ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ মিনিট আগে
শিরোনাম

দেউলিয়া বাজেট: ঐক্যফ্রন্ট

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৯ জুন ২০২০, ১৯:১৭  
আপডেট :
 ১৯ জুন ২০২০, ২০:৩৪

দেউলিয়া বাজেট: ঐক্যফ্রন্ট
ফাইল ছবি

সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে সরকারের পুরো দেউলিয়া বাজেট বলে আখ্যায়িত করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। শুক্রবার ফ্রন্টের দপ্তর প্রধান জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো ‘বাজেট প্রতিক্রিয়ায়’ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা এই কথা বলেন।

ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বলেন, ‘পুরো বাজেটে এক-তৃতীয়াংশই হলো ঘাটতি, যা জিডিপির ৬ শতাংশ’। কিন্তু এখন পত্রিকায় প্রকাশিত অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ রিপোর্ট দেখার পরে আমরা স্পষ্ট বুঝতে পেরেছি যে এ বাজেট সম্বন্ধে আমরা যে কথা ইতিমধ্যেই বলেছিলাম সেটাই সঠিক, অর্থ্যাৎ এটা সরকারের পুরো দেউলিয়া বাজেট। ইতিমধ্যেই অবস্থা এমন পর্যা্য়ে দাঁড়িয়েছে যে বাংলাদেশের প্রতিটি শিশু এখন জন্মের সময়ই মাথার ওপরে প্রায় ৬০ হাজার টাকার ঋণ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী বছর শেষে তাহলে আমাদের নবজাত শিশুর ওপর ঋণের বোঝা চাপবে প্রায় একলক্ষ টাকা। আগামী প্রজন্মকে আপাদমস্তক ঋণ করে এই দায়বদ্ধতায় বন্দি করে ফেলার অধির আজ করে সরকারকে দিয়েছে?

বাজেট প্রতিক্রিয়ায় কালো টাকা সাদা করার প্রসঙ্গে বলা হয়, আমরা বছরের পর বছর ধরে দেখছি নাম মাত্র কর দিয়ে অবৈধ সম্পদকে বৈধ করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। এর ফলে দেশের অর্থনীতি কী উত্তরণ হয়েছে তা এখন পর্যকন্ত কারো কাছে বোধগম্য নয়। এখন সময় এসেছে এধরণের অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে এই বিপদের সময়ে দেশের করোনা আক্রান্ত মানুষের স্বাস্থ্য সেবায় বিনিয়োগ করা।

এবছরে বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বড় একটা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, বিগত একদশকে আমরা দেখেছি হাজার হাজার কোটি টাকার মেডিক্যাল ইকুপমেন্টে কেনা হয়েছে। তার সুফল করোনার প্রয়োজনে দেশের মানুষ পেলনা। কাজেই মূল জিনিসটি হচ্ছে বরাদ্দের পরিমাণ নয়, বরাদ্দের সদ্ব্যবহার। যদি ২ হাজার টাকার পিপিই ৪ হাজার ৭০০ টাকায় কেনা হয় আর ডাক্তারদের ৫০০ টাকার চশমা ৫ হাজার টাকায় কেনা হয়, তাহলে স্বাস্থ্যখাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দিয়ে এবং এ দেশের মানুষের চিকিৎসা সমস্যার কোনো সমাধান হবে না।

‘প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থ বছরের বাজেটে কৃষি মন্ত্রণালয়কে ১৫ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কৃষিখাতে ভর্তুকি ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আমরা মনে করি এই বরাদ্দ এবং ভর্তুকি প্রয়োজনের তুলনায় সর্ম্পূণ অপ্রতুল। অর্থনীতি বাঁচাতে হলে কৃষক ও কৃষি উভয়কে বাঁচাতে হবে। কেবল সেবা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে সংকট মোকাবিলা করা যাবে না।’

ফ্রন্টের নেতারা আরো বলেন, আগামীতে দেশে অর্থনীতির চাকা ঘোরাতে হলে সরকারকে সর্বপ্রথম যে কাজটি করতে হবে সেটি হচ্ছে জ্বালানি তেলের মূল্যে আমূল পরিবর্তন আনা। গত পাঁচ বছর যাবৎ সরকার আন্তর্জাতিক জ্বালানি মূল্যের দ্বিগুন মূল্যে দেশের অভ্যন্তরে জ্বালানি তেল বাজারজাত করছে যা সর্ম্পূণ অনৈতিক। ফলশ্রুতিতে দেশের অর্থনীতির প্রতিটি সেক্টরএ রক্তক্ষরণ হচ্ছে এবং সরকাররে পকেটে তোলা হাজার হাজার কোটি টাকা কোথায় যাচ্ছে। তার কোনো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নেই।

‘আমরা মনে করছি এ দেশে গতানুগতিকভাবে বছরের পর বছর যেভাবে বাজেট তৈরী করা হয়, এই বাজেটটি কিন্তু সেভাবে করা ঠিক হয়নি। কারণ, আজকের পরিস্থিতি ভিন্ন। শুধু বাংলাদেশের নয়, বৈশ্বিক পরিস্থিতি ভিন্ন। আমরা একটি কঠিন সংকটের সামনে এসে পড়েছি। বিশ্বজুড়ে চলছে অর্থনৈতিক মন্দা। কাজেই আমরা হয়তো এটা বলতে দ্বিমত করব না অথবা হেসিটেট করব না যে, আগামী বছরের যে বাজেটটি আসছে সেটা এক ধরণের আপৎকালীন বাজেট এবং আমরা যদি সেটাকে আপৎকালীন বাজেট বলেই চিহ্নিত করতাম, আমাদের মনে হয় মানুষরে আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য সেটা ভালোই হত। কেননা এদেশের সতের কোটি মানুষ, তারা উপলব্ধি করত যে আমরা কি গভীর সংকটের ভিতর দিয়ে যাচ্ছি এবং আগামী বাজেটে কিভাবে সে সংকট থেকে আমাদের উত্তরণ হতে পারে। তাতে করে হয়তোবা কিছুটা হলেও সরকারের ওপর মানুষরে আস্থা ফিরে আসতো, কিন্তু সেটা হয়নি।’

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা বলেন, বর্তমান বাজেটে এই পরিস্থিতিতে সরকার যে প্রণোদনা দিয়েছে, প্রথমে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি, পরে ৯২ হাজার ৫০০ কোটি এবং সর্বশেষ আমরা শুনতে পাচ্ছি প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা। প্রশ্ন হচ্ছে, এই যে অতিরিক্ত প্রণোদনা, এই রিসোর্স কোথা থেকে আসবে! এখানে বলা প্রয়োজন যে, এই অর্থ বিদেশ থেকে আমরা ঋণ করে আনতে পারি, কিন্তু ঋণের একটি সীমা পরিসীমা আছে। এখন বর্তমান বছরেই প্রায় ১১ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার যেটি ঘোষতি প্রণোদনার কারণে সরকারের অতরিক্তিযোগান দেবার প্রয়োজন হয়েছে সেই যোগান দেবার মধ্যে সর্বোচ্চ আমরা দেড় বা দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি বৈদেশিক ঋণ আমরা খুঁজে পাব না, এটাই বাস্তবতা। কাজেই তারপরেও কিন্তু বাকী প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার যার পরিমাণ প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকা। সেটা কিন্তু আমাদের সংস্থান করতে হবে এই বর্তমান বাজেটের ভেতর দিয়ে। “আমরা আজকে যে উন্নয়ন বাজেটের নামে ২ লক্ষ ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছি সেটা যদি ১ লক্ষ হাজার কোটি টাকাতে নিয়ে আসি তাহলে আমাদের উন্নয়ন প্রক্রিয়ার কিন্তু কোনই কমতি হবে না। আমদের যেটা নিশ্চিত করতে হবে সেটা হচ্ছে উন্নয়ন বাজেটের অর্থ যেন অপচয় না হয়। আমরা অপচয়ই শব্দটি ব্যবহার করছি। অব্যবস্থাপনার কারণে উন্নয়নের বাজেটের অর্ধেক অথবা তারও বেশি আমরা প্রতি বছর যেটা হারাচ্ছি সেটা যদি আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি তাহলে আমরা আগামী বছরের ২ লক্ষ ৫ হাজার কোটি টাকা বাজেটকে নতুন আঙ্গিকে ১ লক্ষ হাজার কোটি টাকা দিয়েই অত্যন্ত সঠিকভাবে অর্জন করতে পারব।’

নেতারা বলেন, আমরা বিগত ১০ বছরে দেখেছি বাজেটে রাজস্ব ব্যয় চরমভাবে বেড়েছে। এই রাজস্ব ব্যয় যদি কমিয়ে না আনতে পারি তাহলে আগামী বছরের সম্পূর্ণ লাল হয়ে ওঠা বাজটেকে কোনোভাবইে সবুজে আনা যাবে না।

‘আজকে সেখানে জীবন জীবিকায় প্রশ্ন এসেছে যেখানে ফুড সিকিউরিটির কথাও এসেছে। আমরা মনে করি নির্দিষ্টভাবে একটি সিলেক্টিভ/ টার্গেটেড রেশনিং প্রক্রিয়াকে আগামী বাজেটে নতুন করে প্রবর্তন করা উচিত যার মাধ্যমে আমরা এদেশের দরিদ্র মানুষের সুরক্ষা করতে পারব।’

ঘোষিত এই বাজেটের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেন, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, আ স ম আবদুর রব, ড. মঈন খান, মাহমুদুর রহমান মান্না, ড. রেজা কিবরিয়া, অধ্যাপক ড. নূরুল আমিন বেপারী।

কেএস/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত