ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ০১ জানুয়ারি, ১৯৭০
শিরোনাম

দলকে সক্রিয় করতেই সিটি নির্বাচনে বিএনপি?

  কিরণ শেখ

প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০২০, ১৯:১৩

দলকে সক্রিয় করতেই সিটি নির্বাচনে বিএনপি?

আসন্ন ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলের প্রার্থীকে জেতানোর মূল লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে না বিএনপি। মূলত ঢাকায় সরকার বিরোধী আন্দোলনকে শক্তিশালী এবং দলকে সক্রিয় করতেই সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে দলটি। কারণ গত দশ বছরে (নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিসহ বিভিন্ন ইস্যু) সারাদেশে দলটি আন্দোলন গড়ে তুললেও রাজধানীতে রাজপথে নামতে ব্যর্থ হওয়ায় আন্দোলনের কোন সফলতা পায়নি বিএনপি।

এবার রাজধানীতে আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যকে সামনে রেখেই সিটি ভোটের নির্বাচনী প্রচারণায় প্রথম দিন থেকেই ঢাকার প্রতিটি অলি-গলিতে নেমে পড়েছেন দলটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ তৃণমূল নেতাকর্মীরা। আর এর মাধ্যমে দলটির প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে, ঢাকায় দল ও নেতাকর্মীদের সক্রিয় করা। তবে এর মধ্যে যদি ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলের একজন মেয়র প্রার্থী বের হয়ে আসে তাহলে সেটা হবে দলটির সরকার বিরোধী আন্দোলনের প্রথম বিজয়।

বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

এবিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক সিনিয়র নেতা এই প্রতিবেদক বলেন, রাজপথে সভা-সমাবেশ এবং মিছিল নূন্যতম স্পেস বিএনপি পাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে নির্বাচনই একমাত্র ইস্যু হতে পারে। তাই ভোটের রাজনীতিতে নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা রাখার পাশাপাশি দলকে সক্রিয় করা হবে। সামনে যত প্রতিকূল পরিবেশই আসুক না কেনো, বিএনপি সব নির্বাচনেই অংশ নেবে। আর এরই অংশ হিসেবে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে বিএনপি।

এদিকে ঢাকা সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা পর থেকেই বিএনপি শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ দুই প্রার্থী অভিযোগ করেছে আসছেন, সিটি নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু ভোট সম্ভব নয় এবং ভোট চুরি করতেই ইভিএম করছে ইসি।

তবে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বিএনপি ছুতো খুঁজছে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বিএনপি একটা ছুতো খুঁজছে, কীভাবে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যায়। আর নির্বাচনে হারলেই ইভিএম খারাপ এবং জিতলে ইভিএম ভালো। বিএনপির এধরনের অবস্থানও সঠিক নয়।

অপরদিকে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের ভাষ্য, নির্বাচনে জয়-পরাজয় দুটোতেই বিএনপির লাভ। কারণ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট হলে বিএনপির প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে এবং নির্বাচনে যাওয়ার ফলে দলের সাংগঠনিক শক্তিকে শক্তিশালী করার সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নেতা-কর্মীরা সাধারণ মানুষের কাছে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। এসব কারণে নেতাকর্মীদের মধ্যে চাঙ্গাভাব ফিরে আসছে। সুতরাং অনিয়ম চ্যালেঞ্জ করে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে জয় পেলে নেতা-কর্মীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসও ফিরে আসবে।

এছাড়া ক্ষমতাসীনরা যদি সিটি নির্বাচনে ফলাফল দখলদারি করার মানসিকতার উন্মোচন করে এবং ইভিএমের মাধ্যমে ভোট চুরি করতে চায় তাহলে সরকারের মুখোশ উন্মোচন হবে। তাই পরাজিত হলে এ ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে বিএনপি সরকার বিরোধী আন্দোলন বিশেষ করে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি আদায়ের আন্দোলন আরো গতিশীল করতে পারবে।

এবিষয়ে সিটি নির্বাচনী প্রচারণার প্রথম দিনই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মনোনীত বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন। আজকের এই নির্বাচনকে আমরা গণতন্ত্র ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য একটা আন্দোলন হিসেবে নিয়েছি। সুতরাং আজ থেকে আমাদের নতুনভাবে আন্দোলন শুরু হলো।

মির্জা ফখরুল বলেন, জনগণকে সম্পৃক্ত করতেই আমরা নির্বাচনে (ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন) অংশ নিয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি, জনগণ যদি সংগঠিত হয় তাহলে খালেদা জিয়া ও গণতন্ত্র এবং ঢাকাবাসী নাগরিক অসুবিধা থেকে মুক্তি পাবেন। আর তাবিথ আউয়াল যে কর্মসূচি নিয়েছেন তাতে জনগণ একত্রিত হবেন। তাবিথ আউয়ালের বিজয় সুনিশ্চিত। নির্বাচনকে বেগম খালেদা জিয়া ও গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিএনপি নিয়েছে বলেও জানান বিএনপি মহাসচিব।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আমরা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি কারণ বাংলাদেশে যে গণতন্ত্রের মৃত্যু ঘটেছে- এই নির্বাচনের (সিটি নির্বাচন) মাধ্যমে এই সরকার এটা আবারো প্রমাণ করবে। আরো প্রমাণ করবে যে, তাদের সরকারের অধীনে এবং কোন রাজনৈতিক সরকারের অধীনে কোন নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হতে পারে না। সেটাই প্রমাণিত হবে। তবে নির্বাচনে আমরা অংশগ্রহণ করবো এবং শেষ পর্যন্ত করছিও।

বিএনপি বলছে, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট সম্ভব নয়, এরপরও কেনো আপনারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন- জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, এই কথা শুধু আমাদের নয়। এই কথাগুলো সাধারণ জনগণেরও। আর এই কথাগুলো ইসির একজন কমিশনারের মুখ থেকেও আমরা শুনেছি। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, একজন সংবিধানের বিপক্ষে কাজ করবেন এবং একটা গ্রুপ পুরো জাতিকে তামাশার নির্বাচন দেখাবে। আর আমরা তাদেরকে এভাবে ছাড় দিয়ে চলে যাবো। আমরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ও নির্বাচনে বিশ্বাস করি। আর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা হলো আমাদের দায়িত্ব। আর ইসির দায়িত্ব হলো নির্বাচনকে সুষ্ঠু করা।

জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বিএনপির সমর্থিত মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আমরা নাগরিকদের ভোটাধিকার ও অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি। আর আমরা এজন্য শত মামলা ও হামলাকে উপেক্ষা করে এই নির্বাচনের মাঠে থাকবো।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত