ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১০ মিনিট আগে
শিরোনাম

বৈশ্বিক সুদহার নির্ধারণে লাইবর যুগ শেষ, সোফর শুরু

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ : ৩০ জুন ২০২৩, ১২:৫০  
আপডেট :
 ৩০ জুন ২০২৩, ১২:৫৮

বৈশ্বিক সুদহার নির্ধারণে লাইবর যুগ শেষ, সোফর শুরু
প্রতীকি ছবি

প্রায় ৪০ বছর ধরে চলা বৈশ্বিক সুদহার নির্ধারণের অন্যতম মাপকাঠি লন্ডন ইন্টার ব্যাংক অফারড রেটের (লাইবর) ব্যবহার শুক্রবার শেষ হয়ে যাচ্ছে। এর পরিবর্তে শনিবার থেকে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সিকিউরড ওভারনাইট ফিন্যান্সিং রেট (সোফর) নামে নতুন ব্যবস্থা ইতিমধ্যে চালু হচ্ছে।

বৈশ্বিক সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ সালে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার সময় ব্যাংক অব ইংল্যান্ড আইন লঙ্ঘন করে সেই দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে কারসাজির মাধ্যমে লাইবর কমাতে বারবার চাপ দেয়। যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাপ দেয়ার এই ঘটনা পরে ফাঁস হয়ে যায়। ফলে ঘটনাটির জেরে ২০১২ সালে চাকরি চলে যায় যুক্তরাজ্যের বার্কলেজ ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী বব ডায়মন্ডের। ঘটনাটি বিশ্বব্যাপী লাইবর কেলেঙ্কারি হিসেবে পরিচিত। এর পর থেকে লাইবর থাকবে, নাকি থাকবে না, তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনা শুরু হয়। তারই একপর্যায়ে ২০১৭ সালে যুক্তরাজ্যের আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা এফসিএ লাইবর প্রথা বাতিল ঘোষণা করে।

এদিকে, লাইবরের বিকল্প নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ ও নিউইয়র্ক ফেডখ্যাত ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক যৌথভাবে বিশ্বখ্যাত বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সঙ্গে নিয়ে ২০১৪ সালে গঠন করে অল্টারনেট রেফারেন্স রেটস কমিটি (এআরআরসি)। এআরআরসিই সিদ্ধান্ত নেয় যে লাইবরের একটি ভালো বিকল্প হতে পারে সিকিউরড ওভারনাইট ফিন্যান্সিং রেট (সোফর)। এটি হতে হবে মার্কিন ডলারভিত্তিক ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে। ফোরামটি ২০১৮ সালে এর কার্যক্রম বাড়ায় এবং ২০২১ সালে এসে সোফর কার্যকরে দৃঢ় অবস্থান নেয়। ২০২১ সালের ২২ জুলাই বিশ্বব্যাংকের নির্বাহী পরিচালকদের পর্ষদ লাইবরের পরিবর্তে সোফর ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়। লাইবরের পরিবর্তে কীভাবে সোফরের ব্যবহার হবে, ফেডারেল রিজার্ভ বোর্ড গত বছরের ডিসেম্বরে সেই নীতিমালা চূড়ান্ত করে, যা এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ব্যবহার করছে।

লাইবরের ওপর নির্ভর করে ব্রিটিশ মুদ্রা পাউন্ড স্টার্লিং, সুইস ফ্রাঁ, ইউরোপের একক মুদ্রা ইউরো, জাপানি ইয়েন ও মার্কিন ডলারে নেয়া ঋণের সুদহার নির্ধারণ হতো। তবে নতুন সুদহারের মাপকাঠি সোফরের মাধ্যমে শুধু মার্কিন ডলারে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রেই সুদহার নির্ধারিত হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ লাইবরের সঙ্গে বাড়তি মার্জিন যোগ করে সুদ নির্ধারণ করত। লাইবর পরিবর্তনশীল হওয়ায় মার্জিনে কোনো পরিবর্তন হতো না। সোফরও অবশ্য একই পদ্ধতিতে চলবে।

লাইবর রেট, তথা সুদহার নির্ধারণ হতো বিশ্বের ১১ থেকে ১৮টি ব্যাংক প্রতিদিন টাকা ধার করতে কত সুদ দিত, তার ভিত্তিতে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ সুদ দিতে চাওয়া চার ব্যাংক এবং সর্বনিম্ন সুদ দিতে চাওয়া চার ব্যাংকের গড় সুদ নিয়ে লাইবর রেট নির্ধারণ করা হতো। ফলে লাইবর রেট প্রতিদিনই ওঠানামা করত। লাইবর সুদহার নির্ধারণ করত ইন্টার কন্টিনেন্টাল এক্সচেঞ্জ। অন্যদিকে সোফর রেট নির্ধারিত হবে আমেরিকান ব্যাংকগুলো এক রাতের জন্য একে অপরকে কত সুদ দিচ্ছে, তার ভিত্তিতে।

জানা গেছে, ১৯৭০ সালে প্রথম কিছু ব্যাংক লাইবর সুদহার ব্যবহার শুরু করে। তবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এটির ব্যবহার শুরু হয় ১৯৮৬ সালে। এর দুই বছর আগে ১৯৮৪ সালে দ্য ব্রিটিশ ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিবিএ) সুদহার চালু করে। এটিই লাইবর নামে যাত্রা শুরু করে। প্রথম দিকে লাইবর দিয়ে শুধু মার্কিন ডলার, জাপানি ইয়েন ও ব্রিটিশ পাউন্ড স্টার্লিংয়ে লেনদেন হতো। লাইবর প্রথা বাতিলের অংশ হিসেবে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকেই লাইবরের ওপর সুদহার নির্ভর করে ঋণ প্রদান বন্ধ করে দেয় যুক্তরাষ্ট্র।

এছাড়া লাইবরের পাশাপাশি সুদহার নির্ধারণে বিশ্বে নানা মাপকাঠি চালু রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো ইউরোপে ইউরোপিয়ান ইন্টার ব্যাংক অফারড রেট (ইউরিবোর), জাপানে টোকিও ইন্টার ব্যাংক অফারড রেট (টাইবর), চীনে সাংহাই ইন্টার ব্যাংক অফারড রেট (শিবোর), ভারতে মুম্বাই ইন্টার ব্যাংক অফারড রেট (মাইবর)।

ইন্টারন্যাশনাল এক্সচেঞ্জের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে লাইবর রেট নির্ধারণে কাজ করছে ১৫টি ব্যাংক। এগুলো হলো ব্যাংক অব আমেরিকার লন্ডন শাখা, বার্কলেস ব্যাংক, সিটি ব্যাংক এনএর লন্ডন শাখা, কো-অপারেটিভ রবো ব্যাংক, ক্রেডিট অ্যাগ্রিকোল কো-অপারেটিভ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক, ক্রেডিট সুইসের লন্ডন শাখা, ডয়েশে ব্যাংকের লন্ডন শাখা, এইচএসবিসি, জেপি মরগ্যান চেজ ব্যাংকের লন্ডন শাখা, লয়ডস ব্যাংক, এমইউএফজি ব্যাংক, রয়্যাল ব্যাংক অব কানাডা, এসএমবিসি ব্যাংক ইন্টারন্যাশনাল, নোরিনচুকিন ব্যাংক ও ইউবিএস এজি।

প্রসঙ্গত, অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে বাংলাদেশও দীর্ঘ মেয়াদে লাইবরযুক্ত ঋণ নিয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বড় আকারের ঋণ দেয়া-নেয়ার ক্ষেত্রে লাইবর প্রথা অন্যতম মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত। লাইবরের সঙ্গে সমন্বয় রেখেই বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি), এশীয় অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাংক (এআইআইবি)- এসব আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা থেকে ঋণ নিয়েছে বাংলাদেশ। এর বাইরে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় রাশিয়া, ভারত, কোরিয়া প্রভৃতি দেশ থেকেও লাইবরের মাপকাঠিতে বাংলাদেশ ঋণ নিয়েছে।

আরও পড়ুন: বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমালো বিশ্বব্যাংক

বাংলাদেশ জার্নাল/কেএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত