ঢাকা, রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

আসল জামদানি শাড়ি চেনার কৌশল

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ১৮ মে ২০২২, ১২:১১  
আপডেট :
 ১৮ মে ২০২২, ১২:১৪

আসল জামদানি শাড়ি চেনার কৌশল

অসাধারণ কারিগরি নিপুণতা এবং নান্দনিক বয়ন নকশার ‘জামদানি’ আমাদের তাঁতশিল্পের এক উজ্জ্বলতম উদাহরণ। মসলিনের পর বহির্বিশ্বে আমাদের বয়নশিল্পের গৌরব ধরে রেখেছে এই জামদানি। ঐতিহ্যবাহী নকশা ও বুননের কারণে ২০১৬ সালে জামদানিকে বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ইউনেস্কো (সূত্র: বিবিসি)।

এমন কোন বাঙালি মেয়ে বোধ করি খুঁজে পাওয়া যাবে না, যার আলমিরাতে অন্তত পক্ষে একটি জামদানি শাড়ি খুঁজে পাওয়া যাবে না।

জামদানি কার্পাস তুলার সুতো দিয়ে প্রস্তুত এক ধরনের পরিধেয় বস্ত্র। প্রাচীনকালের মসলিনের উত্তরাধিকারী হিসেবে জামদানি শাড়ি বাঙালি নারীদের অতি জনপ্রিয় বস্ত্র।

নামকরণ : ‘জামদানি’ নামের উৎপত্তি অনেকটাই অজানা। একটি মত অনুসারে ‘জামদানি’ শব্দটি ফার্সি ভাষা থেকে এসেছে। ফার্সি ‘জামা’ অর্থ কাপড়, আর ‘দানি’ অর্থ বুটি। সে অর্থে জামদানী অর্থ বুটিদার কাপড়।

ইতিহাস : খ্রিষ্টপূর্ব ষোড়শ সতকের ইতিহাসে দেখা যায়, চন্দ্রগুপ্তের সভায় গ্রীকদূত মেগাস্থিনিস দেখেছিলেন ফুলেল সৌকর্যের এক অসাধারণ মসলিন। ধারণা করা হয়, মেগাস্থিনিস যে মসলিন দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন, সেটি আসলে জামদানী।

ইন্ডিয়ান আর্ট এন্ড দিল্লি গ্রন্থে জর্জ ওয়াটের ধারণা, জামদানি ডিজাইনের নমুনাগুলো নিঃসন্দেহে ইরানি শিল্প থেকে গৃহীত।

জামদানি শিল্প অদ্বিতীয় মূলত দুটি কারণে। প্রথমত, এর রয়েছে বৈশিষ্ট্যমূলক জ্যামিতিক প্যাটার্নের ধারাবাহিকতা, যা ইরানি প্রভাবে প্রভাবিত। দ্বিতীয়ত, এর মোটিফ, যা বুননের সময়েই কাপড়ে খুব সুন্দরভাবে গেঁথে যায়।

জামদানী শাড়ির অন্যতম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- এর সুনির্দিষ্ট মোটিফ, অত্যন্ত সহজসরল কয়েকটি বাঁশের খণ্ডের সমন্বয়ে তাঁত, সাধারণ সুতা, সিল্ক ও জড়ি ইত্যাদি উপকরণ এবং তাঁতিদের স্মৃতিতে ধারণ করা কবিতার ছন্দে হাতে তোলা নকশার বয়ন পদ্ধতির কৌশল।

প্রাকৃতিক রুপ ও ছন্দের জ্যামিতিক রুপায়নে হাজার বছরের বিবর্তিত মোটিফ হচ্ছে জামদানী নক্সার মূল প্রাণশক্তি, যা দিয়ে আজো জামদানি শিল্পকে তার ব্যক্তিত্বে শনাক্ত করা যায়।

তবে অভিযোগ রয়েছে- বিভিন্ন মার্কেটে জামদানির নামে বিক্রি হচ্ছে নকল শাড়ি। ফলে ঐতিহ্যবাহী জামদানির আবেদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ক্রেতারা।

অনেক বিক্রেতা ভারতীয় কটন, টাঙ্গাইলের তাঁত, পাবনা ও রাজশাহীর সিল্ক শাড়িকে জামদানি বলে ক্রেতাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন। তাই আসল জামদানি কেনার জন্য এ শাড়ি চেনা জরুরি।

চলুন জেনে নেই কীভাবে চিনবেন আসল জামদানি শাড়ি-

১. জামদানি শাড়ি কেনার আগে শাড়ির দাম, সুতার মান এবং কাজের সূক্ষ্মতা দেখে নিতে হবে। সাধারণত শাড়ি তৈরির সময়, সুতার মান ও কাজের সূক্ষ্মতা বিবেচনায় একটি জামদানির দাম ১ হাজার টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা কিংবা তার চেয়েও বেশি হতে পারে।

৩. জামদানি শাড়ি হাতে বোনা হয় বলে ডিজাইন হয় খুব সূক্ষ্ম এবং নিখুঁত। ডিজাইনগুলো হয় মসৃণ।

৪. কারিগর প্রতিটি সুতা হাত দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বুনন করেন। তাই সুতার কোনো অংশ বের হয়ে থাকে না। এ কারণে জামদানি শাড়ির কোনটা সামনের অংশ আর কোনটা ভেতরের অংশ, তা পার্থক্য করা বেশ কঠিন।

৫. জামদানি শাড়ি চেনার আরেকটি উপায় হতে পারে এর সুতা ও মসৃণতা যাচাই করা। জামদানি শাড়ি বয়নে সুতি ও সিল্ক সুতা ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

৬. আঁচলের শেষ প্রান্তের সুতাগুলো আঙ্গুল দিয়ে মোড়ানোর পর যদি সুতাগুলো জড়িয়ে যায়, তবে সেটা সিল্ক সুতার তৈরি আর যদি সুতাগুলো যে কোনো অবস্থায় সমান থাকে, তবে তা নাইলন।

৭. কাউন্ট দিয়ে সুতার মান বোঝানো হয়। যে সুতার কাউন্ট যত বেশি, সেই সুতা তত চিকন। আর সুতা যত চিকন, কাজ ততই সূক্ষ্ম হবে- যা ভালো মানের জামদানি শাড়ির প্রধান বৈশিষ্ট্য।

৮. জামদানি শাড়িতে যে অংশটুকু কোমরে গুঁজে রাখা হয়, ওই অংশটায় অর্থাৎ সাড়ে পাঁচ হাত পর্যন্ত কোনো পাড় বোনা থাকে না। কিন্তু মেশিনে বো না শাড়ির পুরো অংশজুড়েই পাড় থাকে।

৯. জামদানির ডিজাইন নকল করা, মেশিনে বোনা শাড়ি কৃত্রিম সুতায় তৈরি হয় বলে এই শাড়িগুলো হয় ভারি এবং খসখসে।

বাংলাদেশ জার্নাল/স্বর্ণ/টিটি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত