ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

পিরোজপুরে চাকরির প্রলোভনে অর্থ হাতানোর অভিযোগ

  পিরোজপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৯ মে ২০১৯, ১২:২১  
আপডেট :
 ১৯ মে ২০১৯, ১২:৩০

পিরোজপুরে চাকরির প্রলোভনে অর্থ হাতানোর অভিযোগ

পিরোজপুরে রূপালী হেলথ কেয়ার ফাউন্ডেশন নামে একটি বেসরকারি এনজিও মোটা অংকের বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে জেলার বিভিন্ন উপজেলার বেকার যুবক-যুবতীর নিকট থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ জামানত নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

জেলা বা উপজেলায় কোন প্রকার অফিস ছাড়াই রাজধানীর ১০৭ মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার খান ম্যানশনের ৯ম তলায় প্রধান কার্যালয় জানিয়ে নাজিরপুর উপজেলার কাঠালিয়া গ্রামের মৃত নিত্যনন্দ হালদারের ছেলে জ্যোতিষ চন্দ্র হালদার নিজেকে ওই প্রতিষ্ঠানের জেলা ব্যবস্থাপক পরিচয় দিয়ে এ প্রতারণা করেছেন।

নাজিরপুরের বাসিন্দা ফিরোজ মাহমুদ তালুকদার বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, নাজিরপুর উপজেলা সদরের হোটেল গলির একটি কাপড়ের দোকানে প্রায়ই লোকজনের ভিড় দেখা যায়। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ওই প্রতিষ্ঠানে মাঠকর্মী হিসেবে নিয়োগপত্র নেয়ার জন্য নাজিরপুরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে ৩৫ থেকে ৪০ জন যুবক-যুবতী জড়ো হয়েছেন।

তাদের কাছ থেকে নগদ ১০ হাজার টাকা করে নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রকল্প পরিচালক মো. জাহিদুর রহমান খাঁন স্বাক্ষরিত একটি নিয়োগপত্র দিচ্ছেন ওই জ্যোতিষ চন্দ্র হালদার।

এ ব্যাপারে জেলার সদর উপজেলার কদমতলার মৃত আ. সোবহানের ছেলে রাকিব হোসেন বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে যোগাযোগ করলে আমাকে নাজিরপুরে যেতে বলা হয়। এখানে গিয়ে দেখা যায়, চাকুরি জন্য একটা আবেদন ফরম আগে থেকেই তৈরি করে রেখেছেন ওই জ্যোতিষ চন্দ্র হালদার। ওই ফরমে বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করে স্বাক্ষর দিয়ে নগদ ১০ হাজার টাকা জামানত দিলেই তারা মাঠকর্মী হিসেবে নিয়োগপত্র প্রদান করেন।

জেলার স্বরুপকাঠী উপজেলার গগণ এলাকার চাকুরী প্রত্যাশী মৃত আতিকুল্লাহ’র ছেলে শাহনেওয়াজ বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, তিনি তার এক বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পেরে বলদিয়া ইউনিয়নে মাঠকর্মী হিসেবে চাকরীর জন্য এসেছেন। তার কাছেও জেলা ব্যবস্থাপক জ্যোতিষ চন্দ্র হালদার ১০ হাজার টাকা জামানত দাবি করেছেন।

উপজেলার কলারদোয়ানিয়া ইউনিয়নের মুগারঝোর গ্রাম থেকে আসা মৃত রুস্তুম আলীর ছেলে আবু হানিফ ও রাসেদুল ইসলাম বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, তারা জেলা ব্যবস্থাপক জ্যোতিষ চন্দ্র হালদারকে ১০ হাজার টাকা জামানত দিয়ে মাঠকর্মী হিসেবে নিয়োগপত্র গ্রহণ করেছেন।

একটি এনজিও’র মাঠকর্মী হিসেবে চাকুরীর জন্য কেন ১০ হাজার টাকা জামানত দিলেন এমন প্রশ্ন করা হলে তারা বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, লেখাপড়া শেষ করে বেকার ঘুরে বেড়াচ্ছি। শুনেছি তারা মাসে ১০ হাজার টাকা বেতন দিবে। তাই বেকারত্বে অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে এ টাকা দিয়েছি। একই কথা বলেন এরকম চাকুরী প্রত্যাশী আরো অন্তত ১৫ থেকে ২০ জন।

নিজেকে ওই প্রতিষ্ঠানের জেলা ব্যবস্থাপক হিসেবে দাবি করা জ্যোতিষ চন্দ্র হালদারের সাথে সার্বিক বিষয়ে কথা হলে তিনি বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, তাদের প্রতিষ্ঠান জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর কাজ করবে। দাতা সংস্থা তাদের অর্থের যোগান দিবে। এ জন্য তারা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জেলার প্রতিটি ইউনিয়নের জন্য ৩ জন করে মাঠকর্মী নিয়োগ করবে।

তারা মূলবেতন ও টিএ, ডিএসহ মাসে ১০ হাজার টাকা পাবে। এ প্রকল্প ১০ বছরের জন্য কাজ করবে। প্রতি মাঠকর্মীর কাছে ১০ হাজার টাকা জামানত নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ওই টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করেন। তবে টাকা নেয়ার ব্যাপারে বৈধ কোন যুক্তি বা প্রমাণাদি উপস্থাপন করতে পারেনি তিনি।

এ বিষয়ে তিনি বাংলাদেশ জার্নালকে আরো বলেন, বিদেশী ফান্ড চালাতে অনেক খরচ, তাই হেড অফিসের নির্দেশে এ টাকা নেয়া হচ্ছে এবং এটি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে জমা দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া এ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সর্ম্পকে ইউএনওসহ ডিসি সাহেবকে অবগত করা হয়েছে। তবে ওই টাকা এখন আর নিচ্ছেন না দাবি করে তিনি বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, ভান্ডারিয়ায় কিছু কর্মী তারা নিজ খরচে ঢাকায় গিয়ে সেখানে টাকা দিয়ে নিয়োগ নিয়ে এসেছেন।

ওই প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প পরিচালক মো. জাহিদুর রহমান খাঁনের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি ফান্ড চালাতে খরচের বিষয়টি স্বীকার করে বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, সেজন্য জেলা ব্যবস্থাপক জ্যোতিষ চন্দ্র হালদারের ব্যক্তিগতভাবে প্রতিষ্ঠানকে হেল্প করার কথা ছিলো। মাঠ কর্মীদের কাছে জামানত নেয়ার কোন সুযোগ নেই, তাছাড়া বিষয়টি তার জানা নেই। সে রকম কিছু হলে তিনি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিবেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোজী আকতারের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, রূপালী হেলথ কেয়ার ফাউন্ডেশন নামে কোন এনজিও’র কথা আমার জানা নেই। তবে তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে কোন অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/টিপিবি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত