ঢাকা, রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩০ মিনিট আগে
শিরোনাম

তীব্র অর্থ সঙ্কটে দিশেহারা ইউক্রেন

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৩:২৪  
আপডেট :
 ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৩:২৮

তীব্র অর্থ সঙ্কটে দিশেহারা ইউক্রেন
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ফাইল ছবি।

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে ইউক্রেনে হামলা চালায় রাশিয়ার বাহিনী। সেই হিসাবে দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় ধরে রাশিয়ার সঙ্গে চলা যুদ্ধে নাজেহাল অবস্থা ইউক্রেনের। তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত দেশটি। যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রদের কাছ থেকে দ্রুত আর্থিক সহায়তা না পেলে ২০ লাখ মানুষের বেতন-ভাতা বন্ধ করে দিতে হবে। প্রায় ১০ লাখ মানুষকে মানবিক সহায়তাও দিতে পারবে না দেশটির সরকার।

সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনীতি ফোরামে যোগ দিতে গিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সাংবাদিকদের বলেন, এমনটা চলতে থাকলে গোটা ইউরোপ বিশাল সংকটের মুখে পড়বে। তার মতে, আন্তর্জাতিক আর্থিক সহায়তা না পেলেও ইউক্রেন লড়াই চালিয়ে যাবে। তবে সে ক্ষেত্রে রাশিয়া ইউক্রেন দখল করতে সমর্থ হবে।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি পশ্চিমা সহায়তার অভাবে রাশিয়ার জয় ও ইউরোপের জন্য বড় সংকটের পূর্বাভাস দেন। আমেরিকা ও ইউরোপে রাজনৈতিক জটিলতার কারণে ইউক্রেনের জন্য সহায়তায় বিলম্ব ঘটায় উদ্বিগ্ন জেলেনস্কি।

এর আগে গত ডিসেম্বরে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ওয়াশিংটন ও ব্রাসেলসকে একটি চিঠি লেখেন। এতে তিনি ১১০ বিলিয়ন বা ১১ হাজার কোটি ডলারের অর্থসহায়তা দ্রুত দেয়ার আহ্বান জানান।

প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ওই চিঠিতে জানান, এই সহায়তা না পেলে তার ২০ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকেই বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া মানবিক সহায়তা পাওয়া প্রায় ১০ লাখ নাগরিক ভয়াবহ অর্থসংকটে পড়বেন। জানা গেছে, দেশটিতে ১৪ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন বিজ্ঞান ও শিক্ষা খাতে। ৫০ হাজার নাগরিক বাজেট-সংক্রান্ত এবং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিযুক্ত। ৭ লাখ মানুষ মাতৃত্বকালীন ভাতা পান। ১ লাখ ৬০ হাজার নাগরিক আছেন, যাদের আয় খুবই নিম্নমানের। ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, বাজেট ঘাটতি রোধে এখনই তার দেশের ৩ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের বেশি প্রয়োজন।

জানা গেছে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সামরিক খাতে ৪ হাজার ৬০০ কোটি ডলার, ২ হাজার ৬০০ কোটি ডলার বাজেট খাতে এবং মানবিক সহায়তা খাতে ৪০০ কোটি ডলার প্রদান করেছে। যুক্তরাষ্ট্র তার প্রতিরক্ষা খাতের ৬ শতাংশই ইউক্রেনকে সহায়তা হিসেবে দিয়েছে। এছাড়া এ পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়ন ৯ হাজার ৬শ’ কোটি ডলারের সহায়তা দিয়েছে।

এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) জানিয়েছে, প্রথম বছরের যুদ্ধে ইউক্রেন তার জিডিপির ৩০ শতাংশ হারায়। ইউক্রেনের অর্থনীতি পুনর্গঠনে প্রয়োজন হবে অন্তত ৪৮৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা দেশটির ২০২৩ সালের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ২ দশমিক ৮ গুণ। বিশ্বব্যাংক, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় কমিশন ও ইউক্রেনীয় সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদন অনুসারে, আবাসন খাতে ৮০ বিলিয়ন ডলার, পরিবহনে ৭৪ বিলিয়ন, বাণিজ্য ও শিল্প খাতে ৬৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। কিয়েভ স্কুল অব ইকোনমিকসের প্রেসিডেন্ট টিমোফিম্যালিভানভ বলেন, ইউক্রেনের অর্থনীতির অবস্থা এখন খুবই সংকটজনক। অর্থনীতি এখন যুদ্ধভিত্তিক।

তিনি জানান, কিয়েভের অর্থনীতি এখন বিদেশি সাহায্যনির্ভর। দেশটির অর্থনীতি পরিচালনা করতে এখন ইউরোপের সহায়তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দেশের মধ্যে যে করের অর্থ আদায় হয়, তার সবই প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় হচ্ছে।

এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ইউক্রেন অর্থসহায়তা না পেলে সংকট এতটা বাড়বে, যা কল্পনাও করা যায় না। প্রতিরক্ষা খাতে ধস নামবে, ইউরোপে শরণার্থীর ঢল নামবে। এমনকি অর্থসংকটে দেশটিতে সামাজিক অস্থিরতা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে জানান টিমোফিম্যালিভানভ।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইউক্রেনকে ১১ হাজার কোটি ডলার সহায়তা দেয়ার কথা থাকলেও তা অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে তা আটকে আছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সরকার ইউক্রেনের জন্য ধার্য প্রায় ৬ হাজার ১০০ কোটি ডলার অঙ্কের সহায়তা দেয়ার অঙ্গীকার করেছে। তবে সেটি কংগ্রেসের উভয় কক্ষে পাশ করাতে বেগ পেতে হচ্ছে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে। বিরোধী রিপাবলিকান দলের নেতারাও ইউক্রেনের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে উদ্বেগের কথা স্বীকার করেছেন। তবে তারা ইউক্রেনকে এত অর্থসহায়তা দেয়ার বিরোধিতা করছেন। তারা জানতে চান, এই সহায়তা দিলে ইউক্রেন যুদ্ধে জিততে পারবে কি না।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে চাওয়া আগামী চার বছরের জন্য প্রায় ৫৫ বিলিয়ন ডলার বা ৫ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের সহায়তার প্রশ্নে হাঙ্গেরি ভেটো প্রয়োগ করায় বিষয়টি স্থগিত রয়েছে। তবে ইইউ কমিশন ও ইইউ পার্লামেন্ট সেই বাধা অতিক্রম করার চেষ্টা চালাচ্ছে। হাঙ্গেরির আপত্তি সত্ত্বেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাকি ২৬টি দেশ দ্বিপাক্ষিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে সেই সহায়তার সিংহভাগ ইউক্রেনের হাতে তুলে দিতে পারে, এমন সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এমনটা হলে হয়তো কিছুদিন পর্যন্ত ইউক্রেন তার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে। তবে তা কতদিন...?

বাংলাদেশ জার্নাল/এসএস

  • সর্বশেষ
  • পঠিত