আসছে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার কর্মসূচি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ জুন ২০১৯, ২১:৫৮
কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার কর্মসূচি দিতে যাচ্ছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যেই বিভাগীয় পর্যায়ে কর্মসূচি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। শনিবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানস্থ রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা জানান। এরআগে, প্রায় পৌনে ২ ঘণ্টাব্যাপি স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে লন্ডন থেকে স্কাইপের মাধ্যমে যুক্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বৈঠক শেষে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে দলের স্থায়ী কমিটির সভায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন আরো বেগবান করার জন্য কর্মসূচি নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ লক্ষ্যে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে দেশের সকল বিভাগীয় শহরে দেশনেত্রীর মুক্তির দাবিতে কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। এসব কর্মসূচিতে জাতীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। আর ঢাকা মহানগরীতে এই চার সাপ্তাহের মধ্যে দল, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে।
কর্মসূচির ধরণ কি হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা বিভাগগুলোতে গণতান্ত্রিক যেসব কর্মসূচি আছে যেমন বিক্ষোভ সমাবেশ হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী সংসদে রূপপুরে পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের একজন প্রকৌশলী মাসুদুল আলম সম্পর্কে একটা বক্তব্য রেখেছেন। সেই বক্তব্যে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, যে ওই প্রকৌশলী বুয়েট ছাত্রদলের ভিপি ছিলেন। এটা সর্বৈব মিথ্যা, একেবারে একটা অসত্য কথা তিনি সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছেন। একজন প্রধানমন্ত্রী যখন এরকম অসত্য বক্তব্য দেন সেটা অপ্রত্যাশিত ও গ্রহণযোগ্য নয়।
বিএনপি মহাসচিব কলেন, প্রকৃতপক্ষে প্রকৌশলী মাসুদুল হক বুয়েটের ছাত্র নন। তিনি খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আমরা তার সব ডাটা সংগ্রহ করেছি। সে কুয়েটের একেএম ফজলুল হক হলের ২৬নং কক্ষে থাকতেন। তিনি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র, তার রোল নম্বর ৯২১৩৫। সে কোনো দিনই ছাত্দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলো না। সম্ভবত সে বাম কোনো ছাত্র সংগঠনের সাথে ছিলো। আর এখন সে বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের সাথে জড়িত। এরকম একটি অসত্য তথ্য সংসদকে দেয়া-এটা সংসদের বিরুদ্ধে। আমরা মনে করি এরকম বক্তব্য প্রধানমন্ত্রীর জন্য কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এটা অনপ্রিভেত।
তিনি জানান, সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সোহেল তাজের ভাগ্নেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী র্যাব তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনার নিন্দাও জানিয়েছে স্থায়ী কমিটি। সোহেল তাজের ভাগ্নে উদ্ধার হলেও বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী, পারভেজ আলম হীরু, চৌধুরী আলমসহ দীর্ঘ বছর ধরে গুম হওয়ার নেতা-কর্মীদের কোনো তথ্য সরকার না দিতে পারায় বিস্ময় ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ছাত্রদলের ব্যাপারে দীর্ঘ আলোচনা করে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অল স্টেক হোল্ডারদের সাথে কথা বলেছেন। অর্থাৎ ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে যারা অতীতে জড়িত ছিলেন, নেতা ছিলেন, বর্তমানে যারা নেতা আছেন এবং যারা এখন বিক্ষোভ করছেন, আন্দোলন করছেন সকলের সঙ্গে উনি কথা বলেছেন। কথা বলার পরেই দল থেকে একটা সিদ্ধান্ত তাদেরকে দেয়া হয়েছে। এখন যে আন্দোলন হচ্ছে, আমরা মনে করি যে, এটা খুব একটা যুক্তিসঙ্গত আন্দোলন নয়।
ফখরুল বলেন, তাদের (বিক্ষুব্ধরা) এ কথাও বলা হয়েছে যে, তারা দলের প্রতি অত্যন্ত নিবেদিত প্রাণ, নেতা-কর্মী, তারা অন্যান্য অঙ্গসংগঠনে যুক্ত হতে পারেন। আমার মনে হয় তাদের উচিত হবে, এই বিষয়টা বিবেচনায় নিয়ে এই আন্দোলনটা বন্ধ করে দিয়ে প্রয়োজনে তারা কথা বলতে পারে। কিন্তু আজকে যেটা তারা করেছেন এটা ভীষণভাবে নিন্দনীয়। এটাকে কোনো মতেই গ্রহণ করা যায় না। আমরা আহ্বান করি, দ্য শুড উইথ ড্র। তাদের আন্দোলন প্রত্যাহোর করে নেয়া উচিত এবং শান্তিপূর্ণ অবস্থানে ফিরে আসা উচিত।
বৈঠকে মির্জা ফখরুল ছাড়াও ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।
কেএস/ডিপি/
