ঢাকা, রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১১ মিনিট আগে
শিরোনাম

এই বর্ষায় ঘুরে আসতে পারেন নিকলী হাওরে

  এস কে রাসেল

প্রকাশ : ০৬ আগস্ট ২০১৯, ২৩:২৭

এই বর্ষায় ঘুরে আসতে পারেন নিকলী হাওরে

জ্যাম, ব্যস্ততা, অফিস, সংসার এমন সব কিছুর ভিড়ে আপনার মাথা যখন প্রায় হ্যাং, তখন এমন একটা জায়গা আপনাকে দিবে পেছনের সবকিছু ভুলে নতুন করে ফ্রেশ হওয়ার সুযোগ। বিশাল জলের উপর ভাসতে ভাসতে নীল রঙা আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে নিজের মন দেহ সবই হালকা করে নিতে পারবেন। যেহেতু প্রসিদ্ধ পর্যটন জায়গাগুলোতে সবসময়ই পর্যটকদের ভিড় থাকে, তাই এমন অপ্রসিদ্ধ কিছু স্থানে আপনি নিজের মতো করে ঘুরে আসতে পারেন অনায়াসে। সাধারণ পর্যটন প্লেসের মতো কোনো ঝামেলা নেই।

পানিতে ভাসতে ভাসতে হাওড়ের ভিতরের দিকে গেলে এক পর্যায়ে যখন কোনো গ্রাম দেখা যাবে না, তখন হাওড়কে আপনার শান্ত একটা সাগরের মতোও মনে হতে পারে। আবার ঘুরতে ঘুরতে চোখে পড়বে পানির উপর ভাসমান অসম্ভব সুন্দর ছোট ছোট সবুজ গ্রাম। নৌকা থামিয়ে গ্রামটি একটু ঘুরে আসতে পারেন। অবাক হবেন মানুষগুলোর কাছে গিয়ে কথা বললে। আপনার কাছে মনে হবে পানির সাথে বসবাস করতে করতে মানুষগুলোর স্বভাব চরিত্রও পানির মতো হয়ে গেছে। বিভিন্ন গ্রামের বাজার থেকে হালকা নাস্তা কিনে নিতে পারেন। খোলা আকাশের নিচে এলোমেলো বাতাসে নৌকার ছাদে খেতে বসলে আপনি পেতে পারেন অদ্ভুত এক খাওয়ার আনন্দ। বাজে রকম কোনো খাবারও তখন আপনার কাছে সুস্বাদু মনে হতে পারে।

দেখতে পারবেন আরেক রাতারগুল: হাওড়ে ঘুরতে ঘুরতে চলে যাবেন ছাতিরচরে। পানির নিচে ডুবন্ত এক সবুজ বন। লেয়ারে লেয়ারে সাজানো সবুজ গাছ। গাছের বুক বরাবর পানিতে ভাসতে থাকবেন আপনি। হুট করে দেখে আপনার কাছে মনে হতে পারে এটা আরেক রাতারগুল। নিকলী বেড়িবাঁধ থেকে নৌকায় সরাসরি ছাতিরচর যেতে ঘণ্টাখানেক সময় লাগে। নৌকায় ৩ঘন্টা ঘুরলে আপনার মোটামোটি অনেকটা জায়গা ঘুরে আসতে পারবেন।

নৌকা ভাড়া: সাধারণত এক ঘণ্টার জন্য তারা ৭০০/৮০০ টাকা নেয়। আবার কয়েকঘণ্টার জন্য নিতে পারেন প্রতি ঘণ্টায় ৫০০টাকার মতো করে। অবশ্যই ভাড়া নিয়ে দামাদামি করে নিবেন। এতে আরো কমতে পারে। নৌকাগুলো বেশ বড়সড়ও হয়। ১৫/২০ জন পর্যন্ত অনায়াসে নাচানাচি করে ঘুরে আসতে পারবেন নৌকায়। নৌকার সাইজ অনুযায়ী ভাড়া খুব একটা কমবেশি হয় না। অতএব বড় নৌকাটা নেয়াই ভালো।

নিকলীতে খাবারের ব্যবস্থা: মূলত নিকলীতে ভালো মানের খাওয়ার ব্যবস্থা নেই। তবে বাজারে বেশ কয়েকটা রেস্তোরা আছে, মোটামোটি কোয়ালিটিতে তাজা মাছের রান্না দিয়ে খেতে ভালোই লাগবে। এছাড়াও বেড়িবাঁধে প্রবেশ করার সময়ই একটা রেস্তোরা পড়ে আর সেই রেস্তোরায় নদীর তাজা মাছের মজাদার খাবার খেয়ে নিতে পারেন।

রাত কাটাতে পারেন নৌকায়: ভরপুর কোনো পূর্ণিমা রাতের গাঢ় নীলচে আকাশের নিচে নৌকার ছাদে কাটিয়ে দিতে পারেন আস্ত একটি রাত। ওখানে রাতে থাকাটা মোটামোটি নিরাপদ। যদি আবহাওয়া ভালো থাকে। তবে পুরোপুরি নিরাপত্তার জন্য নিকলি থানায় ইনফর্ম করে নিতে হবে। তাহলে চিন্তামুক্ত ও আরামদায়ক একটি রাত কাটাতে পারবেন আপনি। এবং রাতে অবশ্যই বেড়িবাঁধের কাছাকাছি কোনো স্থানে অবস্থান করতে হবে। যদিও নিকলীতে থাকার কোনো সুব্যবস্থা নাই, তবে ইমার্জেন্সি থাকার প্রয়োজন হলে নিকলী থানা পুলিশে আওতায় একটি ডাকবাংলো আছে। পুলিশের সাথে কথা বলে সেখানে ব্যবস্থা করে নিতে পারেন। তবে সেই বাংলোটাও অতোটা ভালো মানের নয়। এটাও যদি না হয়, তাহলে তো হাতের কাছে কিশোরগঞ্জ শহর আছেই।

যেভাবে যাবেন: যদি ভোরে রওনা করে রাতের মধ্যে চলে আসতে চান, তাহলে সবচে সুন্দর পন্থা হচ্ছে পুলেরঘাট দিয়ে যাওয়া। নিকলি হাওড় সবচে বেশি কাছে হয় কিশোরগঞ্জের পুলেরঘাট থেকে। যেতে পারবেন ঢাকা সায়দাবাদের পাশে গোলাপবাগ বাসস্ট্যান্ড থেকে 'অনন্যা সুপার' বাসে সোজা পুলেরঘাট। ভাড়া ২২০ টাকা। সময় লাগবে ৩ঘন্টা। পুলেরঘাট থেকে সিএনসি দিয়ে ১ঘন্টায় নিকলী বেড়িবাঁধ। সিএনজিতে জনপ্রতি ভাড়া ৮০ টাকা। গোলাপবাগ থেকে একদম ভোর থেকেই বাস পাবেন। তবে ভালো থাকা খাওয়ার চিন্তা করলে আপনাকে কিশোরগঞ্জ শহরেই যেতে হবে। নিকলি থেকে কিশোরগঞ্জ শহরে যেতে সিএনজিতে ঘণ্টাখানেক লাগে। তাছাড়া নিকলীতে থাকার মতো ভালো ব্যবস্থা নেই।

আর যদি মনে করেন, কিশোরগঞ্জ শহর ও শহরের আশপাশে আরো কিছু ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন যেমন ঈসাখাঁর বাড়ি, চন্দ্রাবতীর মাজার, ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ, ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ, ইত্যাদি ঘুরে আসবেন। তবে আপনি ঢাকা থেকে সরাসরি কিশোরগঞ্জ শহরে চলে যেতে পারেন। কিশোরগঞ্জ শহর থেকেই আবার যেতে পারবেন নিকলী হাওড়ে। রেলস্টেশনের দক্ষিণ পাশ থেকে সিএনজি যায় নিকলীর দিকে। মাথাপিছু ৮০ টাকা ভাড়ায় মাত্র ১ঘন্টায় আপনি নিকলী হাওড় বেড়িবাঁধে পৌঁছতে পারবেন। অথবা শহর থেকে চলে যেতে পারেন শহরের খুব কাছেই চামড়াবন্দরে। সেখান থেকেও নৌকা ভাড়া করে ঘুরতে পারেন হাওড়ের আরেক পাশ। শহরের একরামপুর রেলক্রসিং থেকে চামড়াবন্দরে যাওয়ার সিএনজি বা অটো পাওয়া যায়। সিএনজিতে সময় লাগবে আধঘণ্টারও কম। ভাড়া মাথাপিছু ৪০-৫০ টাকা।

নিকলীতে আরো যা দেখতে পারবেন:

নিকলী বেড়িবাঁধ: হাওর-বাঁওড়সমৃদ্ধ কিশোরগঞ্জ জেলার একেবারে কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত নিকলী উপজেলা। জেলা সদর থেকে ২৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই নিকলীতে রয়েছে পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা। নিকলীর হাওরের অপরূপ সৌন্দর্য ও ঐতিহাসিক নিদর্শনসমূহকে ঘিরে এখানে গড়ে উঠতে পারে একটি পর্যটন কেন্দ্র। বর্ষাকালে নিকলীর হাওরের সৌন্দর্য অপরূপ রূপ ধারণ করে। শুকনো মৌসুমে যেখানে শুধু ধুধু প্রান্তর- বর্ষা মৌসুমে সেসব এলাকাই পানিতে তলিয়ে গিয়ে সমুদ্রসম রূপ ধারণ করে। যতদূর চোখ যায়, শুধুই অথৈ জলরাশির খেলা। ছোট-বড় ঢেউ গর্জন করে আছড়ে পড়ে তীরে। দূর থেকে ছোট ছোট গ্রামগুলোকে দ্বীপের মতো মনে হয়। মনে হয় যেন হাওরের পানিতে ঢেউয়ের দোলায় ভাসছে সেসব গ্রাম। এসময় হাওরে চলাচল করে শত শত ইঞ্জিনচালিত নৌকা। রঙিন পাল তোলা নৌকাও দেখা যায়। জাহাজ আকৃতির মালামাল পরিবহনকারী বড় বড় কার্গোও সদা চোখে পড়বে। দাঁড় বেয়ে চলা নৌকা ও মাঝিদের কণ্ঠের সুরেলা গানও শোনা যায়। ডিঙ্গি নৌকা দিয়ে জেলেদের জাল দিয়ে মাছ ধরা তো নিত্যদিনকার চিত্র। নিকলী উপজেলা সদরকে রক্ষার জন্য রয়েছে পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ বেড়িবাঁধ। বর্ষাকালে এই বাঁধে চারিদিক থেকে সমুদ্রের মতো ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে। এই বেড়িবাঁধেই দাঁড়িয়ে হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। বাঁধজুড়ে রয়েছে অসংখ্য গাছপালা। সারাক্ষণ পাখিদের কিচির-মিচির শব্দ। শীতকালে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে অতিথি পাখির আগমন ঘটে। সাঁঝের বেলায় মুক্তোর মালার মত সেসব বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির নিরাপদ আশ্রয়ে ফেরার সময় মুখরিত কলকাকলির কান ফাটানো শব্দ একমাত্র হাওর এলাকাতেই শোনা সম্ভব। স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে বেড়িবাঁধের পাশে বসার জন্য কিছু সংখ্যক বেঞ্চ ইতিমধ্যে স্থাপন করা হয়েছে। তবে তা পর্যাপ্ত নয়। নিকলী উপজেলা পরিষদ বিল্ডিংয়ের ঠিক সামনেই আরসিসি পিলারের ওপর ‘বর্ষাবিলাস’ নামে একটি অবসর কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিবছরই বর্ষা শুরু হলে জেলা ও জেলার বাইরে থেকেও প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য নিকলী উপজেলা সদরে আসে। প্রতি বছর নিকলীতে চিরায়ত বাংলার ৫০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। নৌকাবাইচ দেখতে সোয়াইজানি নদীতীরের বেড়িবাঁধে লাখো মানুষের ঢল নামে। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে উৎসবের আমেজ।

চারশত বছরের পুরাতন মসজিদ: গুরই শাহী মসজিদ: উপজেলা সদরের সোজা দক্ষিণ দিকে অবস্থিত গুরই ইউনিয়নে অতি প্রাচীন এ মসজিদটি অবস্থিত। স্থাপত্যশৈলীর বিচারে অতি প্রাচীর এ মসজিদটি একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, এতে কোন সন্দেহ নেই। মসজিদটির দেয়ালগাত্রে স্থাপিত শিলালিপিটির পাঠোদ্ধার করা গেলে এর ইতিহাস জানা যেতেও পারে। এ মসজিদকে ঘিরে এতদঞ্চলে অনেক কথা প্রচলিত রয়েছে। যেমন অনেকেই বলেন, এটি নাকি গায়েবী মসজিদ। এখনও অনেক মায়েরা তাদের শিশু সন্তানদের মুখে প্রথম ভাত দেয়ার সময় স্বপরিবারে গুরই শাহী মসজিদে যান। গুরই শাহী মসজিদ: উপজেলা সদরের সোজা দক্ষিণ দিকে অবস্থিত গুরই ইউনিয়নে অতি প্রাচীন এ মসজিদটি অবস্থিত। স্থাপত্যশৈলীর বিচারে অতি প্রাচীর এ মসজিদটি একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, এতে কোন সন্দেহ নেই। মসজিদটির দেয়ালগাত্রে স্থাপিত শিলালিপিটির পাঠোদ্ধার করা গেলে এর ইতিহাস জানা যেতেও পারে। এ মসজিদকে ঘিরে এতদঞ্চলে অনেক কথা প্রচলিত রয়েছে। যেমন অনেকেই বলেন, এটি নাকি গায়েবী মসজিদ। এখনও অনেক মায়েরা তাদের শিশু সন্তানদের মুখে প্রথম ভাত দেয়ার সময় স্বপরিবারে গুরই শাহী মসজিদে যান।

চন্দ্রনাথ গোসাইর আখড়া: নিকলী থানার ষাইটধারে অনুমানিক অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম পাদে নির্মিত যোগীসিদ্ধা চন্দ্রনাথ গোসাইর মন্দির, সমাধি ও যোগী সম্প্রদায়ের বিরাট আখড়া রয়েছে । এককালে এ আখড়াটিই ছিল এদেশের যোগী সম্প্রদায়ের বিখ্যাত কেন্দ্র। বিগত শতাব্দীতে উক্ত আখড়া থেকে নাথ যোগীদের দুষ্প্রাপ্য ধর্মীয় হাড়মালার হস্ত লিখিত পাণ্ডুলিপি পাওয়া গিয়েছিল ।

শৈব, বোদ্ধ, তান্ত্রিক,সহজিয়া ও যোগী এ কয়টি ধর্মমতের সমন্বয়ে উদ্ভূত ধর্মই নাথধর্ম। এ ধর্মের মূল হলো মানবদেহ। দেহেই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ন্যায় নিয়ত সৃষ্টিকর্ম চলছে অর্থাৎ মানব দেহই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ক্ষুদ্ররুপ বা অংশ। অপরিপক্ব দেহকে যোগ বা সাধনার দ্বারা পরিপক্ব করতে পারলে শিবত্ব বা অমরত্ব লাভ করা যায়। এই অমরত্ব লাভের সাধনার নামই ‘যোগ’। যোগসাধনপ্রন্থী উক্ত সম্প্রদায়ের গুরু ছিলেন মীননাথ। গুরুদের নামের শেষে ‘নাথ’ থাকায় ‘নাথযোগী’ সম্প্রদায় নামে পরিচিত। সাধক পদ্ধতির ভিন্নতায় নাথপন্থিরা নাথযোগী, কাপালীযোগী ও অবধূতযোগী শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল। সিদ্ধাছাড়া অন্যান্যরা গৃহী। সিদ্ধাযোগী ও যোগিনীরা বিশেষ ধরনের পরিচ্ছদ, গলায় রুদ্রাক্ষের মালা ও কালে কুণ্ডল পড়ে লোকালয়ে ঘুরে বেড়াতো এবং গোরক্ষনাথ, গোপীচন্দ্রের সন্ন্যাস, নাথগীতিকা, দোহা ইত্যাদি নাথ ধর্মের মহাত্মামূলক গান পরিবেশন করে ভিক্ষালব্ধ অন্নে জীবিকা নির্বাহ করতো।

মধ্যযুগে উত্তর ও পূর্ব বাংলার নাথ ধর্মের প্রবল প্রভাব এবং প্রসার কালে কিশোরগঞ্জের নিকলী থানার ষাইটধার ও মিঠামইনের ঘাগরা নাথ যোগীদের প্রধান পীঠ স্থানে পরিণত হয়েছিল। ফলে রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও অন্যান্য কারণে ষোড়শ শতাব্দীর দিকে নাথ ধর্ম বিলুপ্তির পথে গেলেও উল্লেখিত দুটি এলাকায় দীর্ঘকাল পর্যন্ত এ সম্প্রদায়ীদের প্রভাব প্রতিপত্তি অক্ষুণ্ণ ছিল । আলোচিত যোগীসিদ্ধা চন্দ্রনাথ গোঁসাইর সঠিক কাল নির্ণয় করা না গেলে তাঁর প্রধান শিষ্য সিদ্ধাযোগী আদুরী নাথের কাল ধরে চন্দ্রানাথকে সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম পাদের লোক বলে ধরে নেয়া যায়। আখড়াটি বিরাট। মন্দিরের সুউচ্চ চুড়া বহুদূর থেকে দেখা যায় ।

আদুরীনাথের সাধনপীঠ: নিকলী বাজার সংলগ্ন এলাকায় আদুরীনাথের সাধনপীঠ ও সমাধি বর্তমান। চন্দ্রনাথ গোসাইর পরই কিশোরগঞ্জের নাথ সম্প্রদায়ীদের মধ্যে সিদ্ধাযোগীরুপে আদুরীনাথের বিশেষ প্রভাব ও খ্যাতি রয়েছে। এ সাধনপীঠে এখনো গুরুবাদী আঊল-বাঊল, পীর- ফকির সম্প্রদায়ীরা সাধন সংগীতের মাধ্যমে গুরুর উদ্দেশ্যে ভক্তি অর্ঘ্য নিবেদন করে থাকেন। সাধক আধুরীনাথের অলৌকিক ক্ষমতা ও যোগসাধন সম্পর্কে স্থানীয় এলাকায় অনেক কাহিনী প্রচলিত আছে। আদুরীনাথ অসংখ্য দেহতত্ত্ব ও সাধন সংগীত রচনা করেছিলেন ।

স্থানীয় এলাকায় এখনো এসব সংগীত গীত হতে শুনা যায়। তার শিষ্যদের মধ্যে মাহমুদ চান আধ্যাত্ম সাধনায় উন্নীত ও বিখ্যাত সাধক রূপে খ্যাত হয়েছিলেন। নিকলী থেকে দুই মাইল উত্তরে মজলিশপুর গ্রামে তার মাজার রয়েছে । সাধক মাহমুদ চানও গুরুর ন্যায় অনেক সাধন সংগীত রচনা করেছিলেন। সে সংগীত গুলো আজো তার মাজারে বিভিন্ন সময়ে আউল- বাউলদের কণ্ঠে শুনা যায়।

একটু সময় নিয়ে ও রিল্যাক্সে হাওড়ে ঘুরতে চাইলে কিশোরগঞ্জ শহরে থেকেই ঘুরতে যাওয়া ভালো। তাছাড়া শহরে পাবেন ভালোমানের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা।

কিশোরগঞ্জ শহরে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা: কিশোরগঞ্জের শহরের মেইন পয়েন্ট গৌরাঙ্গবাজারের আশপাশেই ভালোমানের বেশ কয়েকটা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আবাসিক হোটেল রয়েছে।

হোটেল রিভারভিউ আবাসিক

ভাড়া ৮০০-১৪০০

ফোন : ০১৭৫৪২৩১২৬৭

হোটেল ক্যাসেল সালাম ইন আবাসিক

ভাড়া ৮০০-১৫০০

ফোন : ০১৭৪৫৮৪৩৪২২

হোটেল গাংচিল আবাসিক ভাড়া ৬০০-১০০০

হোটেল উজানভাটি আবাসিক ভাড়া ৬০০-১৪০০

হোটেল নিরালা আবাসিক

ভাড়া ৭০০-১২০০

ফোন : ০৭১৫৯০১৪৫৫৪

আর খাবারের জন্য শহরের ভেতরে হাতের নাগালেই পাবেন বেশ কিছু ভালো মানের রেস্টুরেন্ট। এর মধ্যে আছে,

হোটেল গাংচিল, স্টেশন রোড, কিশোরগঞ্জ।

হোটেল ধানসিঁড়ি, রথখলা, কিশোরগঞ্জ।

হোটেল স্টার ওয়ান, স্টেশন রোড, কিশোরগঞ্জ।

হোটেল ইষ্টিকুটুম, স্টেশন রোড, কিশোরগঞ্জ।

হোটেল দারুচিনি, রথখলা, কিশোরগঞ্জ।

টুইস্ট, খরমপট্টি রোড, কিশোরগঞ্জ। (বেস্ট ফাস্টফুড)

সরাসরি কিশোরগঞ্জ শহর পর্যন্ত যেতে চাইলে :

গোলাপবাগ বাসস্ট্যান্ড বা মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে ভোর থেকে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত কিশোরগঞ্জের বাস পাওয়া যায়। মহাখালি থেকে ছেড়ে যাওয়া কিশোরগঞ্জের বাসগুলো একটু ছোট টাইপের।

অথবা ট্রেনে যেতে পারেন। কিশোরগঞ্জে যাওয়ার সবচে আরামদায়ক জার্নি হচ্ছে ট্রেন। সারাদিনে ৩টি আন্তঃনগর ট্রেন ঢাকা টু কিশোরগঞ্জ আসা যাওয়া করে।

ট্রেনের সময় সূচি:

ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ যাওয়ার ট্রেন :

সকাল ৮টায় - এগারো সিন্দুর প্রভাতী।

সকাল ১০টায় - কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস।

সন্ধ্যা ৬টায় - এগারো সিন্দুর গোধূলি।

কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসার ট্রেন:

সকাল সাড়ে ৬টায় - এগারো সিন্দুর প্রভাতী।

দুপুর সাড়ে ১২টায় - এগারো সিন্দুর গোধূলি।

বিকেল সাড়ে ৩টায় - কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস।

ভাড়া :

শোভন - ১২০ টাকা

শোভন চেয়ার - ১৫০ টাকা

প্রথম চেয়ার - ১৮৫ টাকা

ট্রেনে যেতে সময় লাগবে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা

‘শোভন’ ক্যাটাগরির সিটটি খুব একটা আরামদায়ক নয়।

সপ্তাহের শেষে এবং শুরুতে ট্রেনে বেশ ভিড় হয়। তবে একটি শোভন চেয়ার পেয়ে গেলে ভিড় খুব একটা গায়ে লাগবে না।

দিনে গিয়ে রাতের মধ্যে আসতে চাইলে ট্রেনে সম্ভব নয়। তাহলে আপনাকে ভোরের বাসেই যেতে হবে।

(ঢাকা থেকে ট্রেনে যেতে চাইলে একদিন আগে স্টেশন কাউন্টারে গেলেই ট্রেনের সিটসহ টিকিট পাবেন। কিন্তু কিশোরগঞ্জ থেকে টিকিট পেতে কঠিন হবে। না পেলে বাসে চলে আসবেন।)

বাসে ঢাকার গোলাপবাগ বা মহাখালী থেকে কিশোরগঞ্জ শহর, তার পরে কিশোরগঞ্জ রেল স্টেশনের সামনের থেকে সিএনজিতে নিকলি ঘাট।

গোলাপবাগ থেকে যাতায়াত এসি ভাড়া ৪০০ টাকা। ননএসি ২৫০ টাক (পরিবর্তনশীল)। অনন্যা সুপার ননএসি ভাড়া ২৫০ টাকা। মহাখালী বাস স্টেশন থেকে অন্যনা ও অন্যান্য ক্লাসিক ভাড়া ২৪০ টাকা (পরিবর্তনশীল)। কিশোরগঞ্জ রেল স্টেশনের সামনের থেকে নিকলী সিএনজি ভাড়া ১২০টাকা।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত