ঢাকা, রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

আলোচনা ব্যর্থ, সঙ্কটে মার্কেল

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০১৭, ১২:৪০  
আপডেট :
 ২১ নভেম্বর ২০১৭, ১৩:১০

আলোচনা ব্যর্থ, সঙ্কটে মার্কেল

সামনে এলো দু’মাস ধরে বিরাজমান চাপা উৎকণ্ঠা। সোমবার রাতেই ভেস্তে যায় চার জোট সঙ্গীর সঙ্গে অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের দীর্ঘ আলোচনা পর্ব। ফলে চরম রাজনৈতিক সঙ্কটের মুখোমুখি হচ্ছেন জার্মান চ্যান্সেলর।

পরিস্থিতি এতটাই শোচনীয় যে খুব শীঘ্রই জার্মানিতে ফের নির্বাচন হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। আর তা হলে হয়তো সরতে হতে পারে দীর্ঘ দুই যুগ ধরে চ্যান্সেলর থাকা মার্কেলকে। তিনি নিজে অবশ্য মুখে পরিস্থিতি সামলানোর কথা বলছেন। কিন্তু ভোট হলে তিনি কীভাবে এড়াবেন, ইতোমধ্যেই সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। একটি প্রথম সারির জার্মান পত্রিকা দেশের এই সঙ্কটময় রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ‘ব্রেক্সিট’ আর ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়’-এর সঙ্গেও তুলনা করছে। আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার খবর শুনে দাম কমছে ইউরোরও।

বিতর্কের সূত্রপাত বছর দু’য়েক আগে। বিশ্ব জুড়ে চলা শরণার্থী সঙ্কটের সময় প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও পশ্চিম এশিয়া এবং আফ্রিকার দশ লাখেরও বেশি শরণার্থীর জন্য দেশের দরজা খুলে দিয়েছিলেন মার্কেল। আর তার পর থেকেই কমতে থাকে তাঁর জনপ্রিয়তা। শরণার্থীর ছদ্মবেশে দেশে সন্ত্রাসীরা ঢুকে পড়েছে বলে অভিযোগ জানায় বিরোধী দলগুলো। এর পর পরই ২০১৬ সালে মোট সাতটি জঙ্গি হামলায় দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে প্রাণ হারান বাইশ জন। ধর্মভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের সঙ্গে সিরিয়া আর আফগানিস্তান থেকে আসা কিছু শরণার্থীও কয়েকটি হামলায় জড়িত বলে দাবি করে জার্মান পুলিশ। ফলে শুধু নিজ দেশেই নয়, গোটা ইউরোপে আরও কোণঠাসা হয়ে পড়েন মার্কেল।

এই অবস্থায় গত সেপ্টেম্বরে নির্বাচনের ডাক দেন মার্কেল। কিন্তু সেই ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাঁর দল ক্রিস্টিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ)। মাত্র তেত্রিশ শতাংশ ভোট পাওয়া মার্কেল তখন চারটি দলের সঙ্গে জোট গড়ার কথা ভাবতে শুরু করেন।

দু’মাস ধরে আলোচনার পর এফডিপি নেতা ক্রিস্টিয়ান লিন্ডনার জানিয়ে দেন, এই জোটে থাকা তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়।

তিনি স্পটভাষায় জানান, ‘দেশের উন্নয়নে কোনো সার্বিক লক্ষ্যমাত্রা দেখাতে পারেননি মার্কেল। রয়েছে বিশ্বাসের অভাবও।’ তিনি আরও বলেন,‘খারাপ ভাবে সরকার চালানোর থেকে সরকার না চালানো অনেক ভাল।’

জার্মান রাজনৈতিক মহলের অভ্যন্তরীন খবর, আয়কর ছাড়, পরিবেশ সংক্রান্ত নানা বিষয় নিয়ে সিডিইউ-র সঙ্গে মতবিরোধ হচ্ছিল বাকি দলগুলোর।

লিন্ডনারের সঙ্গে আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পরে একবারের জন্য সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন বিধ্বস্ত মার্কেল। তিনি বলেছেন, ‘দেশকে সঙ্কটের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য কার্যনির্বাহী চ্যান্সেলর হিসেবে যা করার, আমি তা করব।’

মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক ভাল্টার স্টাইনমাইয়ারের সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে তাঁর। ইতিমধ্যেই মার্কেলের পদত্যাগ দাবি করেছে বিরোধীরা।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে এত বড় রাজনৈতিক সঙ্কটে পড়তে হয়নি জার্মানিকে। এই অবস্থায় মার্কেলের সামনে চারটি পথ খোলা আছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।

প্রথমত, কোনোভাবে লিন্ডনারকে রাজি করিয়ে তাঁকে ফের আলোচনায় টেনে আনা। দ্বিতীয়ত, এসপিডি নামক অন্য এক দলের সঙ্গে নতুন করে জোটের রাস্তায় হাঁটা। তৃতীয়ত, সংখ্যালঘু অবস্থাতেই সরকার চালানো। আর সব শেষে দ্রুত ফের ভোটের ব্যবস্থা করা। যদিও ভোট হলে মার্কেলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার সম্ভাবনা যে খুবই ক্ষীণ, তা স্বীকার করে নিচ্ছেন দলের অনেকেই। মঙ্গলবার ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁর সঙ্গেও কথা বলেন মার্কেল।

এই অবস্থায় কপালে চিন্তার ভাঁজ টেরেসা মে-রও। কারণ ব্রেক্সিটের উপরে এই সঙ্কটের প্রভাব পড়বে একশো শতাংশ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার এই সময়টায় ব্রিটেনের সঙ্গে তাদের দর কষাকষি এখন চরমে। এই অবস্থায় মার্কেলই গোটা প্রক্রিয়ায় মধ্যস্থতাকারী ভূমিকা নিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি নিজেই দুর্বল হয়ে পড়লে ব্রেক্সিট আলোচনাও প্রশ্নের সম্মুখীন।

সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস

/এসএস/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত