ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

সেই শিক্ষা ক্যাডারের ২ বছরের বেতন কাটা

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০১৯, ১৭:৪৯

সেই শিক্ষা ক্যাডারের ২ বছরের বেতন কাটা

অবশেষে শাস্তি পেতেই হলো বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা সচীন কুমার রায়কে। জালিয়াতি করে বয়স বাড়িয়ে অতিরিক্ত দু’বছর চাকরি করায় সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের এই অধ্যক্ষের ২ বছরের বেতন ফেরত নিয়েছে সরকার। অতিরিক্ত ২ বছর বেতন বাবদ নেয়া টাকা পেনশন থেকে কেটে নিয়ে এ কর্মকর্তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশি সূত্র জানা গেছে, সপ্তম বিসিএসের সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৮৭ সালে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন সচীন কুমার রায়। তখনকার নথিতে সচীন কুমারের জন্ম তারিখ ১৯৫৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। চাকরিতে যোগদানের ২৭ বছর পর ২০১৪ সালে অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি ও পদায়নের সময় তার বয়স পরিবর্তন করে ১৯৬০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বলে উল্লেখ করা হয়। এ-সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্নীতির মাধ্যমে সচীন কুমার রায় তার বয়স দুই বছর কমিয়েছেন। এতে নির্ধারিত মেয়াদের চেয়েও দুই বছর বেশি চাকরির সুযোগ পাবেন তিনি। এতে সরকারের বিরাট আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

সংশ্নিষ্টরা বলছেন, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সময় যে বয়স উল্লেখ করা হয়, তা কোনো অবস্থায় পরিবর্তনের সুযোগ নেই। সরকারি চাকরিতে অ্যাফিডেভিট (বয়স কমানোর দালিলিক প্রমাণ) গ্রহণযোগ্য নয়। সিভিল সার্ভিস রুলের বিধি-৯ অনুযায়ী কোনো কর্মকর্তা তার বয়স সংশোধন করতে পারেন না। অধ্যাপক সচীনের এই জালিয়াতি জানাজানির পর বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে তখন অধ্যক্ষ সচীন কুমার রায় বলেছিলেন, নবম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশনের সময় ভুলে তার বয়স দুই বছর বেশি লেখা হয়। পরে তার বাবা সেটি সংশোধনের উদ্যোগ নেন। অভিযুক্ত এই কর্মকর্তার দাবি করেছিলেন, চাকরিতে যোগদানের আগেই তিনি বয়স পরিবর্তনের আবেদন করেন। এ ব্যাপারে ১৬ ধরনের কাগজপত্রও বোর্ডে জমা দিয়েছেন। সেগুলো পর্যালোচনার পর বোর্ডের সিদ্ধান্তে বয়স কমানো হয়েছে। এ নিয়ে নতুন করে বিতর্কের সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করে সচীন রায় বলেন, ‘এটি ২৯ বছর আগে মীমাংসিত বিষয়।’

২৯ বছর আগে বয়স কমানো হয়েছে বলে দাবি করা হলেও মন্ত্রণালয়ের নথিপত্রে সচীন কুমারের বয়স সংশোধন হয়েছে গত বছর। অভিযোগ রয়েছে, ওই বছর অবসরে যাওয়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের স্ত্রী সচীন কুমারের চাকরির ব্যাচমেট। ওই কর্মকর্তা ভারপ্রাপ্ত সচিবের দায়িত্ব পাওয়ার পর তার স্ত্রীর ব্যাচমেট হওয়ার সুযোগ কাজে লাগিয়ে সচীন নিজের বয়স সংশোধনের ফাইল অনুমোদন করিয়ে নেন।

বিষয়টি জানাজানির পর এই অভিযোগ তদন্তের জন্য মাউশি ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর মোহাম্মদ ইউসুফ, মাউশির উপপরিচালক মেজবাহ উদ্দিন সরকার ও এইচআরএম ইউনিটের সহকারী পরিচালক আশেকুল হককে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যরা অভিযুক্ত ব্যক্তির মৌখিক ও লিখিত বক্তব্য গ্রহণের পাশাপাশি সরেজমিন যশোর শিক্ষা বোর্ড ও বরিশালে গিয়েও তদন্ত করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, যশোর শিক্ষা বোর্ডের মানবিক বিভাগ থেকে ১৯৭৪ সালে এসএসসি পাস করেন সচীন কুমার রায়। তৎকালীন ভলিউম পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ওই বছরের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর জন্মতারিখ ছিল ১৯৫৭ থেকে ১৯৫৯ সালের মধ্যে। এ ছাড়া সচীন কুমার ১৯৬৯ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি কালীশুরি এসএ ইনস্টিটিউশনে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির সময়ও জন্মতারিখ ১৯৫৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বলে উল্লেখ করেছেন।

বয়স পরিবর্তনের পুরো প্রক্রিয়াটি সন্দেহজনক বলে মন্তব্য করে তদন্তকারীরা বলেন, এসএসসি থেকে এইচএসসি পর্যন্ত বোর্ড একজন শিক্ষার্থীর বয়স নির্ধারণ করে ১৪ থেকে ২০ বছর। এর মধ্যে কেউ আবেদন করলে সর্বোচ্চ ১ থেকে ১১ মাস পর্যন্ত বয়স কমানো হয়ে থাকে। এর বেশি হলে কাগজপত্র থাকার পরও তা বাতিল বলে ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু সচীন কুমারের বয়স কমানো হয়েছে পুরো ২ বছর। এ ছাড়া ওই কর্মকর্তা এসএসসি, এইচএসসি ও স্নাতক পাস করার পর বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে চাকরিতে যোগ দেন। বয়স পরিবর্তনে এত দীর্ঘ সময় লাগার কোনো কারণ নেই। এ ছাড়া চাকরিতে ‘অ্যাফিডেভিট গ্রহণযোগ্য নয়’ এমন শর্ত থাকার পরও তিনি তা করেছেন।

পরবর্তীতে অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়। করা হয় শোকজ। এর পর গত বছরের ৩ মে বিভাগীয় মামলার শুনানি গ্রহণ করা হয়। কিন্তু শুনানিতে যুক্তিসংগত কারণ উপস্থাপন করতে পারেননি তিনি। প্রমাণ হয় শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আসা বয়স জালিয়াতির অভিযোগ।

এরপর এ দুই বছরের বেতন বাবদ সচীন কর্তৃক গৃহিত টাকা পেনশন থেকে কেটে তাকে বিভাগীয় মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করে জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়।

এ সুপারিশের প্রেক্ষিতে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা সচীন কুমার রায় কর্তৃক অতিরিক্ত দুই বছর বেতন বাবদ নেয়া টাকা পেনশন থেকে কেটে নিয়ে তাকে বিভাগীয় মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত