ঢাকা, রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

কোটি টাকা নিয়ে স্কুল শিক্ষক উধাও

  নরসিংদী প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২১ জুন ২০১৯, ২১:১৮

কোটি টাকা নিয়ে স্কুল শিক্ষক উধাও

নরসিংদীর পলাশে সহকর্মীসহ বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে প্রায় এক কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছেন এক স্কুল শিক্ষক। পলাশ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজী শিক্ষক দেবজিত চন্দ্র ভৌমিক গত দেড় মাস ধরে টাকা নিয়ে অনেককে পথের ভিখারী বানিয়ে গেছে উধাও হয়ে গেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

দেবজিত ঘোড়াশাল পৌর এলাকার পাইকসা গ্রামের বিশ্বনাথ চন্দ্র ভৌমিকদের ছেলে।

পলাশ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, দেবজিত নম্র ও ভদ্র একজন শিক্ষক ছিলেন। এত বড় প্রতারণা কিভাবে করলো আমরাও হতবাক হয়ে গেছি। সে পালিয়ে যাওয়ার পর জানতে পারি শিক্ষকদের সমিতি থেকে আমার নামেও ৩ লাখ টাকা নিয়ে গেছে।

তিনি বলেন, আমার জানামতে দেবজিত আমার কাছ থেকে একটি গ্যারান্টি কার্ডে আমার স্বাক্ষর নিয়েছিল। তাছাড়া আমার স্কুলের অফিস সহকারী মাহবুবার কাছ থেকে ১০ লাখ, সহকারী শিক্ষক ইকবাল হোসেনের কাছ থেকে ৩ লাখ, মলিনার কাছ থেকে ৩ লাখ, নাজিম উদ্দিনের কাছ থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার ও স্কুল পিয়ন রাজিব চক্রবর্তীর কাছ থেকে ২ লাখ নিয়ে গেছে।

তাছাড়া তিনি নবম শ্রেণির শ্রেণি শিক্ষক থাকাকালীন গত ২ বছর ধরে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে উঠানো প্রায় ২ লাখ টাকাও নিয়ে গেছে বলেও তিনি জানান।

প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ২ বছর ধরে বিভিন্ন তালবাহানা করেছিল টাকা জমা দিতে। পরে তাকে ২ মাস আগে শ্রেণি শিক্ষকের পদ থেকে সরানো হয়। ৬২ দিন স্কুলে অনুপস্থিতির কারণে ও স্কুলের টাকা জমা না দেয়ার কারণে স্কুল কমিটি তাকে ৭ এপ্রিল ২০১৯ তারিখ তাকে শোকজ করে।

সরেজমিনে বাড়িতে গেলে দেবজিতের ভাই পিন্টু চন্দ্র ভৌমিক জানান, আমার ভাই আমাদের শেষ করে দিয়ে গেছে। আমার বাবার কাছ থেকে কৌশলে জমি ও বাড়ির কিছু অংশ লিখে নেয়। পরে সেগুলোও বিক্রি করে যায়। প্রতিদিন বাড়িতে পাওনাদাররা আসছে। সে প্রায় দেড় মাস ধরে উধাও এবং দেবজিতের স্ত্রী তমা ভৌমিক তার দুই সন্তান নিয়েও গত এক সপ্তাহ ধরে উধাও হয়ে গেছে। এসব ঘটনায় আমার বাবা ও মা শয্যাশায়ী হয়ে ঘরে পরে রয়েছে।

ঘোড়াশাল পৌর এলাকার আম্বালা ফাউন্ডেশন নামে এক এনজিওর কর্মকর্তা জানান, সে আমাদের শাখা থেকেও ৪ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ১টি কিস্তি দিয়ে আর ব্যাংকে আসেনি। বিভিন্ন লোক মারফত জানতে পারি সে বিভিন্ন জায়গা থেকে একই কায়দায় মোটা অংকের টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে।

এলাকাবাসী জানায়, দীর্ঘ সময় চাকরির সুবাদে শিক্ষক সমাজ, সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থাভাজনে পরিণত হন দেবজিত। আর সে সুযোগে পৌর এলাকার কাউন্সিলর মো. বিল্লাল হোসেনের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা, ব্যবসায়ী নাজমুল হোসেনের ৩ লাখ, ঘোড়াশাল পৌরসভার কর্মচারী শেখ মন্টুর ৭ লাখ, বাদল মিয়ার ৩ লাখ ৫০ হাজার, হারুন মিয়ার ২ লাখ, মাসুম মিয়ার ২০ লাখ, অসীম বণিকের ২ লাখ, মোস্তাক আহমেদের ৫ লাখসহ একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে অধিক মুনাফা দেয়ার কথা বলে প্রায় ১ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে তিনি উধাও হন।

ভুক্তভোগী এসব লোকজন জানান, দেবজিত এলাকায় একজন ভালো শিক্ষক হিসাবে সবার পরিচিত। বিভিন্ন ব্যবসার মাধ্যমে তিনি টাকা খাটিয়ে মুনাফা দেয়ার কথা বলে এবং মাতৃভূমি নামে এক সমিতি নিজে তৈরি করে এসব টাকা হাতিয়ে নেয়।

বেশিরভাগ লোকজনদের সে পূবালী ব্যাংক ঘোড়াশাল শাখার নামে তার ব্যাংক হিসাবের চেকে বিভিন্ন অংকের টাকা দিয়েছিল। কিন্তু তার ব্যাংক হিসাব নম্বরে কোনো টাকা নাই বলে ব্যাংক থেকে ভুক্তভোগীদের জানান।

বাদল মিয়া নামে এক ভুক্তভোগী জানান, তিনি তার কাছ থেকে ১ লাখ টাকা ও দুই জনের কাছ থেকে ধার এনে ২ লাখ টাকা মোট ৩ লাখ টাকা শিক্ষক দেবজিতকে ব্যবসার জন্য দেই। সে দুই মাস আমাকে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে ৬ মাস ধরে আর টাকা দেয় না। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি তিনি পালিয়ে গেছেন। পরে বাকি দুইজনের কাছ থেকে ধার করে নেয়া টাকা আমি নিজের গরু বিক্রি করে পরিশোধ করি। সে আমাকে পথের ভিখারি করে গেছে।

পলাশ উপজেলা শিক্ষক কর্মচারী কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন থেকে তার নামে ১০ লাখ ও বিভিন্ন শিক্ষকের নামে আরো ১৬ লাখ মোট ২৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে গেছে।

এ ব্যাপারে ক্রেডিট ইউনিয়নের সভাপতি মো. সুলতান উদ্দিন জানান, আমাদের ক্রেডিট ইউনিয়নের কমিটির সবার ঐক্যমতেই তাকে টাকা দেয়া হয়েছে। এখন তার পলায়নের খবরে আমরা হতাশ হয়ে পড়েছি।

পলাশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্কুল কমিটির সভাপতি রুমানা ইয়াসমিন জানান, দেবজিতের অর্থ আত্মসাতের ব্যাপারটি লোকমুখে শুনেছি কিন্তু এ ব্যাপারে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। তবে সে স্কুলে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত ও স্কুলের টাকা স্কুল ফান্ডে জমা না দেয়ার কারনে তাকে শোকজ করা হয়।

পলাশ থানার ওসি মো. মকবুল হোসেন মোল্লা জানান, এ বিষয়ে এখনো কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত