ঢাকা, রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : কিছুক্ষণ আগে
শিরোনাম

কাশ্মীরের মুসলিমদের নিশ্চিহ্ন করতে চায় ভারত

কাশ্মীরের মুসলিমদের নিশ্চিহ্ন করতে চায় ভারত
কাশ্মীরি মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়িয়ে সমালোচিত সন্দীপ চক্রবর্তী

ইসরায়েল যেভাবে গায়ের জোরে ফিলিস্তিনিদের ভূমি দখল করে মধ্যপ্রাচ্যে নিজস্ব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে, অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীরে সংখ্যালঘু মুসলিমদের উচ্ছেদ করে একইভাবে হিন্দু পণ্ডিতদের বসতি গড়ার কথা জানিয়েছেন এক ভারতীয় কূটনীতিক। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের এক সমবেশে জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে এই বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন নিউইয়র্ক সিটির ভারতীয় কনসাল জেনারেল সন্দীপ চক্রবর্তী। তার এসব বক্তব্য নিয়ে সোশ‌্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড় বয়ে গেলেও এ নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

সম্প্রতি নিউইয়র্ক সিটিতে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের এক সভায় কনসাল জেনারেল সন্দীপ বলছেন, ‘আমি মনে করি আমাদের সবাইকে কাশ্মীরি সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখতে হবে। কাশ্মীরি সংস্কৃতি আসলে ভারতীয় সংস্কৃতি, এটি হিন্দু সংস্কৃতি। আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায় হিসাবে সেখানে কখনই নিজেদের এই হিন্দু সংস্কৃতির শক্তি ব্যবহার করিনি। এখন থেকে আমাদের সেখানে হিন্দু সংস্কৃতি তুলে ধরতে হবে।’

এরপর তিনি কাশ্মীরি পণ্ডিতদের লক্ষ্য করে বলেন, ‘আমার বিশ্বাস সেখানকার নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি হবে এবং আপনারা নিজেদের জীবদ্দশাতেই সেখানে ফিরে যেতে পারবেন। সেখানে আপনাদের সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দেয়া হবে। কেননা আমাদের সামনে আছে ইসরায়েলি মডেল। ইসরায়েল পারলে আমরাও পারবো। ওরা নিজেদের সংস্কৃতিকে নিজেদের ভূখণ্ডের বাইরেও দু’হাজার বছর ধরে টিকিয়ে রাখতে পেরেছিল। আমাদেরও একই ভাবে কাশ্মীরি সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। কারণ কাশ্মীরের সংস্কৃতিই ভারতের সংস্কৃতি। ’

তিনি বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি না, আমরা কেন এখনও এই মডেলটি অনুসরণ করছি না। এটা তো মধ্যপ্রাচ্যেই ঘটেছে। ইসরায়েলি জনগণ যদি এটি করতে পারে, তবে আমরাও এই মডেল বাস্তবায়ন করতে পারি।’

তবে তার এই জাতিগত বিদ্বেষমূলক বিবৃতির ভিডিও প্রকাশ হতেই সামাজিক মাধ্যমগুলোতে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সিরাকাস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধ্যাপক মোনা বাহান একে ‘ভয়াবহ ভিডিও’বলে উল্লেখ করেছেন।

তিনি বলেন, কাশ্মীরি পণ্ডিতদের সেখানে ফেরাতে এ ধরনের হিংস্র ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য মেনে নেয়া যায় না।’

একজন উর্ধ্বতন ভারতীয় কূটনীতিক কীভাবে এ ধরনের বিদ্বেষমূলক বিবৃতি দেয়ার সাহস পেলেন, এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেনকাশ্মীরি উপন্যাসিক ও সাংবাদিক মির্জা ওয়াহিত।

তিনি কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরার কাছে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ভারতীয় পররাষ্ট্র নীতি অনুযায়ী কাশ্মীরের ঘটনা নিয়ে যেখানে ব্যক্তিগত ভাবেও দেশে বা বিদেশে কোনো সমাবেশ করা যায় না, সেখানে একজন উচ্চপদস্থ ভারতীয় কর্মকর্তা কীভাবে প্রকাশ্যে কাশ্মীর নিয়ে এ ধরনের চরমপন্থি কথাবার্তা বলেন, তা ভেবে যে কেউ অবাক হবেন।’

প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট জম্মু -কাশ্মীরের ওপর থেকে বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন ৩৭০ ধারা তুলে নেয়ার পর থেকে কার্যত অবরুদ্ধ রয়েছে সেখানকার বাসিন্দারা। ৩ মাসেও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে টেলিফোন ও ইন্টারনেট যোগাযোগ। কারাবন্দি করা হয়েছে সকল কাশ্মীরি নেতাদের। রাজনৈতকি বিশ্লেষকদের ধারণা, ভারতের একমাত্র মুসলিম প্রধান রাজ্যটিকে কব্জা করার জন্যই ৩৭০ ধারা বাতিল করেছে হিন্দুবাদী মোদি সরকার। তারা সেখানে মুসলিমদের সংখ্যালঘু করতে সেখানে নতুন নতুন হিন্দু বসতি নির্মাণের পাঁয়তারা করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। আর এক্ষেত্রে তাদের সামনে রয়েছে ইসরায়েলি মডেল, যার কথা উল্লেখ করেছেন ভারতীয় কনসাল জেনারেল সন্দীপ চক্রবর্তী।

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত