ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

ভাদ্র মাসের বেতাল গরমে ‘তাল’

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৫:৩৪  
আপডেট :
 ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৫:৪৫

ভাদ্র মাসের বেতাল গরমে ‘তাল’

প্রকৃতিতে এখন চলছে ভাদ্র মাস। কথায় বলে ভাদ্র মাসের গরমে তাল পাকে। কিন্তু এবারের ভাদ্রের শুরুতেই বৃষ্টি দাপট দেখিয়েছে। ফলে মাসের শুরুতে ভাদ্রের চিরচেনা রূপটি বোঝা যায়নি। কিন্তু বৃষ্টি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বমূর্তিতে হাজির হয়েছে ভাদ্র। ভাদ্র মাসের ‘তালপাকা’ গরমে তাল নিয়ে লেখাটা খুব আনন্দদায়ক নয়। ব্যাপারটা একটু বেতালই বটে! আবার এই ভাদ্রের গরমেই পাকা তাল খেতে হয়।

তালগাছ প্রায় ৬০ ফুটের মতো উঁচু হতে পারে। আর সে কারণেই বহুদূর থেকেও সে গাছ দেখে বলা যায় ‘ওই দেখা যায় তালগাছ, ওই আমাদের গাঁ’। সব তালগাছেই যে তাল হবে, তা নয়। ছোটবেলা থেকেই শুনে এসেছি, ‘পুরুষ’ গাছে তাল ধরে না-সে গাছ থেকে শুধুই রস পাওয়া যায়। তাল হয় ‘মাতৃ’ নারী গাছে। কাঁচা ও পাকা-দুই অবস্থায়ই তাল সুস্বাদু খাবার।

কচি তাল কচি ডাবের মতোই সুস্বাদু। জ্যৈষ্ঠের খরতাপে এই কচি তালশাঁস তৃষ্ণা নিবারণ তো করেই, সঙ্গে তালের শাঁসে থাকা জলীয় অংশ শরীরের পানিশূন্যতা দূর করে দেহ রাখে ক্লান্তিহীন। ডাবের পানির মতোই এটি প্রাকৃতিকভাবে আমাদের শরীরে শক্তি জোগায়।

‘তালপাকা গরম’ বলে বাংলায় একটি প্রবাদ আছে, বাঙালি মাত্রই যেটা ব্যবহার করে থাকেন। গরম না হলে তাল পাকবে না, এটাই স্বাভাবিক। সে গরমটা হয় এই বাংলা ভাদ্র মাসে। চিটপিটে গরম, ভ্যাপসা গরম, যা-ই বলি না কেন, তালপাকা গরম তা-ই। কিন্তু দেখুন, এবার কী এক অদ্ভুত আবহাওয়া বিরাজ করছে! আকাশে মেঘের ঘনঘটা, হঠাৎ করে নেমে পড়ছে বৃষ্টি। আমরা ইলিশের ভাজা দিয়ে খাচ্ছি খিচুড়ি। আর তাল?

বসন্তের সেই কবিতার মতো বলতেই হয়, গরম পড়ুক আর না-ই পড়ুক তাল পেকেছে। শুধু তা-ই নয়, পাকা তালে এখন তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন খাবার।

পাকা তালের রসের সঙ্গে চালের গুঁড়া আর গমের আটা মিশিয়ে বানানো হয় তালের বড়া, চালের গুঁড়া মিশিয়ে বানানো হয় পিঠা, দুধের সঙ্গে তালের রস মিশিয়ে বানানো হয় তালক্ষীর। এ ছাড়া কোথাও কোথাও খাওয়া হয় তালের রুমালি রুটি, ময়দা-আটার সঙ্গে মেখে পরোটা। তালের সরু চাকলি মানে তাওয়ার ওপর রেখে বানানো হলদে সাদা রঙের ফিনফিনে দোসা ক্ষীরে ডুবিয়েই যা খাওয়ার নিয়ম। এ ছাড়া এই আধুনিক সময়ে রন্ধন পটীয়সীরা তৈরি করে থাকেন কলাপাতায় তালপিঠা, তালের স্পঞ্জ কেক, কেক গ্লেইজ।

সম্ভবত সবচেয়ে বেশি খাওয়া হয় তালের ফুলুরি। আটার সঙ্গে তালরস মিশিয়ে ডুবো তেলে ভেজে নিলেই হয়ে যায় তালফুলুরি। নোনতা নাকি মিষ্টি, সে স্বাদের ব্যাপারটা নির্ভর করবে ‘খানেওয়ালা’দের ওপর—নোনতা খেলে লবণ আর মিষ্টি খেলে গুড়। সাধারণত মানুষ তালফুলুরি মিষ্টিই খায়। সে যা হোক, তালপাখা দিয়ে হাওয়া খেতে খেতে আপনি তালফুলুরি যখন-তখন খেতেই পারেন।

তাল কিন্তু বাঙালি জীবনে বহু পুরোনো ব্যাপার। ঘটি না ডুবলেও বাঙালি পুকুরের নাম রাখে ‘তালপুকুর’। বাঙালির যাপিত জীবনে তালগাছ কেন পুকুরপাড়ে তার কোনো ব্যাখ্যা নেই। আর যেসব ব্যাখ্যা পাবেন, সেসব শুনলে বেতাল হয়ে যেতে পারেন। তা ছাড়া বাঙালি তিলকেও তাল বানাতে পারে। বলা উচিত, তিলকে তাল বানাতে বাঙালির জুড়ি মেলা ভার। কেন তিল তাল হয়, সে ব্যাখ্যাও নেই বাঙালির জীবনে। সম্ভবত এসব ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যায় না বলেই বাঙালি তালপাখা দিয়ে হাওয়া খেতে খেতে তাল পাতায় লেখা পুঁথির গল্পে ডুবে যেতে ভালোবাসে।

আমকুড়ানির মতো ‘তালকাড়ানি’ সুখও এক ব্যাপার। শরতের লিলুয়া বাতাসে পাকা তাল ধুপধাপ খসে পড়লে কাড়াকাড়ি করে তার দখল নেয়া শৈশবের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারই বটে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনকে/ওয়াইএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত