ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : কিছুক্ষণ আগে
শিরোনাম

অনার্স-মাস্টার্স কলেজে শিক্ষক নিয়োগ দেবে এনটিআরসিএ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৮ মার্চ ২০১৮, ১৬:১৭

অনার্স-মাস্টার্স কলেজে শিক্ষক নিয়োগ দেবে এনটিআরসিএ

মানসম্মত উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে বেসরকারি কলেজের অনার্স-মাস্টার্স শ্রেণিতে মেধাবী শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এখন থেকে এনটিআরসিএ (জাতীয় শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ) এই দুই শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ দেবে। মঙ্গলবার বিকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তকে অধ্যক্ষরা স্বাগত জানালেও শিক্ষক নেতারা ক্ষুব্ধ হয়েছেন।

মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহবার হোসাইন সভাপতিত্বে সভাটি হয়েছে। সভায় মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (কলেজ) ড. মোল্লা জালাল উদ্দিন, অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-১) চৌধুরী মুফাদ আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-২) জাবেদ আহমেদ, এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান, মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগের সচিব ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তরা উপস্থিত ছিলেন।

সভার বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-২) জাবেদ আহমেদ বলেন, বেসরকারি অনার্স-মাস্টাস শ্রেণি শিক্ষক এনটিআরটিএর মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিষয়টি মন্ত্রী অনুমোদন না দেওয়া পর্যন্ত চূড়ান্ত বলা যাবে না। তিনি (মন্ত্রী) ইচ্ছে করলে সভার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুমোদন হলে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে এনটিআরসিএ আইন সংশোধন করা হয়। এরপর থেকে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রসা ও ডিগ্রি স্তরে এনটিআরসিএর মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। কেন্দ্রীয়ভাবে শিক্ষক নিয়োগের ফলে যোগ্য শিক্ষক পাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। বন্ধ হয়ে যায় গভর্নিং বডির (জিবি) নিয়োগ বাণিজ্য। তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজের অনার্স ও মাস্টার্স শ্রেণি শিক্ষক নিয়োগের ক্ষমতা জিবির হাতেই থেকে যায়। অনেক প্রতিষ্ঠানের জিবির সভাপতি ও সদস্যদের বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগ রয়েছে। দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ না দেওয়ায় শিক্ষার্থীরা মানসম্মত উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হন।

গত বছরের জুন মাসে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে থেকেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, যোগ্য শিক্ষকের অভাবে বেসরকারি কলেজের অনার্স-মাস্টার্স শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত হচ্ছে না। তারা উচ্চশিক্ষা শেষ করেও চাকরি পাচ্ছে না। দিন দিন শিক্ষিত বেকরের সংখ্যা বাড়ছে। এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও এনটিআরসিএর মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের আবেদন করে মন্ত্রণালয়ে।

সভার কার্যপত্র সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৩ সাল থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সরকারি ও বেসরকারি কলেজে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে আসছে। তবে বেসরকারি শিক্ষকদের জনবল কাঠামোভুক্ত করা হয়নি। বেতন ভাতা না পেয়ে প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষক মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ফলে সাড়ে তিন লাখ শিক্ষার্থীকে সুষ্ঠুভাবে পাঠদান সম্ভব হচ্ছে না। জিবি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিসহ গঠিত কমিটির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের ফলে শিক্ষকদের সমস্যা দিন দিন তীব্র হচ্ছে। বর্তমান নিয়মে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ করে এনটিআরসিএর মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের আবেদন করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

সভা সূত্রে জানা গেছে, কেউ কেউ বর্তমান নিয়মে শিক্ষক নিয়োগের প্রস্তাব করেন। তাদের যুক্তি এনটিআরসিএর মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ দিলে তাদের এমপিওভুক্ত করতে হবে। এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন সভায় উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা। তারা বলেন, এনটিআরসিএর আইনে সব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের কথা বলা আছে। এনটিআরসিএ শিক্ষক নিয়োগ দিলেই তাদের এমপিওভুক্ত করা হবে আইন বলা হয়নি।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-২) জাবেদ আহমেদ বলেন, সভায় পাল্টাপাল্টি মতামত এসেছে। শেষ পর্যন্ত এনটিআরসিএর মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এনটিআরসিএ বেসরকারি ও এমপিওভুক্ত দুই ধরনের প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে থাকে। নিয়োগের সঙ্গে এমপিওভুক্তির বিষয়টি জড়িত নয়।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনার্স-মাস্টার্স শ্রেণির শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি করতে হলে এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো সংশোধন করতে হবে। অর্থের বিষয় জড়িত থাকায় অর্থ মন্ত্রণালয়েরও অনুমোদন নিতে হবে।

মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তারা জানান, অনেক কলেজেই শিক্ষক নিয়োগে অর্থ লেনদেন, নানা ধরনের প্রভাব বিস্তারসহ নেতিবাচক অভিযোগ প্রায় দিনই মন্ত্রণালয়ে জমা হচ্ছে। ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতেই এ ব্যবস্থার কথা বলা আছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তকে কলেজের অধ্যক্ষরাও স্বাগত জানিয়েছেন। অনার্স-মাস্টার্স পাঠদানকারী রাজধানীর এ কে এম রহমতুল্লাহ কলেজের অধ্যক্ষ মো. ফরিদ উদ্দীন বলেন, কমিটির (জিবি) নিয়োগ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এনটিআরসিএর মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ দিলে কোনো বিতর্ক থাকবে না। তারা মেধার সঠিক বিশ্লেষণ করে নিয়োগ দিয়ে থাকেন।

শিক্ষকরা জানান, বর্তমানে সারা দেশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত ৩৮২টি বেসরকারি কলেজে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স চালু রয়েছে। এমপিও না পাওয়া পর্যন্ত কলেজের নিজস্ব তহবিল থেকে শিক্ষকদের শত ভাগ বেতন ভাতা প্রদানের বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনা রয়েছে। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ তা মানছেন না। কিছু কলেজে শিক্ষকদের দুই-তিন হাজার টাকা বেতন দেয়। বেশিরভাগ কলেজই বেতন দেয় না।

সরকার সমর্থক শিক্ষক-কর্মচারী সংগ্রাম কমিটির সমন্বয়কারী অধ্যক্ষ আসাদুল হক বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম-কানুন মেনে আমরা শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। কোনো অবস্থাতেই অনার্স-মাস্টার্স শ্রেণি শিক্ষক এনটিআরসিএর মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত পিএসসির আদলে এনটিআরসিএ রূপ না নেয়।

এনটিআরসিএতে শিক্ষক নিয়োগে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের পাঁয়তার করছে মন্ত্রণালয়। মাত্র সাড়ে তিন হাজার শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করতে পারছে না। অথচ সবার আগে অনার্স-মাস্টার্স শ্রেণি শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করা দরকার।

/এসকে/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত