ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২১ মিনিট আগে
শিরোনাম

নায়কের চোখে ‘সরি দীপান্বিতা’

  ইমরুল নূর

প্রকাশ : ০৪ মে ২০২০, ১৬:৫৪  
আপডেট :
 ০৪ মে ২০২০, ১৯:২২

নায়কের চোখে ‘সরি দীপান্বিতা’

সমান্তরাল পথের বাঁকে, তোমার পথের দিশা থাকে, সে দিশা খোঁজে তোমাকে দীপান্বিতা ..! তারিফ এবং সিফাতের কণ্ঠে এমন কথার রোমান্টিক এ গানটি খুবই অল্প সময়ে জনপ্রিয়তা লাভ করে। খুঁজলে এমন তরুণ-তরুণী কাউকে পাওয়া যাবে না যে কিনা 'দীপান্বিতা' গানটি শুনেন নি।

'সরি দীপান্বিতা' নাটকের এ গানটি দর্শকমহলে বেশ জনপ্রিয়তা কুড়োয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছয় বন্ধুর কাহিনী নিয়ে নির্মিত এ নাটকের গল্প বাস্তবের কাছেও হার মেনে যায় একসময়।

খুব আনন্দে, হাসি গানে আর আড্ডায় কেটে যেত ছয় বন্ধুর ভার্সিটি লাইফ। তার মধ্যে যে ছেলেটি সবাইকে সবচেয়ে বেশি মাতিয়ে রাখতো তার নাম ছিল আকাশ। ঠিক সেসময় ভার্সিটিতে আগমন ঘটে নতুন বর্ষের এক তরুণীর, যার নাম দীপান্বিতা। চেহারার ছাপ, গড়ন সবকিছুতেই সুদর্শনা কিন্তু অনেকটাই সহজ সরল ও বোকা টাইপের মেয়ে ছিল সে। আর সে সরলতার সুযোগটাই নেয় আকাশ ও তার বন্ধুরা। তার সঙ্গে মজা করতে থাকে আর বোকা বানাতে থাকে।

সবাই তার নতুন একটা নাম রাখে দাপু। সেই বোকা দাপু মনে মনে আকাশকে ভালোবাসতে শুরু করে। বুঝাতে না চাইলেও আকাশের বন্ধুদের নানান কৌশলের কাছে হেরে যায় দাপু। ভার্সিটিতে সবার সামনে দাপুর ভালোবাসাকে অপমান করে আকাশ। সেই যন্ত্রণা সইতে না পেরে ভার্সিটিতে আসা বন্ধ করে দেয় মেয়েটি। অনকদিন তাকে দেখতে না পেয়ে আকাশ ও তার বন্ধুরা দাপুর খোঁজ নিতে তার মেস বাসায় গিয়ে যা দেখলো তা এক মুহূর্তে প্রত্যেককে অপরাধী বানিয়ে দিলো। সেদিনের পর আকাশের মনে ঘন কালো মেঘের মত আঁধার নেমে আসে।

লাখো মানুষের চোখে অশ্রু ঝড়ানো এ নাটকটি প্রচার হয়েছিল ২০১৪ সালের শুরুর দিকে। স্বরাজ দেবের চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় এতে দেখা মিলেছিল কতগুলো তরুণ মুখের। গল্পের আকাশ ও দীপান্বিতা চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন জীবন ও নাফিয়া।

৬ বছর পেরিয়ে গেলেও এ গল্পের নায়ক-নায়িকারা এখনও তরুণদের মনে রয়েছেন এক অন্যরকম ভালোবাসার জায়গায়।

আকাশ চরিত্রে রূপদানকারী জীবন রায় এখন অভিনয় নিয়ে বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন। অন্যদিকে গল্পের মূল আকর্ষণ দীপান্বিতা চরিত্রে রূপদানকারিনী নাফিয়া ব্যস্ত রয়েছেন স্বামী, সংসার ও সন্তান নিয়ে।

নাটকটিতে কাজের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে জীবন বলেন, 'সরি দীপান্বিতা' আমার কাছে একটা আবেগের নাম, ভালোবাসার নাম। এটার শুটিং করি আমরা ২০১৩ সালে। এটা আমার প্রথম কাজ। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে আমরা বন্ধুদের নিজেদের জমানো টাকা দিয়ে এই কাজটা করা। আমি তখন একদমই নতুন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় বর্ষে (ফিশারিজ) পড়তাম।

কাজটা করতে গিয়ে একটা সময় দেখি যে আমাদের পুরো একদিনের ফুটেজ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তখন তো শট বুঝতাম না, দেখা গেলো সব এনজি শট। এছাড়া জিবআর্ম, ট্রলির সব শট শেইক করছিল। কোনভাবেই সেই ফুটেজ নেওয়া গেলো না। পরে আমার বাবার কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে আরও একদিনের শুট করি আমরা। চারদিন শুট করেছিলাম আমরা। এরপর নির্মাতা দীপংকর দীপন দাদার প্যানেলে এটা এডিটিংয়ের জন্য দিয়েছিলাম।

কাজটার মধ্যে অনেক ভুল ছিল যার কারণে কোন চ্যানেলেই প্রথমে নাটকটি নিতে চাইতো না তখন। আমার মনে পড়ে তখন তো (২০১৩ সালে) ইউটিউবের প্রচলন ছিল না এত। তখন আমরা ডিভিডি কিনে ৫০ টা কপি করে রেখেছিলাম নাটকটির, চ্যানেলে জমা দেওয়ার জন্য। এমন কোন চ্যানেল নাই যেখানে যাই নি কিন্তু কোন চ্যানেলই নাটকটি প্রচার করতে চাইতো না। বলতো নায়ক নায়িকা নতুন মুখ, পরিচিত কেউ নেই। সবাই ফিরিয়ে দিত আর যারা চেয়েছিল তারা সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা রেটিং দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আমরা আর দেই নি।

আমরা 'দীপান্বিতা' গানটা প্রকাশ করি। এটা প্রকাশের পর দারুণভাবে সাড়া পেতে থাকি। সারাদেশে তখনও হিট হয় নি কিন্তু ময়মনসিংহে এটা হিট হয়ে গেছে। ময়মনসিংহের যেখানে যত জায়গায় গিয়েছি সবখানে এই গানটা শুনতে পেয়েছি। গানটা তরুণদের কাছে জনপ্রিয় হতে শুরু করে। সবার মুখে মুখে তখন এ গান! তখনও মানুষ জানতো না যে এটা কিসের গান বা কার গান!

একবছর হয়ে গেল কিন্তু কোন টিভি চ্যানেলই নাটকটি নিলো না। তাই আমরা সেসময় বন্ধুরা মিলে পরিকল্পনা করলাম প্রিমিয়ার শো করার। এরপর ক্যাম্পাসসহ ময়মনসিংহের প্রায় ১০০ জায়গায় নাটকটির পোস্টার লাগিয়েছি যে, আগামী সপ্তাহে নাটকটির প্রিমিয়ার।

আমাদের ক্যাম্পাসের অডিটরিয়াম হচ্ছে বাংলাদেশের সব ভার্সিটির চেয়ে বড়, সিট হলো ২২০০। সেখানেই প্রিমিয়ারের আয়োজন করি। শো এর টিকিট মূল্য ছিল মাত্র ২০ টাকা। সেদিন ক্যাম্পাসের সবাই তো আছেই শহরের অনেক অনেক মানুষ চলে আসে শো দেখতে। অডিটোরিয়ামে সেদিন একজন মানুষ দাঁড়ানোর মত সুযোগ ছিল না। সেদিন বিশ্বাসও করতে পারিনি এমন কিছু হবে। ৬০ হাজার টাকা পেয়েছিলাম টিকিট বিক্রি করে, এত মানুষ হয়েছিল শোতে। বিভিন্ন দৃশ্যের সময় সবার আবেগ যেন সত্যি চোখে পানি এনে দিয়েছিল।

টাইগার মিডিয়ার ইউটিউব চ্যানেলে এতদিনে 'দীপান্বিতা' গানটি তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠে। সবার মুখে মুখে চলে এসেছে গানটি। এরপর ২০১৪ এর ফেব্রুয়ারীতে আমার নিজস্ব চ্যানেলে নাটকটি আপলোড করি। গান এবং নাটক দুটোই জনপ্রিয়তা পওয়া শুরু করে। দেশের এমন কোথাও নেই যে এই গানটা বা নাটকটা দেখে নি বা গানটা শুনে নি। আমি যত জায়গায় গিয়েছি গানটা শুনতে পেয়েছি। 'র' বিষয়টা দর্শকদের মন ছুঁয়ে গেছে। দর্শকরা গ্রহণ করে ফেলে নাটকটিকে।

নাটকটা জনপ্রিয়তা পাওয়া শুরু করলে আমাদেরকে না জানিয়ে দুটি চ্যানেল নাটকটি তাদেরে চ্যানেলে প্রকাশ করে দেয়। পরে আমরাও আর কিছু বলি নি বা ক্লেইমও করি নি।

প্রত্যেকটা শিল্পীর কিছু কাজ থাকে যেটা তার সবচেয়ে বেশি পছন্দের। এখন আমার অনেক ভালো ভালো নাটক প্রচার হচ্ছে, অপূর্ব ভাই, আফরান নিশো ভাইদের সাথে। কিন্তু 'সরি দীপান্বিতা' আমার কাছে একটা আবেগের নাম।

সেইসময়ের স্মৃতি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, নাফিয়া (দীপান্বিতা) আমার ফ্যাকাল্টির এক ব্যাচ জুনিয়র। আমাদের দুজনেরই এটি প্রথম কাজ। শুটিং করার সময় অনেক মানুষ দেখতো, কেমন নাভাস লাগতো যেন!

আরেকটা মজার বিষয় শেয়ার করি, সেটা হলো- আমাদের প্রথম দিনের শুটিং যখন শেষ হলো এর পরে শুটিং কিছুদিন বন্ধ রাখতে হয়েছিল কারণ সে শুটিংয়ের মাঝখানেই নাফিয়ার বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পর সে শুটিংয়ে জামাই নিয়ে এসেছিল। আমরা তো পুরা অবাক। এরপরে আমরা বাকি শুটিং শেষ করি, অনেক মজা করি।

এখনও যখন নাটকটি দেখি মনে হয়, এখন যদি করতাম তাহলে হয়তো আরও ভালো করতাম। আবার মনে হয় তখন ভার্সিটিতে পড়ার সময় যে অ্যামেচার বিষয়টা থাকে, সেটাই দর্শকরা গ্রহণ করেছেন।

আইএন

  • সর্বশেষ
  • পঠিত