ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১০ মিনিট আগে
শিরোনাম

'অনিমেষ আইচ, আপনাকে স্যালুট'

  মোহাম্মদ আলী হায়দার

প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০১৭, ০০:৩২  
আপডেট :
 ২৬ আগস্ট ২০১৭, ০১:১৯

'অনিমেষ আইচ, আপনাকে স্যালুট'

গতকাল দেখে ফেললাম অনিমেষ আইচ এর 'ভয়ংকর সুন্দর' সিনেমা। আপনাকে স্যালুট নির্মাতা। আপনি সিনেমাই বানান এ-ই চাই, টেলিভিশন এর নাটকের সংখ্যার আধিক্যে আপনি হারিয়ে যাবেন না, এই কামনা করি।

গল্পের এত দারুন স্পাইন, নির্মাণের সুক্ষ করন কৌশল, চরিত্র নির্মাণের মুন্সিয়ানা নির্দেশক এবং অভিনেতাদের দিক থেকে, কন্টেন্ট এর দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ম্যাটাফর, এলিগরিকাল নির্মাণ গল্পে-আলোতে-পারিপার্শ্বিকতায়-সেট-ভাষায় এই বাংলাদেশে এত উচ্চমানের নির্মাণ আমার অদেখা। আমাদের দেশের সিনেমায় চরিত্র নির্মাণ বিষয়টা একবারেই হয় না বা আমি সহজে পাইনা। সাম্প্রতিক কয়েকটি ছবি যেমন আয়নাবাজী, অজ্ঞাতনামা, জালালের গল্পসহ আরও কয়েকটি ছবিতে আমরা চরিত্র নির্মাণের মুন্সিয়ানা পেয়েছি। কিন্তু 'ভয়ংকর সুন্দর' এর প্রত্যেকটি চরিত্র আমার মনে গেঁথে আছে।

পরমব্রত একেবারে মাস্টার অভিনেতা। শুরুতেই তার নৌকা দিয়ে কাজে যাবার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ই বলে দেয় এই চরিত্রটি একটি কম টাকা বেতনে কাজ করে, ভিতু, মেরুদণ্ডহীন একজন মানুষ, যিনি সবার কথায় জি জি করে, কোন মতামত দিতে পারে না বা দেয় না, কোন প্রতিবাদ করতে পারে না, আর কি লাগে! এই একটা শট দিয়ে পুরো চরিত্রটিকে দেখে ফেলার যে নির্মাণ, সেটা কিন্তু খুব সহজ নয়। প্রত্যেকটি চরিত্র নির্মাণ হয়েছে শতভাগ নতুনত্বে, নিজস্ব স্বকীয়তা নিয়ে।

নয়নতারা 'র প্রথম হাফ নির্মাণ নিয়েই শুধু আমার একটু অস্বস্তি ছিল, বার বার মনে হচ্ছিল ভাবনা হয়ত এখনও প্রস্তুত নয়, এই রকম একটি চরিত্র নির্মাণে কিন্তু দ্বিতীয় হাফ এ তার অসাধারণ মনোযোগী চরিত্রের সুক্ষে ঢোকা, প্রতি মুহূর্তের একশন-রিয়্যাকশন প্রথম হাফ এর সম্পূর্ণ আনাড়িপনা দূর করে দিয়েছে। পরে মনে হল, শুরুর আনাড়িপনাটা খুব যুতসই ছিল। এ নাহলে দ্বিতীয় হাফ এ তাকে হয়ত একঘেয়ে লাগত। বস্তির মানুষগুলো কি দারুন! বাড়িওয়ালী, তার স্বামী ফারুক আহমেদ, এদের এত সুনিপুণ অভিনয় আমি আগে দেখিনি।

অনেক অবাস্তব, পরাবাস্তব দৃশ্যের স্থাপন হয়েছে ছবিতে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে এই রকম কি হয়? পর মুহূর্তেই মনে হয় হয়ত। আমরা কে কোন অবস্থায়, অবস্থানে থাকি আমরা নিজেদের সেইভাবেই বিচার করি, কিন্তু অন্য অনেক বাস্তবতা আছে যেটা আমরা জানিনা। অনিমেষ তার ছবিতে সেই অদেখা বাস্তবতায় ডুবে ছিলেন। ছবির শুরু থেকেই লঞ্চ দিয়ে ঢাকায় আসা একটা মেয়ের পানি নিয়ে যেই উন্মাদনা শেষ পর্যন্ত আমরা দেখলাম, এটা সুনিপুণ সুতায় বেঁধেছেন নির্মাতা। ভবিষ্যৎ পৃথিবীর মানুষ, কেউ পানির জন্য হাহাকার করবে আর কেউ পানির উপর খাট বানিয়ে শুয়ে থাকবে, আনন্দ করবে এই ম্যাটাফর আমাদের দেশের সিনেমার গল্পে কোথায়! একদম সাল্ভাদর দালী'র ছবির মত। পরাবাস্তবতাকে বাস্তবে লালন। অনিমেষ এই জায়গায় তার মত করে একেবারে স্বকীয়, যিনি বানাতে পারেন নিজেদের সিনেমা, বাংলাদেশের সিনেমা, বৈশ্বিক উচ্চতায়।

খায়ের খন্দকার, ছোটখাটো এই মানুষটির সিনেমাটোগ্রাফী বিশ্বমানের। আমাদের দেশে এত ভালো সিনেমাটোগ্রাফার থাকতে আমরা কেন বিদেশমুখি আমার মাথায় ধরে না। খায়ের, আপনিও আর টিভি নাটকে কাজ করবেন না এই পণ করুন। বাংলাদেশের ছবি উজ্জ্বল হোক আপনার চোখে।

আমি একসময় ভাবতাম, আমাদের দেশের নির্মাতারা কবে ইউরোপ, ইরানের মত ছবি বানাবে!!! 'ভয়ংকর সুন্দর' দেখে আমার সেই দুঃখ দূর হল। আমাদের নির্মাতারা এখন বিশ্বমানের ছবি বানায়। এখন দরকার প্রয়োজনীয় সরকারী-বেসরকারী সহায়তা, প্রপার মার্কেটিং ও সিনেমার পরিবেশনার সুস্থ ব্যবস্থা। পরিবেশনাটা খুব নাজুক অবস্থায় আছে, সরকারের এটাতে মনোযোগ ও জোর খাটাতেই হবে, দেশের সিনেমা বাঁচাতে।

'ভয়ংকর সুন্দর' সিনেমাটি হলে গিয়ে দেখুন। এই রকম বিশ্বমানের সিনেমার দর্শক না হলে, আমাদের দেশের এই শিল্পে ধস নামবে, দেশপ্রেমিক মানুষ হিসেবে নিশ্চয়ই আমরা তা চাইব না।

অনিমেষ আইচ, আপনাকে আবারও স্যালুট। আপনি সিনেমাই বানাবেন আর কিছু নয়।

লেখক পরিচিতি: মোহাম্মদ আলী হায়দার অনুষ্ঠান প্রধান, দুরন্ত টেলিভিশন

/এসবি/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত