ঢাকা, রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ মিনিট আগে
শিরোনাম

নগ্ন করে জাতীয় পতাকায় মুড়িয়ে প্যারেড

নগ্ন করে জাতীয় পতাকায় মুড়িয়ে প্যারেড

ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পুলওয়ামাতে আত্মঘাতী হামলার পর যারা সোশ্যাল মিডিয়াতে 'যুদ্ধবিরোধী' পোস্ট দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ হামলা চালাচ্ছে তথাকথিত দেশপ্রেমিক জনতা।

এমনকি পশ্চিমবঙ্গের মত প্রগতিশীল রাজ্যেও বেশ কয়েকটি প্রতিশোধমূলক ঘটনা ঘটেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এমনকি অনেককে ভারতের জাতীয় পতাকায় মুড়িয়ে রাস্তায় ঘোরানো হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের ‘ভারতমাতা কি জয়’ স্লোগান দিতেও বাধ্য করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

এছাড়া অনেককে ধর্ষণ বা খুনের হুমকিও দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন পশ্চিবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, দেশপ্রেমের নামে বাংলায় অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা বরদাস্ত করা হবে না। আর এসব হামলার জন্য বিজেপি ও তাদের অঙ্গ সংগঠন আরএসএস’কে দায়ী করেছেন মমতা।

বিবিসি বলছে, কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার পর পশ্চিমবঙ্গে গত আটচল্লিশ ঘন্টাতে দেশবিরোধিতার অভিযোগ এনে যত হামলা চালানো হয়েছে, তা নজিরবিহীন।

যুদ্ধ বিরোধী পোস্ট দেয়ায় বরখাস্ত করা হয়েছে রাজ্যের দুর্গাপুর এলাকার কৃষ্ণেন্দু সেনগুপ্ত নামের কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা জীবন বিমা নিগমের এক কর্মীকে।

কোচবিহারের অনীক দাস নামে এক যুবক ফেসবুকে লিখেছিলেন তিনি যুদ্ধ সমর্থন করেন না। এই অপরাধে তাকে ক্ষুব্ধ জনতা তাকে উলঙ্গ করে ‘পাকিস্তান মুর্দাবাদ’ স্লোগান দিতে বাধ্য করে।

এ সংক্রান্ত এক ভিডিওতে দেখা গেছে, স্থানীয় কিছু লোকজন অনীকের ওপর চড়াও হয়ে কৈফিয়ত দাবি করতে থাকেন, তিনি কেন ভারতের বিরুদ্ধে ফেসবুকে কথা বলেছেন?

ওই যুবক বলার চেষ্টা করছিলেন, তিনি শুধু এটুকুই জানাতে চেয়েছিলেন উগ্র দেশপ্রেমের নামে যা সব বলা হচ্ছে তিনি তা সমর্থনও করেন না, আবার বিরোধিতাও করেন না।

কিন্তু তার কথায় কর্ণপাত না-করে জনতা জামাকাপড় খুলে তাকে উলঙ্গ করে দেয়। তারা তার হাতে ভারতের তেরঙা পতাকা ধরিয়ে দেয়। এরপর তাকে ‘হিন্দুস্তান জিন্দাবাদ’ ও ‘পাকিস্তান মুর্দাবাদ’ স্লোগান দিতে বাধ্য করা হয় ।

একই রকম ঘটনার খবর পাওয়া গেছে শিলিগুড়ি, শ্রীরামপুর বা পশ্চিমবঙ্গের আরও নানা জায়গা থেকেও।

হাবড়াতে অর্ণব রক্ষিত নামে একজন সতেরো বছরের ছাত্র তার মিছিলের ছবি ফেসবুকে দিয়ে পুলিশের হাতে আটক পর্যন্ত হয়েছেন।

অর্ণবের প্রতিবেশী শম্ভু সরকার বিবিসিকে বলছিলেন, ‘ওদের সংগঠন একটা মিছিল বের করেছিল - যাতে অর্ণবের হাতে ধরা একটা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল পুলওয়ামার শহীদদের প্রতি যেমন, তেমনি কাশ্মীরিদের প্রতিও আমাদের সমবেদনা আছে।’

এ সম্পর্কে শম্ভু সরকার বলেন, ‘সেই ছবি ফেসবুকে দেওয়ার পরই কিছু লোকজন ওর বাড়িতে চড়াও হয়ে দাবি করতে থাকে ওই পোস্ট মুছে ফেলে ওকে ক্ষমা চাইতে হবে। ওদের করা এফআইআরের ভিত্তিতেই পুলিশ গতকাল অর্ণবকে হেফাজতে নেয়। পরে সোমবার তাকে জুভেনাইল হোমে পাঠানো হয়েছে।’

পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বিভাগের প্রধান অনুজ শর্মা সোমবার বিকেলে জানান, রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকেই দেশদ্রোহিতার অভিযোগ এনে হামলার খবর পাওয়া যাচ্ছে - আর পুলিশ এগুলো ঠেকাতে কড়া ব্যবস্থা নেবে।

শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, ভারতের অন্যান্য রাজ্যেও একই ঘটনা ঘটেছে। যারা নিজেদের যুক্তি প্রদর্শন করছেন বা যুদ্ধ বিরোধী কথা বলছেন তারাই জনতার রোষের শিকার হচ্ছে।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে পুলওয়ামার হামলার পর ‘দেশপ্রেম’ শব্দটি নিয়েই ভারতের জনমতে পরিষ্কার বিভক্তি তৈরি হয়েছে, যার বাইরে নেই পশ্চিমবঙ্গও।

যুদ্ধ বিরোধী পোস্ট দেয়ায় বরখাস্ত জীবন বিমা কর্মী কৃষ্ণেন্দু সেনগুপ্ত

সূত্র: বিবিসি বাংলা

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত