকার করলেও ছেড়ে দেননি তারা। অসহায় স্বামী ও ধর্ষকদের পিছু পিছু যাচ্ছিলেন। তিনি গিয়ে এমসি কলেজের হোস্টেলে ঢুকেন। ধর্ষকরা তাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে স্বামী গিয়ে সেখানেও বাধা দেন। ছাত্রাবাসের ভেতরেই তার স্বামীকে মারধর করে। এক পর্যায়ে তাকে বেঁধে ফেলে।

স্বামীর সামনেই স্ত্রীকে ধর্ষণ করল ছাত্রলীগের কর্মীরা

ওই বধূ জানান, স্বামীকে বেঁধে তারা তার ওপর নির্যাতন করে। এ সময় তিনি সম্ভ্রম রক্ষার্থে তাদের হাতে-পায়ে ধরেন। কিন্তু এতে মন গলেনি ধর্ষকদের। এ সময় চিৎকার করলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। দু’তলায় থাকা কয়েকজন যুবক নিচে নামতে চাইছিলো। এ সময় তাদের ধমক দিয়ে আটকে দেয়া হয়।

পরে পুলিশ গেলে ধর্ষকরা পালিয়ে যায়। শুক্রবার রাত ৯টার দিকে শাহপরান থানার ওসি ধর্ষিতা বধূ ও তার স্বামীকে এমসির ছাত্রাবাস থেকে উদ্ধার করে। উদ্ধারের পর ওই বধূকে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে ডাক্তারদের বিশেষ টিমের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা করা হয়।

এমসি কলেজে গণধর্ষিতা সেই তরুণী যেমন আছেন​

চিকিৎসা শেষে গতকাল রোববার দুপুর সাড়ে ১২টায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, শাহপরান থানার ওসি ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য তাকে সিলেটের আদালতে নিয়ে আসেন। মহানগর তৃতীয় আদালতের বিচারক শারমিন খানম নীলার আদালতে নির্যাতিত ওই বধূ জবানবন্দি দেন। প্রায় ২ ঘণ্টা ২০ মিনিট আদালত তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন। জবানবন্দি শেষে নির্যাতিত ওই মহিলাকে পরিবারের জিম্মায় দেয়া হয়েছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আদালতে নির্যাতিতা নারী তার ওপর চলা নির্যাতনের মর্মান্তিক ঘটনা জানিয়েছেন। এদিকে শুক্রবার ঘটনার খবর পেয়ে এমসির ছাত্রাবাসে ছুটে গিয়েছিলেন সাবেক এক ছাত্রনেতা। তিনি জানিয়েছেন, তারা গিয়ে নির্যাতিত ওই বধূ ও তার স্বামীকে ছাত্রাবাসে পেয়েছেন। এ সময় সেখানে পুলিশও ছিল। তাদের মুখে বর্ণনা শুনে কারা এসব ঘটনা ঘটিয়েছে এ তথ্য উদঘাটনে ধর্ষিতা ও স্বামীর মুখে বর্ণনা শুনে তারা ধর্ষকদের পরিচয় বের করেন। এ সময় ফেসবুক আইডি থেকে তাদের ছবি বের করা হয়। পরে ধর্ষিতা ও তার স্বামী ওই ধর্ষকদের শনাক্ত করেন।

সাইফুর যেভাবে সন্ত্রাসী ও ধর্ষক হয়ে ওঠে!

তিনি জানান, ঘটনার পর পুলিশ ওই বধূকে উদ্ধার করে সিএনজি অটোরিকশাতে বসিয়ে রাখে। তাৎক্ষণিক শাহপরান থানার ওসিসহ সাবেক ছাত্রনেতারা হোস্টেলে যান। গিয়ে অভিযান চালান। ওই সময় কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। সবাই ছাত্রাবাস ছেড়ে পালিয়ে যায়।

ওই সময় নির্যাতিত বধূর স্বামী পুলিশকে জানিয়েছিলেন- তারা সদ্য বিবাহিত। তারা বিয়ে করলেও পারিবারিক ভাবে এখনো তাদের বিয়ে মেনে নেয়া হয়নি। এ কারণে তারা আলাদা বসবাস করছেন। স্বামী সৌদি আরবে বসবাস করতেন। ওখানে থাকা অবস্থায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের পরিচয় হয়েছিলো। এরপর দেশে আসার পর তাদের বিয়ে হয়। নির্যাতিতার স্বামীর বাড়ি সিলেট শহরতলীর শিববাড়ি এলাকায় ও স্ত্রীর বাড়ি সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলায় বলে পুলিশ জানায়।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওয়াইএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত