ঢাকা, রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ মিনিট আগে
শিরোনাম

রহস্যময় আয়নাভূমি ‘সালার দি ইউনি’

  ভ্রমণ ডেস্ক

প্রকাশ : ২৭ জানুয়ারি ২০২১, ১৫:৫৫  
আপডেট :
 ২৭ জানুয়ারি ২০২১, ১৬:১৭

রহস্যময় আয়নাভূমি ‘সালার দি ইউনি’
ছবি: রহস্যময় আয়নাভূমি ‘সালার দি ইউনি’

বিশাল আয়নার মত দেখতে এই যায়গাটির নাম সালার দি ইউনি। বলিভিয়ায় অবস্থিত চমকপ্রদ এই প্রাকৃতিক অঞ্চল বিশ্বের সর্ববৃহৎ লবণ সমভূমি। বর্ষাকালে এখানে বৃষ্টির পানি জমে সৃষ্টি হয় সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক আয়না। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে তৈরি হওয়া এই আয়নায় আকাশের চমৎকার প্রতিবিম্ব দেখা যায়।

এটি বলিভিয়ায় অবস্থিত আলতিপ্লানো মালভূমির একটি অংশ সালার দি ইউনি নামে পরিচিত। সালার শব্দটি স্প্যানিশ, যার অর্থ লবণের সমতল। আর ইউনি আমরার ভাষা থেকে উদ্ভূত একটি শব্দ। এর অর্থ ঘের বা পরিবেষ্টন করা। তাহলে একত্রে এর অর্থ দাঁড়ায় আবদ্ধভাবে পরিবেষ্টিত লবণের সমতল।

সালার দি ইউনি অঞ্চলটি আলতিপ্লানো নামের যে মালভূমিতে অবস্থিত সেটি পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মালভূমি। এটি দক্ষিণ-পশ্চিম বলিভিয়ার ড্যানিয়েল ক্যাম্পাস প্রদেশের চিলি সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থিত। সালার দি ইউনি অঞ্চলটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১২,০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। এটি ১০, ৫৮২ বর্গ কিলোমিটার বা ৪,০৮৬ বর্গ মাইল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত একটি মালভূমি অঞ্চল। এই বিস্তৃত অঞ্চলে বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি জমে সৃষ্টি হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক আয়না।

রহস্যময় আয়নাভূমি ‘সালার দি ইউনি’

লবণ জমেই সৃষ্টি হয়েছে এ সমতল ভূমির। প্রায় ৩০-৪২ হাজার বছর আগে, এ অঞ্চলটি একটি বিশাল প্রাগৈতিহাসিক হ্রদ, মিনচিন হ্রদের অংশ ছিল। পরবর্তীতে হাজারো বছর ধরে ধারাবাহিক পরিবর্তনের ফলে ঐতিহাসিক ওই লেকের পানি শুকিয়ে যায়।

তবে তলানিতে জমে থাকা লবণ ও লিথিয়ামসহ বহু খনিজ পদার্থ পড়ে থাকে। বিশ্বের ৫০-৭০ শতাংশ লিথিয়াম মজুদ রয়েছে এখানে। এই বিস্তৃত অঞ্চলটি বর্ষাকালে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক আয়নায় পরিণত হয়। ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সেখানে বৃষ্টিপাত হয়।

তখন মাইলের পর মাইল এলাকা জুড়ে এক অপূর্ব দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। আকাশ যেন মাটিতে মিশে গেছে। শুষ্ক মৌসুমে স্থানটি থাকে সাদা। তখন লবণের মরুভূমিতে পরিণত হয় সালার দে ইউনি। এর উপর দিয়ে তখন যানবাহন চলাচল করতে পারে।

লেগুনা কলোরাডা হ্রদ (সংগৃহীত)

সালার দে ইউনিতে যেকোনো সময়ই চাইলে ঘুরতে যেতে পারেন। নিকটবর্তী শহর থেকে পর্যটকদের জন্য নির্ধারিত ভাড়ায় লবণভূমিতে যাওয়ার গাড়ি পাওয়া যায়। প্রতিদিন প্রায় ২০০ গাড়িভর্তি পর্যটক ঘুরতে আসেন আয়নাভূমিতে।

সালার দে ইউনির মাঝে কয়েকটি ছোট ছোট দ্বীপ রয়েছে। এসব দ্বীপে গেলে মন ভরে যায়! দ্বীপগুলোতে রয়েছে শত শত বছরের পুরনো ক্যাকটাস। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় সালার দে ইউনির সৌন্দর্য পৃথিবীর অন্যান্য সুদর্শনীয় স্থানের চেয়েও নৈসর্গিক।

এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্যও রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। পর্যটকদের জন্য এখানে রয়েছে বহু হোটেল। সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ব্যতিক্রম হলো প্যালাসিও দে স্যাল। যার অর্থ লবণের প্রাসাদ।

রহস্যময় আয়নাভূমি ‘সালার দি ইউনি’ লবণের প্রাসাদ (সংগৃহীত)

২০০৭ সালে গড়ে তোলা হোটেলটি সম্পূর্ণ লবণ দিয়ে তৈরি। হোটেলের মেঝে, দেয়াল ও ছাদ থেকে শুরু করে খাট, চেয়ার, টেবিলসহ সব আসবাবপত্রই তৈরি করা হয়েছে লবণ দিয়ে। লবণের এই দৃষ্টিনন্দন ভবন নির্মাণ করতে ১৪ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের প্রায় ১০ লাখ লবণের ইট ব্যবহার করা হয়েছে। সালার দে ইউনি লবণের উন্মুক্ত খনি। ধারণা করা হয়, ১১ কোটি টন লবণ রয়েছে এ খনিতে।

সালার দে ইউনিতে শুধু পর্যটকদেরই আগমন ঘটে না; প্রাণীজগতেরও প্রজননভূমি এ স্থানটি। বিভিন্ন প্রজাতির কানঠুটির প্রধান প্রজননক্ষেত্র স্থানটি। এ আয়নাভূমিতে প্রায় ৮০ প্রজাতির পাখির আগমন ঘটে। এছাড়াও এটি কাল্পেও, বলিভিয়ান ভিজকাচা, আন্দীয় হাঁস, আন্দীয় হিলস্টার, ভিকুয়াসসহ আরো বহু বিচিত্র প্রাণীর আবাসস্থল।

মরচে পড়া রেলগাড়ির সমাধি, চোখ ঝলকানো লবণের হ্রদ, লবণের তৈরি হোটেল ও ফুটন্ত কাদার পুল, প্রায় বিলুপ্ত প্রজাতির পাখি ইত্যাদি কারণে সালার দি ইউনি ভ্রমণ পিপাসুদের নিকট অন্যতম জনপ্রিয় এক গন্তব্যস্থল।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত