ঢাকা, রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

নোবেল বিজয়ী অভিজিৎ, এসথারের গবেষণায় বাংলাদেশ

নোবেল বিজয়ী অভিজিৎ, এসথারের গবেষণায় বাংলাদেশ

অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর টেকসই উন্নয়নের লক্ষে ২০০২ সালে দারিদ্র্য দূরীকরণে বাংলাদেশে একটি প্রকল্প হাতে নেয় ব্র্যাক। ক্ষুদ্র ঋণসহ দারিদ্র্য দূরীকরণের প্রচলিত যেসব প্রকল্প ছিল এটি তার চেয়ে আলাদা।

ঋণ বা অর্থ সহায়তা দিয়েই এখানে দায়িত্ব শেষ হয় না। তার বদলে প্রয়োজনের ভিত্তিতে অতিদরিদ্রদের গবাদিপশু, হাঁস-মুরগী, নৌকার মতো বিভিন্ন সম্পদ দেয়া হয়, যা দিয়ে তারা উপার্জন করতে পারেন। থাকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, নিশ্চিত করা হয় স্বাস্থ্যসেবাও। পাশাপাশি ব্র্যাকের কর্মীরা নিয়মিত মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন করেন যাতে কেউ কোনো সমস্যায় না পড়ে। পরবর্তীতে মূল্যায়ন পরীক্ষায় দারিদ্র্য দূরীকরণে এই প্রকল্পটির সাফল্য প্রমাণিত হয়।

ব্র্যাকের উদ্ভাবিত মডেলটি কি বাংলাদেশের বাইরেও দারিদ্র্য দূরীকরণে কাজে লাগবে? চিকিৎসাশাস্ত্রে বহুলব্যবহৃত ‘র‌্যান্ডমাইজড কন্ট্রোল ট্রায়াল’ এর মাধ্যমে সেটিই পরীক্ষা করতে চেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি-এমআইটির অভিজিৎ ব্যানার্জি, এসথার ডুফলো দম্পতি।

স্থানীয় এনজিওগুলোর মাধ্যমে ছয়টি দেশে এই ধরণের প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন তারা। তাদের সহযোগিতা দেয় এমআইটির আব্দুল লতিফ জামিল পভার্টি অ্যাকশন ল্যাব এবং ইনোভেশনস ফর পভার্টি অ্যাকশন নামের একটি অলাভজনক সংস্থা।

অভিজিৎ-এসথারের গবেষণাটি প্রকাশ হয় ২০১১ সালে। পরবর্তীতে এ নিয়ে প্রতিবেদন ছাপা হয় গবেষণাধর্মী জার্নাল ন্যাচার ও ইকোনমিস্টে।

প্রতিবেদনগুলো অনুযায়ী, অভিজিৎ ও তার সহকর্মীরা গবেষণার জন্য দুইটি দল বেছে নেন, একটি প্রকল্পের অধীনে থাকা পরিবারগুলো অন্যটি এই সুবিধার বাইরে থাকা অতিদরিদ্ররা। দুইবছর পর তারা পরীক্ষা করে দেখেন দুই দলের মধ্যে অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়েছে কি না।

ফলাফলে দেখা যায়, কর্মসূচীতে অংশগ্রহণকারীদের খাদ্য গ্রহণের পরিমান পাঁচ ভাগ বেড়েছে, বেড়েছে আয়ের পরিমানও। সেইসাথে তাদেরকে যেসব সম্পদ দেয়া হয়েছিল তার মূল্যও ১৫ ভাগ বেড়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো এই কর্মসূচী শেষ হওয়ার এক বছর পর খোঁজ নিয়েও তাদের স্বচ্ছল জীবন যাপনের চিত্র পেয়েছেন তারা। ছয়টি দেশের ১০ হাজার দরিদ্র পরিবারের উপর গবেষণাটি চালানো হয়েছিল সাত বছর ধরে।

সব মিলিয়ে গত ১৬ বছর ধরে অতিদরিদ্র দূরীকরণ নিয়ে গবেষণা করে আসছেন অভিজিৎ, এসথার ডুফলো ও সেনথিল মুলাইনাথান। সেখান থেকে উঠে এসেছে বেশ কিছু যুগান্তকারী চিন্তাধারা, যার সাম্প্রতিকতম ফল ২০১৯ সালে প্রকাশিত অভিজিৎ ও এসথারের ‘হোয়াট দ্য ইকোনোমি নিডস নাও’ শীর্ষক বইটি।

অতিদরিদ্র মোকাবেলা নিয়ে গবেষণা করে চলতি বছর অর্থনীতিতে নোবেল পেয়েছেন অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়সহ তিন অর্থনীতিবিদ।

নোবেল কমিটি তাদের ঘোষণায় বলেছে, গোটা বিশ্বে দারিদ্র্য দূরীকরণে তারা সবার জন্য গ্রহণযোগ্য একটি সমাধান হাজির করেছেন। সেই সঙ্গে তাদের অভিজ্ঞতা ভিত্তিক গবেষণা পদ্ধতিটি উন্নয়ন অর্থনীতিতেও নতুন এক ধারার জন্ম দিয়েছে।

অভিজিৎ এবং তার সহকর্মীদের কাজ সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসে ২০১১ সালে ব্র্যাকের উদ্ভাবিত মডেলটি নিয়ে গবেষণার পর সে বছরই তারা ‘পুওর ইকোনমিক্স’ বইটি প্রকাশ করেন, যা ‘গোল্ডম্যান স্যাকস বিজনেস বুক অফ দ্য ইয়ার’ পুরস্কার পায়।

ব্র্যাকের আলট্রা পুওর গ্র্যাজুয়েশন প্রোগ্রামের প্রধান রোজিনা হক বলেন, অভিজিৎ ও তার সহযোগী গবেষকবৃন্দের দারিদ্র্য বিষয়ক গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ব্র্যাকের আলট্রা পুওর গ্র্যাজুয়েশন মডেলটি। তাছাড়া বিভিন্ন দেশের স্থানীয় পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে সেখানকার চরম দরিদ্র মানুষের অবস্থা পরিবর্তনে কীভাবে কাজে লাগানো সম্ভব সে বিষয়ে তাদের গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দিয়েছে।

রোজিনা জানান, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ৪৭টি জেলায় ২০ লাখের বেশি পরিবার তাদের এই কর্মসূচির সুফল পেয়েছে। এর কার্যকারিতা প্রমাণ হওয়ায় ৪০ টিরও বেশি দেশে এই মডেলটি স্থানীয় বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বিভিন্ন দেশে এসব প্রকল্পের কিছু ব্র্যাক নিজে বাস্তবায়ন করছে, বাকিগুলো করছে সেসব দেশের সরকার অথবা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা। তথ্যসূত্র: ডয়সে ভেল।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত