ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

সন্দ্বীপ থেকে ঘুরে আসুন

  ভ্রমণ ডেস্ক

প্রকাশ : ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ২১:১৭

সন্দ্বীপ থেকে ঘুরে আসুন

সন্দ্বীপ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত উপজেলা। এটি বাংলাদেশের অত্যন্ত প্রাচীন একটি দ্বীপ। বাংলাদেশের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের ঠিক মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে আছে অতি প্রাচীন এই দ্বীপটি। মেঘনা মোহনায় অবস্থিত দ্বীপটির চারপাশে রয়েছে বিশাল বিশাল জাহাজের আনাগোনা। নদী আর সমুদ্র যেন এই সন্দ্বীপকে অতি আদরে আগলে রেখেছে।

সন্দ্বীপের লবণ শিল্প, জাহাজ নির্মাণ কারখানা ও বস্ত্র শিল্প পৃথিবীখ্যাত ছিল। উপমহাদেশের উপকূলীয় এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের ভ্রমণকারীরা এই অঞ্চলে এসে তাদের জাহাজ নোঙ্গর করতেন এবং সহজ বাণিজ্য ব্যবস্থা এবং পরিবহন সুবিধাদি থাকায় এই অঞ্চলে ব্যবসা এবং বসতি স্থাপনে আগ্রহ প্রকাশ করতেন। ১৭৭৬ সালের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, প্রতি বছর সন্দ্বীপে উৎপাদিত প্রায় এক লক্ষ ত্রিশ হাজার মণ লবণ, তিনশ জাহাজে করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হত।

সন্দ্বীপ এককালে কম খরচে মজবুত ও সুন্দর জাহাজ নির্মাণের জন্য পৃথিবীখ্যাত ছিল। ইউরোপের বিভিন্ন এলাকায় এই জাহাজ রপ্তানি করা হত। তুরস্কের সুলতান এই এলাকার জাহাজের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে এখান থেকে বেশ কিছু জাহাজ কিনে নেন। ভারতবর্ষের মধ্যে সন্দ্বীপ ছিল একটি সমৃদ্ধশালী বন্দর। লবণ ও জাহাজ ব্যবসা, শস্য সম্পদ ইত্যাদির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যভাগে পর্তুগিজরা সন্দ্বীপে উপনিবেশ স্থাপন করেন।

সন্দ্বীপে শীতকালে অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে উঠে পাড়া-মহল্লা। জেলেদের সাথে পাল্লা দিয়ে পাখিরাও মাছ শিকার করেন। দল বেঁধে পাখিদের উড়াউড়ি মন কেড়ে নেয়। একসাথে অবলোকন করা যায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত।

হাজার বছরের ঐতিহ্য ঘেরা এ দ্বীপের অনেক কিছু হারিয়ে গেছে নদী গর্ভে। নদীর এ করালগ্রাসের পরও এখনো বেশ সমৃদ্ধির পসরা সাজিয়েছে সন্দ্বীপ। কেওড়া গাছ দিয়ে নির্মিত দেশের সর্ববৃহৎ কাঠের সেতু, দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ সোলার প্যানেল পূরবী, ইসলাম সাহেবের বিশাল খামারবাড়ি, ম্যানগ্রোভের দৃষ্টিনন্দন বেষ্টনী, গুপ্তছড়া ঘাটের বিশাল জেটি, রাস্তাসহ সবুজের অসংখ্য পটে আঁকা দৃশ্য। দৃষ্টি জুড়ে সবুজ আর সবুজ।

উত্তরে দেখতে পারেন তাজমহলের আদলে নির্মিত শত বছরের পুরনো মরিয়ম বিবি সাহেবানী মসজিদ। শত বছরের পুরনো জমিদার বাড়ি। দ্বীপের দক্ষিণে আছে ঐতিহ্যবাহী শুকনা দিঘী, অসংখ্য বড় বড় খেলার মাঠ। দেখতে পারবেন, বাউল গানের আসর। সাঁতার কাটতে পারেন দ্বীপের স্বচ্ছ পানির পুকুরে। ঘুরে আসতে পারেন উত্তরের বিশাল সবুজ চর দক্ষিণের কালিয়ার চর থেকে। যেখানে গেলে মুহূর্তে আপনাকে এনে দিবে অন্যরকম এক প্রশান্তি।

এটি দ্বীপ হলেও নিত্য প্রয়োজনীয় সমস্ত খাবার অতি সহজে পাওয়া যায় এখানে। সামুদ্রিক মাছ, মাংস থেকে শুরু করে পিঠা সব কিছু পাবেন। আর এই শীতের মৌসুমে মিলবে সবচেয়ে সুস্বাদু খেজুরের রসের পায়েস। পাবেন দ্বীপের বিখ্যাত চিতল পিঠা, যা আপনি খেতে পারেন শীতকালীন মিঠাই দিয়ে। এছাড়া দ্বীপের বিখ্যাত বিনয় সাহার মিষ্টি খেয়ে নিতে পারেন। সেজন্য আপনাকে দ্বীপের দক্ষিণে শিবের হাট পর্যন্ত যেতে হবে।

রূপে মুগ্ধ হয়ে যুগে যুগে অনেক কবি সাহিত্যিক ঐতিহাসিক পর্যটক এসেছেন এখানে। ১৩৪৫ সালে পর্যটক ইবনে বতুতা সন্দ্বীপ আসেন। ১৫৬৫ সালে ড্যানিশ পর্যটক সিজার ফ্রেডরিক সন্দ্বীপে আসেন এবং এর বহু প্রাচীন নিদর্শনের বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেন। ১৯২৯ সালের ২৮ জানুয়ারি মোজাফ্ফর আহম্মদের সাথে সন্দ্বীপে আসেন বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম।

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে কুমিরা

ফকিরাপুল থেকে চট্টগ্রামগামী যেকোন বাসে করে ছোট কুমিরা আসতে ভাড়া লাগবে ৪৮০ টাকা। বাস সুপারভাইজারকে বলুন সন্দ্বীপ ফেরীঘাট যাবার রোডের মাথায় নামিয়ে দিতে। সেখান থেকে অটোরিক্সা করে ১০-২০ টাকা ভাড়ায় টমটম কিংবা রিক্সায় করে কুমিরা-সন্দ্বীপ ফেরীঘাট ব্রীজ পৌঁছানো যায়।

কুমিরা ঘাট থেকে সন্দ্বীপ

কুমিরা সন্দ্বীপ ঘাট থেকে সন্দ্বীপ যাওয়ার জন্যে স্পিডবোট ও ছোট লঞ্চ আছে। স্পিডবোট ভাড়া জনপ্রতি ৩০০ টাকা, গুপ্তছড়া ঘাট (সন্দ্বীপ) যেতে সময় লাগবে ৩০ মিনিটের মত। যদি হোটেলে থাকতে চান তবে সন্দ্বীপ ঘাট (গুপ্তছড়া ঘাট) থেকে সিএনজি নিয়ে চলে যাবেন টাউন কমপ্লেক্সে। আর ক্যাম্পিং করার জন্যে যেতে পারেন সন্দ্বীপের পশ্চিম পাড়ে (রহমতপুর) নদী ঘেঁষে। সন্দ্বীপ ঘাটে নেমে সিএনজি (ভাড়া ২৫০-৩০০ টাকা) দিয়ে চলে যেতে যেতে পারবেন রহমতপুর।

থাকা ও খাওয়া

সন্দ্বীপ শহরে বেশ কিছু ভালো মানের হোটেল রয়েছে। তাছাড়া সন্দ্বীপের খাবারের হোটেল গুলোর মান বেশ স্বাস্থ্যকর ও সাশ্রয়ী।

সবদিক থেকে শীতকালীন ভ্রমণের উপযুক্ত স্থান ৩ হাজার বছরের পুরনো সন্দ্বীপ। অতিথিপরায়ণের দিক থেকে এ দ্বীপের আলাদা খ্যাতি রয়েছে। দ্বীপে পা রাখলে যে কেউ আপনাকে বরণ করে নিতে বাধ্য।

বর্তমানে দল বেঁধে ক্যাম্পেইন করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন পর্যটকরা। সৈকতে ক্যাম্পিং করে নিরিবিলি রাত কাটাতে চাইলে এর থেকে ভালো জায়গা খুব কমই আছে। তাই চাইলে এই শীতে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সন্দ্বীপ থেকে।

নোট

#সন্দ্বীপের বিখ্যাত মিষ্টি খেয়ে দেখতে পারেন। তবে এর জন্য আপনাকে দ্বীপের দক্ষিণে শিবের হাট যেতে হবে।

#সাইকেল ভাড়া নিয়ে ঘুরতে পারেন আশেপাশে। অল্প সময়ে আরামে কোন একটা এলাকা ঘুরে দেখার জন্যে বেস্ট অপশন।

#রিকশা বা অন্যান্য বাহনের ভাড়া একটু বেশি মনে হতে পারে, দরদাম করে নিবেন।

#খেজুরের রস এই সময় পাওয়া গেলে না খাওয়াটা বোকামি হবে। আশেপাশেই খোঁজ করলেই পাবেন। গাছ থেকে সদ্য নামানো রসের মজাই আলাদা।

#খেজুরের রসের ফিন্নি/পায়েস যদি সম্ভব হয়ে কোথাও খেয়ে দেখতে পারবেন, স্বাদ ভুলবেন না কখনো নিশ্চিত।

#যদি সম্ভব হয় স্থানীয়দের প্রিয় ঘন খেজুরের মিঠাই এর সাথে কোড়ানো নাড়িকেল আর খোলাজা পিঠা খেয়ে আসবেন।

পরামর্শ

পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কাজ থেকে বিরত থাকুন, স্থানীয়দের সাথে বন্ধু সুলভ আচরণ করুন। ক্যাম্পিং করে থাকলে চারপাশে ময়লা আবর্জনা ছড়িয়ে না ফেলে একসাথে রেখে পুড়িয়ে ফেলুন।

বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত