ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

উত্তর কোরিয়ার নতুন ক্ষেপণাস্ত্র সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০২০, ২২:২৭

উত্তর কোরিয়ার নতুন ক্ষেপণাস্ত্র সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে
ছবি: সংগৃহীত

উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির ৭৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার মধ্যরাতের পরপরই পিয়ংইয়ংয়ে যে সামরিক কুচকাওয়াজ হয়েছে তা নজিরবিহীন।

প্রচুর মানুষের অংশগ্রহণে কোনো ভুল-ভ্রান্তি ছাড়াই যে চোখ ধাঁধানো কুচকাওয়াজ হয়েছে, তেমন অনুষ্ঠান আয়োজনে উত্তর কোরিয়ার জুড়ি মেলা ভার।

চেয়ারম্যান কিম জং উন অনুষ্ঠানে আবেগে মোড়া একটি ভাষণ দিয়েছেন। তার দেশের সংগ্রামের ইতিহাসের কথা বলতে গিয়ে কয়েকবার তিনি চোখ মুছেছেন। কিন্তু নতুন একটি আন্ত-মহাদেশীয় দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) উন্মোচন ছিল শনিবার মধ্যরাতের জমকালো ঐ অনুষ্ঠানের প্রধান বিস্ময়।

উত্তর কোরিয়ার নতুন এই আন্ত-মহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রটি সম্পর্কে প্রধান যে তিনটি বিষয় জানা গেছে তা এরকম:

কিমের প্রতিশ্রুত ‘কৌশলগত অস্ত্র’

দু’হাজার বিশ সালের পহেলা জানুয়ারিতে কিম জং উন তার নতুন বছরের ভাষণে ঘোষণা করেছিলেন উত্তর কোরিয়া এমন সব অত্যাধুনিক অস্ত্র তৈরি করছে যা শুধুমাত্র ‘গুটিকয়েক আধুনিক রাষ্ট্রের হাতে রয়েছে।’

তিনি বলেছিলেন, তার সরকার ‘কৌশলগত’ - অর্থাৎ পারমাণবিক - অস্ত্র-সম্ভার তৈরির প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে।

কিম সেদিন যুক্তরাষ্ট্রর সাথে তার দেশের সম্পর্কের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন। তিনি বলেন, ডিপিআরকে‘র সাথে তাদের সম্পর্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যত টালবাহানা করবে, কালক্ষেপণ করবে, গণতান্ত্রিক কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের শক্তির সামনে তারা আরো বেশি অসহায় বোধ করবে। ডিপিআরকে কল্পনার চেয়েও বেশি শক্তি সঞ্চয় করছে, এবং (সম্পর্কে) অচলাবস্থা যুক্তরাষ্ট্রকে গহ্বরের আরো গভীরে নিয়ে যাবে।

যে পারমাণবিক মারণাস্ত্রের প্রতিশ্রুতি ১০ মাস আগে মি. কিম দিয়েছিলেন সেটাই নতুন এই আইসিবিএম, এবং এর টার্গেট যুক্তরাষ্ট্র। সম্পর্ক উন্নয়নের প্রক্রিয়া ব্যর্থ হওয়ার জেরে এমন একটি অস্ত্র অবধারিত ছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার নতুন হুমকি

উত্তর কোরিয়া এর আগেই দুটো আইসিবিএম পরীক্ষা করেছে। ২০১৭ সালে দুই বার তারা হুয়াসং-১৪ পরীক্ষা করে। পারমানবিক বোমা বহনে সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্র ১০,০০০ কিমি (৬২১৩ মাইল) দূরের লক্ষ্যবস্তু আঘাত করতে সক্ষম।

তার অর্থ, পুরো পশ্চিম ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডের অর্ধেক এখন কোরীয় এই পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের আওতায়।

ঐ একই বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে উত্তর কোরিয়া তাদের আরেকটি পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র হুয়াসং-১৫ পরীক্ষা করে যার পাল্লা ১৩,০০০ কিলোমিটার। অর্থাৎ এটি যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডের যে কোনো স্থানে আঘাত করতে সক্ষম।

শনিবার রাতে নতুন যে আইসিবিএমটি প্রদর্শন করা হয়েছে সেটির পরীক্ষা এখনও হয়নি। তবে এটিও দুই-ধাপ বিশিষ্ট তরল-জ্বালানি চালিত ক্ষেপণাস্ত্র, কিন্তু দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থে এটি হুয়াসং-১৫‘র চেয়ে এটি অনেকটাই বড়। এটির পাল্লা কত অর্থাৎ কতদূরের লক্ষ্যবস্তু এটি আঘাত করতে সক্ষম তা এর যন্ত্রের প্রযুক্তি তা না জানলে বা পরীক্ষা না করা পর্যন্ত বলা যাবেনা।

কিন্তু এই নকশা দেখে উত্তর কোরিয়ার লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য পরিষ্কার বোঝা যায়: ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা বাড়ানোর কোনো প্রয়োজন তাদের আর নেই। বদলে, তারা এখন চেষ্টা করছে একটি ক্ষেপণাস্ত্রে একাধিক পারমাণবিক বোমা বসানোর প্রযুক্তির প্রয়োগ।

এর সাফল্য যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য নতুন মাথাব্যথা তৈরি করবে, কারণ একটি পারমাণবিক বোমাকে প্রতিরোধের জন্য এমনিতেই একইসাথে অনেকগুলো ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়তে হয়। এখন যদি উত্তর কোরিয়া একটি ক্ষেপণাস্ত্রে একাধিক ওয়ারহেড বা বোমা স্থাপনে সক্ষম হয় তা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরো চাপে ফেলবে।

উদ্বেগের আশু কারণ

নতুন যে আইসিবিএম উত্তর কোরিয়া প্রদর্শন করেছে, তার নকশা দেখে ধারণা করা শক্ত যে কখন এটি পরীক্ষা করা হবে বা মোতায়েন করা হবে। তবে, যে সব ট্রাকের ওপর সেটি বহন করা হয়েছে, তা বাড়তি উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।

কোনো পারমাণবিক যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার জন্য এখনও যেটি উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে দুর্বলতা তাহলো যথেষ্ট লঞ্চার বা উৎক্ষেপকের অভাব।

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্য মতে, উত্তর কোরিয়ার ছয়টি লঞ্চার রয়েছে যা থেকে তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে পাল্টা আঘাত আসার আগে বড়জোর ১২টি আইসিবিএম উৎক্ষেপণে সক্ষম।

দু’হাজার দশ সালে উত্তর কোরিয়া গোপনে চীন থেকে ছয়টি WS51200 হেভি-ডিউটি ট্রাক আমদানি করে। তারপর তাতে হাইড্রোলিকস প্রযুক্তি প্রয়োগ করে সেগুলোকে চলমান ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ উপযোগী লঞ্চারে পরিণত করে।

সে ধরণের ট্রাকের ওপরেই নতুন ঐ ক্ষেপণাস্ত্রগুলো শনিবার রাতের প্যারেডে বহন করা হয়েছে, কিন্তু এই প্রথম ছটিরও বেশি তেমন ট্রাক চোখে পড়লো। অর্থাৎ, উত্তর কোরিয়া হয়তো এখন নিজেরাই নিজেদের মত করে এসব ট্রাক তৈরি করতে সমর্থ হচ্ছে বা জোগাড় করতে পারছে।

সুতরাং এটা পরিষ্কার যে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা স্বত্বেও উত্তর কোরিয়া এখনও হেভি-ডিউটি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপকের যন্ত্রপাতি জোগাড় করতে এবং এমনকী নিজেরাই হয়তো উৎক্ষেপক তৈরি করতে সক্ষম হচ্ছে।

উত্তর কোরিয়ার নতুন আইসিবিএম বাকি বিশ্বের জন্য একটিই বার্তা দিচ্ছে - তাদের রাষ্ট্র, নেতৃত্ব এবং তাদের মানুষের প্রযুক্তিগত সক্ষমতাকে যেন খাটো করে না দেখা হয়। সূত্র: বিবিসি বাংলা।

বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে

আরো পড়ুন:

> ট্রাম্পের পোস্টে ‘বিভ্রান্তিকর’ ট্যাগ টুইটারের

> ফাউসির বক্তব্য বিকৃত করে ট্রাম্পের প্রচারণা

> সঠিক উপায়ে দ্রুত মহামারি জয় করা সম্ভব: হু

> ট্রাম্পের জয় চায় তালেবানরা

> নিজেকে সুস্থ দাবি ট্রাম্পের

> ৫ দিনে কোটি লোকের করোনা পরীক্ষা করছে চীন

> করোনায় আক্রান্ত ট্রাম্প বললেন ‘দারুণ লাগছে’

  • সর্বশেষ
  • পঠিত