ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ মিনিট আগে
শিরোনাম

সাপ্তাহিক ছুটিতে ঘুরে আসুন ঢাকার ঐতিহাসিক স্থান

  ভ্রমণ ডেস্ক

প্রকাশ : ১৬ নভেম্বর ২০২০, ১৯:৩৮  
আপডেট :
 ১৬ নভেম্বর ২০২০, ১৯:৪৬

সাপ্তাহিক ছুটিতে ঘুরে আসুন ঢাকার ঐতিহাসিক স্থান

আপনি কি নগরিক জীবনের দৈনন্দিন কর্মব্যস্ততা নিয়ে বিরক্ত? তাহলে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ব্যস্ত জীবনের টান থেকে বাঁচতে কয়েক ঘণ্টার জন্য বেরিয়ে পড়া আপনার জন্য দুর্দান্ত উপায় পেতে পারে। আপনি কয়েকটি ঐতিহাসিক স্থান ঘুরে আমাদের পূর্বপুরুষদের কয়েক শ’ বছর আগের স্মরণীয় কিছু কীর্তি এবং মুক্তিযুদ্ধের গর্বিত ইতিহাস স্মরণ করতে পারেন। ঢাকার কয়েকটি ঐতিহাসিক স্থান সম্পর্কে আরো জানতে আমাদের সাথেই থাকুন।

ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার

আজ আমরা বিনা বাধায় বাংলা ভাষায় আমাদের চিন্তাভাবনা, অনুভূতি ও ধারণা প্রকাশ করতে পারি। তবে এ অধিকার অর্জন মোটেও সহজ ছিল না। আমরা বিশ্বের একমাত্র জাতি যাদের নিজস্ব মাতৃভাষার সম্মান রক্ষার জন্য রক্ত ঝরাতে হয়েছিল। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর রক্তস্নাত রোষানলে পড়ে নিরস্ত্র স্বাধীনচেতা বাঙালিরা। ভাষার জন্য জীবন দিয়ে বাঙালিরাই দেখিয়ে দেয় দাবি আদায়ের পথ পরিক্রমা। ১৯৫২ সালে এ দেশের দেশপ্রেমিক জনগণ প্রতিবাদ করেছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানের তৎকালীন কর্তৃত্ববাদী শাসকদের সিদ্ধান্তের, যারা জোর করে ঘোষণা করেছিলেন যে উর্দুকে পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) রাষ্ট্রভাষা করা হবে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের একাধিক মেধাবী শিক্ষার্থী এবং সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ বিক্ষোভে তাদের জীবন হারায়, যাকে ‘বাঙালির ভাষা আন্দোলন’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। সেই ভাষা শহীদদের স্মরণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠিত হয়।

ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোতে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে।

প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে হাজার হাজার মানুষ খালি পায়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। এ শহীদ মিনার আপনাকে স্মরণ করিয়ে দেবে সাহসী সেই শহীদরা কীভাবে তৎকালীন শাসকদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন এবং বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকার অর্জন করেছিলেন।

সাহসী ভাষা সৈনিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আপনি যে কোনো দিন ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার দেখতে যেতে পারেন। এটি রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রস্থলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গণে অবস্থিত।

রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক বুদ্ধিজীবী হত্যা এক ন্যাক্কারজনক ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে বাংলাদেশের বিজয়ের কয়েক ঘণ্টা আগে হানাদার বাহিনী এ দেশকে মেধাশূন্য করতে শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করে। হত্যার স্থানটি রায়েরবাজার ‘বধ্যভূমি’ নামে পরিচিত। এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও অনেকে নিহত হন।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন মুনীর চৌধুরী (ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ের অধ্যাপক, সাহিত্যিক ও নাট্যকার), শহীদুল্লাহ কায়সার (সাংবাদিক), আলতাফ মাহমুদ (গীতিকার ও সুরকার), সেলিনা পারভীন (সাংবাদিক), মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী (সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক), আনোয়ার পাশা (সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব), ডা. আলীম চৌধুরী (চিকিৎসক), গোবিন্দ চন্দ্র দেব (ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও দার্শনিক), ড. হাবিবুর রহমান (গণিতের অধ্যাপক, রাশিয়া), মীর আব্দুল কলিম (মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক, রাবি), ধীরেন্দ্রনাথ দত্তসহ (রাজনীতিবিদ) আরও অনেকে।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের বিভিন্ন অংশে যেসব বুদ্ধিজীবী নিহত হয়েছেন তাদের স্মরণে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে একটি স্মৃতিসৌধ তৈরি করা হয়েছে। স্থপতি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও স্থপতি মো. জামী-আল-সাফী স্মৃতিসৌধটির নকশা করেন। এটি মোহাম্মদপুর থানায় অবস্থিত। আপনি যদি জায়গাটি ঘুরে দেখেন তবে তৎকালীন শাসকদের বর্বরতা এবং সেই সব প্রয়াত বুদ্ধিজীবীদের অপ্রতিরোধ্য সাহস অনুভব করতে পারবেন যারা নিজের জীবনের চেয়ে তাদের মাতৃভূমিকে বেশি ভালোবাসতেন।

লালবাগ কেল্লা

আপনার কি মুঘল স্থাপত্যের প্রতি দুর্বলতা রয়েছে? তাহলে লালবাগ কেল্লায় এক দিন ঘুরে আসার পরিকল্পনা করুন যা আওরঙ্গবাদ দূর্গ নামেও পরিচিত। যদিও এটি একটি অসম্পূর্ণ নির্মাণ, এ জায়গাটি মোঘল আমলের বাংলাদেশের একমাত্র ঐতিহাসিক নিদর্শন। লালবাগ কেল্লা পুরান ঢাকার লালবাগ এলাকায় অবস্থিত।

লালবাগ কেল্লার নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৬৭৮ সালে। তৎকালীন মুঘল সুবাদার আজম শাহ এটির নির্মাণ কাজ শুরু করেন। দুর্গ নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ার প্রায় এক বছরের মাথায় বাবা সম্রাট আওরঙ্গজেবের ডাকে দিল্লিতে চলে যেতে হয় আজম শাহকে। তার চলে যাওয়ার পর দুর্গ নির্মাণের কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। পরে নবাব শায়েস্তা খাঁ পুনরায় লালবাগ কেল্লার নির্মাণ কাজ শুরু করেন। তবে শায়েস্তা খাঁ পুনরায় কাজ শুরু করার প্রায় চার বছরের মাথায় দুর্গের নির্মাণ আবার বন্ধ হয়ে যায়। এরপর নির্মাণ কাজ আর শুরু করা হয়নি। নবাব শায়েস্তা খাঁয়ের মেয়ে পরী বিবি মারা যাওয়ার কারণেই মূলত তিনি কেল্লার নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন।

লালবাগ কেল্লার কেন্দ্রস্থলে দরবার হল ও হাম্মাম খানা, পরী বিবির সমাধি, উত্তর পশ্চিমাংশে শাহী মসজিদ রয়েছে। লালবাগের নান্দনিকতা আপনার মনকে মুঘল রাজ্যের স্বর্ণযুগে ফিরিয়ে নিতে পারে। সূত্র: ইউএনবি

বাংলাদেশ জার্নাল/এনকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত