ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

মাঠে সরব হতে চায় বিএনপি

  কামরুল হাসান

প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০১৭, ২০:১১  
আপডেট :
 ১৭ নভেম্বর ২০১৭, ২০:৩৬

মাঠে সরব হতে চায় বিএনপি

কয়েক বছরের নিরবতা ভেঙে এখন মাঠের রাজনীতিতে সরব হয়ে উঠতে চাচ্ছে বিএনপি। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা রাখতে ধারাবাহিক নানা কর্মসূচি নিয়ে পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিজয়ের জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিভিন্ন বিভাগীয় শহর সফরের পরিকল্পনা রয়েছে।

সড়ক পথে এসব সফরের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের সক্রিয় রাখতে চিন্তা করা হচ্ছে। এর বাইরে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসকে সামনে রেখে রাজধানীতে বিজয় র‌্যালির নামে আরেক দফা শোডাউন করার সিদ্ধান্তও নিয়েছে দলের হাইকমান্ড। এভাবে বিভিন্ন ইস্যুতে রাজনীতির মাঠে নিজেদের উপস্থিতি তৃণমূল পর্যন্ত সম্পৃক্ত রাখতে চাইছে দলটি। আবার ভিন্নদিকে আগামী নির্বাচন ও আন্দোলন- উভয়কে মাথায় রেখে সংগঠনকে শক্তিশালী করার বিষয়েও নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। তার তত্ত্বাবধায়নে দ্রুত সময়ে মধ্যে সারাদেশের মেয়াদোত্তীর্ন জেলা কমিটি, ঢাকা মহানগর, যুবদল, স্বেচ্ছাসেসবক দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি, ছাত্রদলের নতুন কমিটিসহ অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটিও সম্পন্ন করতে চাইছেন।

বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, ১২ নভেম্বর ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভা, তার আগে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ত্রাণ দিতে খালেদা জিয়ার কক্সবাজার সফর রাজনৈতিকভাবে ফলপ্রসূ হয়েছে। মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বড় দুটি কর্মসূচি নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করেছে। বিশেষ করে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের নিয়ে কর্মসূচিকে ঘিরে অনেক দিন পর নিরুত্তাপ রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হতে পেরেছে বিএনপি। ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উখিয়া পর্যন্ত খালেদা জিয়ার দীর্ঘ যাত্রাপথে নেতাকর্মীদের জাগিয়ে তোলা গেছে। বিএনপির নেতারা মনে করছেন, এই দুটি কর্মসূচিতে সরকারের ভেতরেও নাড়া পড়েছে। তবে এর আগে খালেদা জিয়া লন্ডনে তিন মাসের বেশি সময় চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার পর বিমানবন্দরে সংবর্ধনার নামে নেতাকর্মী আর সমর্থকদের যে ঢল নেমেছিলো সেটাকেই বিএনপির রাজপথে নামার টার্নিং পয়েন্ট ধরছেন নেতারা।

দলের নেতাকর্মীদের এমন সরব উপস্থিতি আর সক্রিয়তায় দলের হাইকমান্ডও আশাবাদী হয়ে উঠছেন। তারা নেতাকর্মীদের এই মনোবলকে ধরে রাখার জন্য নিয়মিত কর্মসূচির পরিকল্পনা করছেন। এর মধ্যে প্রতি সপ্তাহে খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরার দিন তার আসা যাওয়ার রাস্তায় নিয়মিত শোডাউনকেও গুরুত্ব দিচ্ছেন। এর পাশাপাশি আগামী জাতীয় নির্বাচনকে টার্গেট করে সরকারের উপর চাপ বৃদ্ধি করতে চাইছে দলের নীতি নির্ধারক। তারা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পক্ষে জনমত গঠনের পাশপাশি আন্তর্জাতিকভাবেও সরকারর উপর চাপ প্রয়োগ করার পরিকল্পনা নিয়েছে। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারনী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ বৈঠকেও এমনটি আলোচনা করা হয়। ওই বৈঠকে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবি থেকে সরে আসার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। এর পরিবর্তে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ফের সোচ্চার হতে যাচ্ছে দলটি।

এ ব্যাপারে জনমত তৈরি করতে নেয়া হবে নানা কর্মসূচি। বর্তমান সরকারের অধীন নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকায় এমন পরিকল্পনা করছে এই দল। আর এ কারণেই আপাতত নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানা গেছে।

দলের নেতারা জানান, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি বাস্তবায়নে দলের সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছে দলটি। এ ইস্যুতে দেশি-বিদেশি জনমত সৃষ্টির ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত সরকার দাবি না মানলে রাজপথে আন্দোলনের বিষয়েও চিন্তাভাবনা রয়েছে তাদের।

তারা বলেন, আগামী নির্বাচন, দল পুনর্গঠন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে রাজপথের আন্দোলনকে প্রাধান্য দিয়েই করা হচ্ছে এসব পরিকল্পনা। এসব বিষয়ে ইতিমধ্যে দলের সিনিয়র কয়েকজন নেতার সঙ্গে পরামর্শ করেছেন খালেদা জিয়া। সেখানে দল পুনর্গঠনের ওপর জোর দেয়া হয়। এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দ্রুতই কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এছাড়া নিরপেক্ষ সরকারের দাবির প্রতি জনমত তৈরি ও নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে বিভাগীয় ও জেলা সফরে বের হওয়ার পরিকল্পনা করছেন খালেদা জিয়া।

দলের একজন নেতা জানান, আগামী নির্বাচনের আগে বিএনপিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে। এর মধ্যে প্রধান কাজটি হচ্ছে- দলের মধ্যে ঐক্য ফিরিয়ে আনা। এখনো যে সকল নেতা রাগে-ক্ষোভে-দুঃখে কিংবা অভিমানে দলের বাইরে রয়েছেন তাদেরকে এক প্লাটফর্মে নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে। দলের সংস্কাপন্থী হিসেবে পরিচিত নেতাদের মধ্যে ১১জন সাবেক নেতা দলে ফেরার জন্য অপেক্ষামান তালিকায় রয়েছেন।

তাদেরকে নিয়ে আসার কাজটিও করা হবে। দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে অনেকের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। তাদেরকে পুনঃমূল্যায়ন করা হবে যোগ্যতা অনুসারে। ঢেলে সাজানো হবে গুলশান আর পল্টন কার্যালয়। একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে টার্গেট করে এসকল কার্যালয়কে পরিপূর্ণ করে সাজানোর পরিকল্পনাও রয়েছে বলে জানান তিনি।

এসব বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আমরা প্রস্ততি নিচ্ছি। তবে সে নির্বাচন অবশ্যই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে। সহায়ক বা তত্ত্বাবধায়ক যে নামেই ডাকা হোক ওই সময় এমন একটি সরকার থাকবে যাদের প্রতি সবার আস্থা ও বিশ্বাস থাকবে। যারা নিরপেক্ষভাবে একটি সুন্দর নির্বাচন আয়োজন করবে। ওই সময় যদি একটি দলীয় সরকার থাকে তাহলে মানুষের আস্থা থাকবে না। তাই আমাদের দাবি একটি নিরপেক্ষ সরকার। ওই নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আমরা পরিকল্পনা সাজাচ্ছি।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত