ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

হাওলাদারকে বর্জন রওশনপন্থিদের

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮, ২২:১৭  
আপডেট :
 ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮, ২২:১৯

হাওলাদারকে বর্জন রওশনপন্থিদের

একাদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেছে এইচ এম এরশাদের জাতীয় পার্টি। দলটির নির্বাচনী ইশতেহারে নতুন কিছু নেই বললেই চলে। নেই কোন নতুন চমক। জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় যেতে পারলে ১৮টি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে। এই ১৮দফা কর্মসূচি দলটির পুরাণ কর্মসূচি। গত ৫ বছর ধরে এরশাদ সব সময় এই ১৮ দফা কর্মসূচির কথা বলে আসছেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনী ইশতেহারে নতুন কোন চমক না থাকায় নেতাকর্মীরাও হতাশ হয়েছেন।

দেশের সমস্যা ও সম্ভাবনা মাথায় রেখে ভবিষ্যত তরুণ প্রজন্ম ও নারীদের সামনে রেখে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-ঐক্যফ্রন্ট যেভাবে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে তার বিপরীতে এরশাদের জাপার নির্বাচনী ইশতেহার একেবারেই সাদামাটা। অথচ দলটি গত পাঁচবছর সংসদের বিরোধী দল ছিল।

নির্বাচনী ইশতেহারে জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় যেতে পারলে দেশে প্রাদেশিক সরকার ব্যবস্থা ও নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কারের অঙ্গিকার করেছে, কিন্তু এরশাদের মতো আনপ্রেডিক্টেবল রাজনীতিক আসলেই কী তা বাস্তবায়ন করতে পারবেন এই নিয়ে সংশয় রয়েছে জনমনে।

আসন্ন নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় যেতে পারলে দলটির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দেশে প্রাদেশিক সরকার ব্যবস্থা, নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কার, ধর্মীয় মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, পূর্ণাঙ্গ উপজেলা ব্যবস্থা প্রবর্তনসহ ১৮টি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবেন।

শুক্রবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে এইচ এম এরশাদের অনুপস্থিতিতে সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও পার্টির প্রাক্তন মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার এসব অঙ্গিকার ব্যক্ত করে দলের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন।

এরশাদের অনুপস্থিতিতে দলের মহাসচিব থেকে ছিটকে পড়া রুহুল আমিন হাওলাদারই নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। দলের জ্যেষ্ঠ কো চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ, কো চেয়ারম্যান জি এম কাদের এমনকি দলের মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা দেশে রয়েছেন। দলের ইশতেহার ঘোষণার মত গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি তাদেরই ঘোষণা করার কথা, কিন্তু সে জায়গায় মনোনয়ন বাণিজ্যে লিপ্ত থাকার মত বিতর্কিত ও মহাসচিব থেকে সরিয়ে দেওয়া হাওলাদারকে দিয়ে এরশাদের ইশতেহার ঘোষণায় দলের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। ক্ষুব্ধ রওশন, জিএম কাদেরসহ রওশনপন্থী নেতারাও। একারণে রওশনপন্থী নেতাদের হাওলাদারের অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি। তারা হাওলাদারের ইশতেহার কর্মসূচি বর্জন করেছেন বলেও দলটির বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে। এ নিয়ে দিনভর কানাঘুষা চলছে জাতীয় পার্টিতে।

জানা গেছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আবারো বিভক্ত হয়ে পড়েছে এইচ এম এরশাদের জাতীয় পার্টি। রুহুল আমিন হাওলাদার, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন, এসএম ফয়সল চিশতী, অ্যাডভোকেট শেখ সিরাজুল ইসলাম, সুনীল শুভরায়, মেজর অব. খালেদ আখতার, রেজাউল ইসলাম ভুইয়া, আরিফ খান, মোস্তাকুর রহমান মোস্তাক, সুমন আশরাফ, রাজ্জাক খানসহ উল্লেখযোগ্য নেতাকর্মী এরশাদের পক্ষে।

অন্যদিকে এরশাদের ছোটভাই জিএম কাদের, জ্যেষ্ঠ নেতা কাজী ফিরোজ রশীদ, ফখরুল ইমাম, মশিউর রহমান রাঙ্গা, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, মুজিবুল হক চুন্নু, লিয়াকত হোসেন খোকা, সেলিম ওসমান, আবুল কাসেম, গোলাম কিবরিয়া টিপু, নুরুল ইসলাম ওমর, শওকত চৌধুরীসহ উল্লেখযোগ অংশটি রওশনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

সূত্র জানায়, বিরোধীনেতা রওশনের চাপে দলের মহাসচিবের পদ থেকে হাওলাদারকে সরিয়ে দিতে বাধ্য হলেও এ বিষয়টি কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না দলটির চেয়ারম্যান এরশাদ। কারণ দলের মনোনয়ন বাণিজ্যের নেতৃত্বে দলের মহাসচিব হিসেবে হাওলাদারকে দায়ী করা হলেও এতে খোদ দলের চেয়ারম্যান এরশাদসহ প্রভাবশালী সিন্ডিকেট জড়িত ছিলেন বলে নেতাকর্মীদের অভিযোগ আছে। এরশাদ নিজে বাঁচতে ওই সিন্ডিকেটের কয়েকজন সদস্যের কুবুদ্ধিতে সব দোষ হাওলাদারের উপর চাপিয়ে তাকে দল থেকে অব্যহতি দিতে বাধ্য হন। হাওলাদারের স্থলে মহাসচিব করা হয় রওশনপন্থী প্রেসিডিয়াম সদস্য মশিউর রহমান রাঙ্গাকে। এতে বিরোধীনেতা ও পার্টির জ্যেষ্ঠ কো চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ, কো চেয়ারম্যান জি এম কাদেরসহ দলের একটি বড় অংশ খুশি হলেও মনে মনে নাখোশ ছিলেন এরশাদসহ সিন্ডিকেট সদস্যরা। তাই বাধ্য হয়ে অব্যহতির শাস্তি দিয়ে পরে খুশি করতে হাওলাদারকে সাংগঠনিক অবস্থান থেকে নিজের পরে দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে নিয়োগ দেন। গঠনতন্ত্রে এমন কোন পদের নজির নেই বললেই চলে।

চিকিৎসার উদ্দেশ্যে সিঙ্গাপুর যাওয়ার প্রাক্কালে জেদ করে এরশাদ তার অনুপস্থিতিতে (এরশাদের পরে) দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে হাওলাদারকে সাংগঠনিক দায়িত্ব দিয়ে যান। এতে হাওলাদারই এখন পদমর্যাদা ও ক্ষমতায় কো চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ ও কো চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের উপরে এবং এরশাদের পরে অবস্থান করছেন। সেই ক্ষমতায় এরশাদের অনুপস্থিতিতে দলের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন হাওলাদার।

বনানীতে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করে রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ৯ বছরের সরকার পরিচালনার সাফল্যের অভিজ্ঞতা নিয়ে জনগণের ভোটে আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই। আমরা জনগণের প্রত্যাশা পুরণ করতে চাই। আগামী দিনের নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আমরা ১৮টি অঙ্গিকার করছি। আমরা ক্ষমতায় গেলে এসব অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করবো।

জাপার ১৮টি অঙ্গিকার হলো- ১. প্রাদেশিক ব্যবস্থা প্রবর্তন। দেশের এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন করে প্রাদেশিক ব্যবস্থা প্রবর্তন। দেশে বিদ্যমান ৮টি বিভাগকে ৮টি প্রদেশে উন্নীত করা হবে। ৮টি প্রদেশের নাম হবে: (১) উত্তরবঙ্গ প্রদেশ, (২) বরেণ্য প্রদেশ, (৩) জাহাঙ্গীর নগর প্রদেশ, (৪) জালালাবাদ প্রদেশ, (৫) জাহানাবাদ প্রদেশ (৬) চন্দ্রদীপ প্রদেশ, (৭) ময়নামতি প্রদেশ এবং (৮) চট্টলা প্রদেশ।

প্রাদেশিক সরকারে দেশে দুই স্তরবিশিষ্ট সরকার কাঠামো থাকবে, একটি হলো কেন্দ্রীয় সরকার। এটকে বলা হবে ফেডারেল সরকার। কেন্দ্রীয় সরকারে থাকবে ৩০০ আসন বিশিষ্ট জাতীয় সংসদ। অপরটি হলো প্রাদেশিক সরকার। প্রাদেশিক সরকারের থাকবে প্রাদেশিক সংসদ। প্রতি উপজেলা কিংবা থানাকে প্রাদেশিক সরকারের এক একটি আসন হিসেবে বিবেচনা করা হবে। ঢাকা শহর থেকে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ সদর দপ্তর প্রাদেশিক রাজধানীতে স্থানান্তর করার পরিকল্পনা। পাঁচ বছর সময়ের মধ্যে প্রাদেশিক ব্যবস্থা পূর্ণাঙ্গরূপে বাস্তবায়ন করা সম্ভব বলে মনে করে জাপা।

২. নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কার। নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার করে আনুপাতিক ভোটের ভিত্তিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিধান করা হবে। নির্বাচন কমিশনের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা দেয়া হবে। সন্ত্রাস, অস্ত্র ও কালো টাকার প্রভাবমুক্ত নির্বাচন নিশ্চিত করতে নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার করে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নে হয়তো সর্বোচ্চ পাঁচ বছর সময় লাগবে।

৩. পূর্ণাঙ্গ উপজেলা ব্যবস্থা প্রবর্তন। উপজেলা আদালত ও পারিবারিক আদালতসহ পূর্ণাঙ্গ উপজেলা ব্যবস্থা চালু করা হবে। স্থানীয় সরকার কাঠামো শক্তিশালী করে এবং নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যানদের কাছে উপজেলার ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে।

৪. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা দেয়া হবে। জাতীয় পার্টি সুযোগ পেলে এক বছর সময়ের মধ্যে এটা নিশ্চিত করা হবে। পাঁচ বছরের মধ্যে মামলার জট শূন্যের কোটায় নিয়ে আসা হবে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মামলা দায়ের করার প্রবণতা বন্ধ করা হবে। প্রাদেশিক ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করে প্রত্যেক প্রাদেশিক রাজধানীতে হাইকোর্টের বেঞ্চ বসানো হবে।

৫. ধর্মীয় মূল্যবোধ। ধর্মীয় মূল্যবোধকে সবার উর্দ্ধে স্থান দেয়া হবে। মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দিরসহ সকল ধর্মীয় উপসনালয়ের বিদ্যুৎ ও পানির বিল মওকুফ করে দেয়া হবে। জাতীয় পার্র্টি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পারলে প্রথমেই এব্যাপারে ঘোষণা দেয়া হবে এবং এক বছরের মধ্যে এই পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হবে।

৬. কৃষকের কল্যাণ সাধন। কৃষকদের ভর্তুকি মূল্যে সার, ডিজেল, কীটনাশক সরবরাহ করা হবে। কৃষি উপকরণের কর-শুল্ক মওকুফ করা হবে। কৃষকদের বিরুদ্ধে কোনো সার্টিফিকেট মামলা হবে না। সহজ শর্তে কৃষি ঋণ সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে।

৭. সন্ত্রাস দমনে কঠোর ব্যবস্থা। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও দূর্নীতি দমনে আরো কঠোর আইন প্রণয়ন করা হবে। সন্ত্রাসসহ অপরাপর অপরাধ দমন করা কঠিন কোনো কাজ নয় এ ব্যাপারে সরকারের সদিচ্ছাই বড় কথা। জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে তিন মাসের মধ্যে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি সমূলে নির্মূল করা হবে। হত্যা-খুন-গুম-ধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধ করা হবে।

৮. জ্বালানী ও বিদ্যুৎ। গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি স্থিতিশীল রাখা হবে। সারা দেশে পর্যায়ক্রমে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে এবং প্রত্যেক উপজেলায় কৃষিভিত্তিক শিল্পনগরী গড়ে তোলা হবে। উত্তরবঙ্গে শিল্পায়নের ব্যবস্থাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে মঙ্গা প্রতিরোধের উদ্যোগ নেয়া হবে। উত্তরবঙ্গের ভয়াবহ সমস্যা হচ্ছে মঙ্গার আগ্রাসন। এই অঞ্চলের মানুষ বছরের তিন মাস কাজের সুযোগ পায়, বাকি নয় মাস বেকার থাকে। ফলে সেখানে দেখা দেয় দুর্ভিক্ষাবস্থা। স্থানীয়ভাবে সেটাকেই বলে মঙ্গা। এই মঙ্গা দূল করতে মানুষের কাজের ব্যবস্থা করা হবে। দেশের অনগ্রসর অঞ্চলে শিল্প স্থাপনে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।

৯. ফসলি জমি রক্ষা কর্মসূচি। একমাত্র জাতীয় অর্থনৈতিক স্বার্থের বিবেচনায় শিল্প প্রতিষ্ঠা ব্যতীত কৃষি জমি বা ফসলি জমি নষ্ট করে কোনো স্থাপনা কিংবা আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা আইন করে বন্ধ করা হবে।

১০. খাদ্য নিরাপত্তা। খাদ্যে ভেজাল কিংবা খাদ্যে বিষাক্ত পদার্থ মেশানোর বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইন সংশোধন করে মৃত্যুদন্ডের বিধান করা হবে।

১১. শিক্ষা পদ্ধতির সংশোধন। শিক্ষা পদ্ধতি সংশোধনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের টিউশন নির্ভরতা কমানো হবে এবং কোচিং ব্যবসা বন্ধ করা হবে। সুলভ মূল্যে শিক্ষা সামগ্রী সরবরাহ করা হবে। নিবন্ধনকৃত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং এবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষকদের বেতন সরকারি শিক্ষকদের সমতুল্য করা হবে। এই কর্মসূচিও এক বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে। দেশে একটি স্বতন্ত্র ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা। কওমি মাদ্রাসার সনদকে স্বীকৃতি দেয়া হবে। স্নাতক শ্রেণী পর্যন্ত নারী শিক্ষা অবৈতনিক করা হবে। যতই নারী অধিকারের কথা বলা হোক না কেনো- দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক এই নারী সমাজ এখনো অধিকার বঞ্চিত রয়েছে। তাদের সচেতন করে তুলতে এবং নারীদের জাতীয় উন্নয়ন কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করতে নারী শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। সেই লক্ষ্যে এক বছরের মধ্যে স্নাতক শ্রেণী পর্যন্ত নারী শিক্ষা অবৈতনিক করার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে। দেশে সুষমভাবে শিক্ষা বিস্তারের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে রংপুরে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ও একটি প্রকৌশল মহাবিদ্যালয় এবং রংপুরে শিক্ষাবোর্ড স্থাপন করা হবে।

১২. স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণ। ইউনিয়নভিত্তিক সেবা খাত উন্নত করা হবে। সবার জন্য স্বাস্থ্য কর্মসূচী গ্রহণ করা হবে। প্রতি ইউনিয়নের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডাক্তারের দায়িত্ব পালন নিশ্চিত করা হবে।

১৩. শান্তি ও সহাবস্থানের রাজনীতি প্রবর্তন। হরতাল-অবরোধের মতো ধ্বংসাত্মক এবং জনসাধারণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী কর্মকান্ড নিষিদ্ধ করা হবে। শান্তি ও সহাবস্থানের রাজনীতি প্রবর্তনের মাধ্যমে সত্যিকার গণতন্ত্রের বিকাশ ঘটানো হবে।

১৪. সড়ক নিরাপত্তা। সড়ক দূর্ঘটনা রোধকল্পে সকল রাস্তাঘাট সংস্কার করা হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোকে কর্মপক্ষে ৫০ ভাগ প্রশস্ত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। সেই সাথে সড়ক বিভাজন (ডিভাইডার) নির্মাণ করা হবে।

১৫. গুচ্ছগ্রাম পথকলি ট্রাস্ট পুনঃপ্রতিষ্ঠা। গুচ্ছগ্রাম, পথকলি ট্রাস্ট পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে। জাতীয় পার্টি শাসনামলে যে সব গুচ্ছগ্রাম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো সেগুলো আদর্শ গ্রামে গুচ্ছগ্রামে উন্নীত করা হবে। গত ২৫ বছরে অভাবের তাড়নায় কিংবা নদী ভাঙনে লাখো লাখো মানুষ ছিন্নমূল হয়ে পড়েছে। ফলে ঢাকা মহরে বাড়ছে ভাসমান মানুষের ভিড়। তাদের গুচ্ছগ্রামে একটা ঠিকানা দেয়া হবে।

১৬. পল্লী রেশনিং চালু। পল্লী অঞ্চলের মানুষের ন্যুনতম অন্নের সংস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পল্লী অঞ্চলে পল্লী রেশনিং চালু করা হবে। এক বছরের মধ্যে পল্লী রেশনিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গ্রামের মানুষের কাছে রেশনিং ব্যবস্থায় চাল-ডাল-তেল-চিনি পৌছে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। যাতে গ্রামের মানুষ নিয়মিতভাবে স্বল্পমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পেতে পারে তার ব্যবস্থা করা হবে।

১৭. শিল্প ও অর্থনীতির অগ্রগতি সাধন। দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। দেশের অঞ্চলে অঞ্চলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস করার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। শিল্প ঋণ সহজলভ্য এবং নতুন শিল্প স্থাপন করা হবে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধির জন্য সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। বিদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশীদের দেশে অর্থ প্রেরণকে উৎসাহিত করা হবে। বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা হবে এবং পুঁজি বাজারে আস্থা ফিরিয়ে এনে ক্ষুদ্র বিনিয়োগ সম্প্রসারিত করার অনুকূলে পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে।

১৮. ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা। সাধারণ নির্বাচন বাদে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য ৩০টি আসন সংরক্ষিত করা হবে। সেক্ষেত্রে সংসদের মোট আসন সংখ্যা হবে ৩৮০। এর জন্য সংবিধানে সংশোধনী আনা হবে। সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠির সংখ্যার হার অনুসারে তাদের চাকরী ও উচ্চশিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করা হবে। ধর্মীয় সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা এবং সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করা হবে।

ইশতেহার ঘোষণাকালে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ১৮ দফার অঙ্গীকার এদেশের জন্য সৌভাগ্যের প্রতীক। জাতীয় পার্টির উন্নয়ন কর্মকান্ডের মূল ভিত্তি ছিল ১৮ দফা কর্মসূচী। যার ফলে দেশে উন্নয়ন সমৃদ্ধি ও সংস্কারের এক নব দিগন্ত সৃষ্টি হয়েছিল। জাতীয় পার্টির শাসনামলের সেই উন্নয়নের চিহ্ন দেশ এখনো ধারণ করে আছে। যারা ১৯৮২ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সময়ের দেশ পরিচালনা প্রত্যক্ষ করেছেন তারা এখনো স্মরণ করেন সেই স্বর্ণোজ্জল দিনের কথা। অর্থনৈতিক মুক্তি, সামাজিক নিরাপত্তা, সুখি-সমৃদ্ধ দেশ গড়া, ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার আশায় এদেশের জনগণ বারবার আন্দোলন করেছে, রক্ত দিয়েছে, জীবন দিয়েছে, একের পর এক সরকার পরিবর্তন করেছে, কিন্তু তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সব বিবেচনা এবং সব পরীক্ষা-নিরীক্ষায় এটা প্রমাণিত ও পরিক্ষিত সত্য যে, জাতীয় পার্টিই হচ্ছে সেই রাজনৈতিক দল।

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে হাওলাদার বলেন, দেশে এখন এক ভয়াবহ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের সময় সমাগত। এখন আর আমাদের ভুল করার কোনো সুযোগ নাই। তাহলে আমাদের বিপর্যয়ের অতলে হারিয়ে যেতে হবে।

তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির ৯ বছরের শাসনামল দেশের কল্যাণ ও জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছ। আজ সে কারণে জনসাধারণের রাজনৈতিক ও সামগ্রিক জীবনে সেই সময় এক স্বর্ণোজ্জল অধ্যায় হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। জাতীয় পার্টি এখনো একটি সুখি-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার লক্ষে অঙ্গীকারাবদ্ধ। যে কোনো কিছুর বিনিময়ে জাতীয় পার্টি জনগণের আশা-আকাঙ্খা ও চাহিদা পূরণে সফল হবে।

এসময় দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য দেলোয়ার হোসেন খান, এস.এম. ফয়সল চিশতী, ভাইস চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান খান, আলমগীর সিকদার লোটন, যুগ্ম মহাসচিব- মোস্তাকুর রহমান মোস্তাক, শেখ আলমগীর হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক- শফিউল্লাহ শফি, ফখরুল আহসান শাহজাদা, মোস্তাফিজুর রহমান নাঈম, হেলাল উদ্দিন, একেএম আশরাফুজ্জামান খান, সুলতান মাহমুদ, এম.এ. রাজ্জাক খান, ডা. সেলিমা খান, সৈয়দ পারনভীন তারেক, গোলাম মোস্তফা, কাজী আবুল খায়ের, সুমন আশরাফ, শাহিদা রহমান রিংকু, চৌধুরী গোলাম আহমেদ মিলু, মিজানুর রহমান মিরু, ফজলে এলাহী সোহাগ, প্রিন্সিপাল গোলাম মোস্তফা, সেকেন্দার আলী মুকুল, নাজমুল খান, দ্বীন ইসলাম শেখ, সরদার নজরুল, খায়রুল আলম মামুন, জাকির মাহমুদ, এইচ.এম.মাসুদ আলী মামুন, এম. মহিবুর রহমান, খন্দকার নুরুল আনোয়ার বেলাল, ফারুক শেঠ, শেখ মো. শান্ত, হানিফ হোসেন বাবু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত